প্রেমের ফাঁদ পেতে চোর ধরল পুলিশ
প্রথমে একটি মিস্ড কল। সেই সূত্র ধরেই বাক্যালাপ থেকে শুরু প্রেমালাপ। আর তাতেই কিস্তিমাত। ‘প্রেমের’ ফাঁদে পড়ে সিনেমা হলে এসেই চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিকের হাতে পড়ল হাতকড়া।
বর্ষবরণের রাতে এমনই প্রেমের ফাঁদ পেতে দুই চোরকে পাকড়াও করল বালি থানার পুলিশ। কয়েক দিন আগে ‘এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ ছড়ানো রয়েছে, তাঁরা জানেন কে চুরি করেছে। চোর ধরা পড়বেই’ বলে রটিয়ে দিতেই যাঁর বাড়ি থেকে চুরি হয়েছিল, তাঁর বাড়ির দরজার সামনে গয়না ফেরত দিয়ে গিয়েছিল চোরেরা। বেলুড়ের এই ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুলিশের পদস্থ কর্তারা, বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এ বারও বালির এই ঘটনার পরে হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার সহাস্য মন্তব্য, নতুন নতুন চিন্তা প্রয়োগ করে চোরেদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে। আর তাতে কাজও হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বালির জেটিয়া রোডে এক বহুতলের বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর চন্দন অধিকারী। গত ৫ নভেম্বর বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁর ছেলে ঋত্বিক ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখেন, দরজার তালা ভাঙা। চন্দনবাবু অভিযোগে জানান, কয়েক ভরি সোনার গয়না, নগদ কয়েক হাজার টাকা, টিভি, ঘড়ি ও মোবাইল চুরি গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে ওই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর কাজে লাগিয়ে দেখা যায়, মোবাইলটি কেউ এক জন ব্যবহার করছেন। সেই মোবাইল থেকে অন্য একটি নম্বরে অসংখ্য বার ফোনও করা হয়েছে। তখনই ফন্দি আঁটতে শুরু করে বালি থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর।
এর পরে থানায় কর্মরত এক মহিলা গ্রিন পুলিশকে এই অপারেশনে নামানো হয়। বেশ কয়েক দিন ধরে চলে চোরকে প্রেমে ফাঁসানোর মহড়া। পুলিশ জানায়, একটি নতুন নম্বর থেকে এই মহিলা গ্রিন পুলিশকর্মী চুরি যাওয়া মোবাইলটি যিনি ব্যবহার করছিলেন, তার নম্বরে একটি মিস্ড কল করেন। কিছুক্ষণ পরেই উল্টো দিক থেকে আসে ফোন। মহিলা গ্রিন পুলিশকর্মী মিষ্টি স্বরে ভুল নম্বরে ফোন করেছেন জানালেও উল্টো দিকের যুবক তা মানতে নারাজ। এর পরেই শুরু হয় বারবার ফোন করা। আর প্রতি বারেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো মহিলা গ্রিন পুলিশকর্মীও অপর প্রান্তের যুবকটির সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে শুরু করেন। প্রতি বারেই তিনি যুবককে সতর্ক করতেন, যেন আর ফোন না করেন। কিন্তু যুবক মানতে চায় না সে কথা। শেষে শুরু হয় প্রেমালাপ। প্রেমে যখন হাবুডুবু খেতে শুরু করেছে যুবক, তখন বর্ষবরণের রাতে একটি সিনেমা না দেখলে কি হয়! যুবকের এই কথাতেই রাজি হয়ে যান ওই মহিলা গ্রিন পুলিশকর্মী। আর সেটিই তো চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
আর তাই ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লিলুয়া এলাকার একটি মাল্টিপ্লেক্স-এর সামনে ওই যুবককে চলে আসতে বলেন ওই মহিলা। সময়মতো পৌঁছেও যান প্রেমিক যুগল থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ, সকলে। ‘প্রেমিকার’ কথামতো সিনেমা হলের এক খাবারের দোকানের সামনে দাঁড়াতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় প্রমোদ রায় নামে ওই যুবক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরির মূল পাণ্ডা সুজিত উপাধ্যায়কেও ধরে ফেলে পুলিশ। তার নামে কলকাতা ও হাওড়া মালিপাঁচঘরা থানায় একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, চুরি যাওয়া সব মাল ওরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছে। ওদের পুলিশ হেফাজতে রেখে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। খুব তাড়াতাড়ি ওই মাল উদ্ধার করা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চন্দনবাবু বলেন, এটা খুবই মজার বিষয়। তবে আমার চুরি যাওয়া সব মাল উদ্ধার হলে আরও খুশি হব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.