|
|
|
|
মাকড়দহ-১ গ্রাম পঞ্চায়েত |
গ্রামসভার ডায়েরি |
অভিষেক চট্টোপাধ্যায় • মাকড়দহ |
ভাল ছবি
বঙ্গ রাজনীতির হিংসা-চিত্র দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া চোখে ধরা পড়ল অন্য ছবি। কানে ভেসে এল মাকড়দহ-১ পঞ্চায়েতের বিরোধী দলের এক সদস্যের বক্তব্য, “অনেক খোলামেলা পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আমাদের পঞ্চায়েতে। কিছু সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েও সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত চালানোর জন্য প্রধান ও উপপ্রধানকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না।” প্রতিবেদন পেশ করার সময় গলা বুজে এল পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সুভাষ পাড়েরও। আবেগে বিরোধী দলের এক সদস্যকে বুকেও জড়িয়ে ধরলেন। এ দৃশ্য মাকড়দহ-১ পঞ্চায়েতের ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষের গ্রামসভার। তবে সেই দৃশ্যের সাক্ষী রইল শুধুই ফাঁকা চেয়ার!
খারাপ ছবি
রাজনৈতিক সৌজন্য যদি মাকড়দহ-১ পঞ্চায়েতের ভাল দিক হয়, তা হলে অবশ্যই খারাপ দিক গ্রামসভায় গ্রামবাসীদের অনুপস্থিতি। যাঁদের জন্য এই গ্রামসভা তাঁরা এলেন বটে, তবে মূল অধিবেশন শেষের পরে স্থানীয় নৃত্য সংস্থার নাচের অনুষ্ঠান দেখতে! দর্শকের জন্য চেয়ারে ছিল লাল ও সবুজ রঙের সহাবস্থান। মঞ্চেও ছিল সৌজন্যের ছবি। কিন্তু মূল অধিবেশনে মেরে কেটে একশো লোকও ছিলেন না। যা দেখে বেশ অস্বস্তিতে উপস্থিত আধিকারিক ও সদস্যেরা। হতাশ গলায় প্রধান বললেন, “গত বছরের মতো এ বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আর মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কারের অনুষ্ঠান করতে পারিনি। আর্থিক সমস্যা ছিল। মাইক প্রচার থেকে দেওয়াল লেখা সাধ্যমতো তো সবই করেছি। কিন্তু মানুষ না এলে কী করব?” বিরোধী দলের এক সদস্য বললেন, “সবাই তো উন্নয়ন চায়। কিন্তু যে জায়গাটি নিজের দাবি পেশের সব থেকে ভাল জায়গা, সেখানেই তো তাঁরা আসছেন না। বুথ পর্যায়ের সভাগুলিতেও উপস্থিতির হার কম। এটা খুবই দুঃখের। এই ব্যর্থতার দায় আমিও নিচ্ছি।” |
|
ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। |
জয় বাবা বিশ্ব ব্যাঙ্ক!
পেশ হল আয়-ব্যয়ের হিসেব। উঠে এল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মাকড়দহ-১ পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের অর্থের সিংহভাগই এসেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অধীন ‘আইএসজিপি’ প্রকল্পের মাধ্যমে। এই প্রকল্পে একটি পঞ্চায়েতের সার্বিক কাজকর্ম বিচার করে নম্বর দেওয়া হয়। আর সেই নম্বরের ভিত্তিতেই টাকা পাওয়া যায় উন্নয়ন খাতে। পঞ্চায়েতের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, হাওড়ার ১৫৭টি পঞ্চায়েতের ৯০টি আইএসজিপি প্রকল্পের যোগ্যতামান পেরিয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা মাকড়দহ-১ পঞ্চায়েত। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ‘আইএসজিপি’ থেকে ১৫ লক্ষেরও বেশি টাকা পেয়েছে এই পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেল, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে এই প্রকল্প খাতে পাওয়া যাবে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। তাই, পরবর্তী নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক, উন্নয়নের জন্য অর্থের সমস্যা হবে না। প্রধানের দাবি সে রকমই।
কর বাড়ান!
আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশের পরে শুরু তার উপরে আলোচনা। নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ, স্থানীয় গ্রন্থাগারে আরও সাহায্য প্রয়োজন, অবহেলায় পড়ে রয়েছে সরকারি বাড়ি ইত্যাদি নানা অভিযোগ উঠল। দাবি উঠল পঞ্চায়েতের ‘হাস্যকর’ কর ব্যবস্থাকে আধুনিক করার। এখনও পঞ্চায়েত এলাকায় ১ লক্ষ টাকার কোনও জিনিস কিনলে (বাড়ি, জমি ইত্যাদি) তার জন্য কর দিতে হয় মাত্র ১২০ টাকা! সরকারি নিয়ম। তাই ইচ্ছা থাকলেও পঞ্চায়েতগুলির পক্ষে এর বেশি টাকা নেওয়া সম্ভব নয়!
আবার সাক্ষরতা
পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করবার জন্য শুরু হয়েছে ‘বুনিয়াদি সাক্ষরতাকেন্দ্র’। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব বা কারও বাড়িতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে বর্তমানে সদস্য কম থাকলেও ভবিষ্যতে এই প্রকল্পকে ঘিরে আশা দেখা যেতেই পারে।
চলে এসো বন্ধু হতে...
পঞ্চায়েতের গত আর্থিক বছরের কাজের খতিয়ান দিয়ে প্রকাশিত হল একটি পুস্তিকা। বানান বিভ্রাট ও বাক্য গঠনে বেশ কিছু ভুল থাকলেও তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য নেই। মূল অধিবেশনের আগে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও শেষে নাচের অনুষ্ঠান হয়েছে। মঞ্চে যখন ‘আমার বন্ধু আসিফ আর আমার বন্ধু রেখা, আমার বন্ধু মাইকেল, কেউ নই আর একা’র তালে তালে পা মেলাচ্ছে ‘নৃত্যাঙ্গন’ সংস্থার শিল্পীরা তখন মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে ছোটবেলার গল্পে মশগুল শাসক এবং বিরোধী দলের স্থানীয় দুই কর্মী। সব জায়গায় যদি এমন হত! |
|
|
|
|
|