সম্পাদকীয় ২...
একটি ব্যতিক্রমী বার্তা
ত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-আন নূতন বৎসরারম্ভে একটি নূতন বার্তা প্রেরণ করিলেন। দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক তিক্ত সম্পর্কের মোড় ঘুরাইবার বার্তা। অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ঘটনা, সন্দেহ নাই। নূতন বৎসর উপলক্ষে একটি বিশেষ ভাষণ দিতেছিলেন তিনি— (বাস্তবিক, ইহাও কম ঐতিহাসিক নহে, কেননা প্রথাভীরু সমাজতন্ত্রী দেশ উত্তর কোরিয়ায় ১ জানুয়ারি বিশেষ ভাষণদানের দৃষ্টান্ত সম্প্রতিকালে দেখা যায় নাই, শেষ এমনটি ঘটে ১৯৯৪ সালে, যখন কিম জং-আন-এর পিতামহ কিম ইল-সুং দেশের ক্ষমতাশীর্ষে ছিলেন)। সেই ভাষণে স্পষ্টবাচনে তরুণ প্রেসিডেন্ট জানাইয়া দেন, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করা প্রয়োজন, নতুবা শেষে যুদ্ধ-পরিস্থিতির উদ্ভব হইবে।— পিয়ংইয়ং-পতির এই বোধ-প্রদীপ্ত বার্তা আন্তর্জাতিক মহলকে বিস্মিত করিয়াছে। অতি-সামরিকভাবাপন্ন দেশটির অধিপতির মুখে এমন স্বাভাবিক বোধের কথা উচ্চারিত হইতে শোনাই বিস্ময়জনক। বিশেষ করিয়া যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই উত্তর কোরিয়া একটি দূরপাল্লার রকেট সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করিয়া বিশ্বের নজর কাড়িয়াছে, এবং তথ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত করিতেছে যে এই রকেট-ক্ষেপণ আসলে মিসাইল প্রযুক্তির মহড়া। ২০১৩ সাল অন্তত একটি শুভ দীপ সহকারে শুরু হইল। কিম জং-আন সেই দীপ-প্রজ্বলনের কৃতিত্ব দাবি করিতে পারেন।
সম্ভবত পিয়ংইয়ং-এর গত্যন্তরও ছিল না। উত্তর কোরিয়ার জন্মলগ্ন হইতেই সোভিয়েত বলয়ের অন্তর্গত দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সঙ্গিন। সম্প্রতি তাহা সঙ্গিনতর। সমীক্ষামতে, দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত অপুষ্টির শিকার, বেকারত্ব ও দারিদ্র পূর্বাপেক্ষাও মাত্রাছাড়া। এ দিকে প্রতিরক্ষা-খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় চিরকালের মতোই তুঙ্গস্পর্শী। এমনকী এই বারের ব্যতিক্রমী ভাষণেও প্রেসিডেন্ট বলিতে ভোলেন নাই, কেন জাতীয় উন্নতির স্বার্থে প্রতিরক্ষা বাজেট এবং সামরিকসজ্জার ঊর্ধ্বগতি বজায় রাখিতেই হইবে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋ ণ ছাড়া গতি নাই। এ দিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহিত সম্পর্কে অন্তত কিছুটা পরিবর্তন না হইলে ঋণের আশাতেও বালি। সুতরাং ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার নূতন (এবং প্রথম মহিলা) প্রেসিডেন্ট পার্ক গুয়েন হুয়ে শপথ লইবার আগেই সোলের অভিমুখে একটি পরোক্ষ বার্তা প্রেরণ জরুরি ছিল।
তবে একটি কথা ঠিক। যত অভিসন্ধিই কিংবা কূটনীতিই থাকুক না কেন, বিবাদবিতণ্ডা নহে শান্তি চাই— এমন বার্তা সর্বদা স্বাগত। বিশ্বের সর্বাধিক পরিমাণ অস্ত্রশাসিত সীমান্ত উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে শায়িত। কিম জং-আন সেই প্রেক্ষিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিলাষ যে কারণেই প্রকাশ করিয়া থাকুন, তাঁহাকে সহর্ষে সাধুবাদ জানাইতে হইবে। পৃথিবীর অন্যান্য তিক্তসম্পর্কাবদ্ধ প্রতিবেশীরা এই দৃষ্টান্ত হইতে শিক্ষা লউন। আর শিক্ষা লউন পশ্চিমবঙ্গ নামক অসীম দুর্ভাগা একটি অঞ্চলের তাবৎ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, যাঁহারা এমনকী দলীয় বিভেদরেখা পর্যন্ত অতিক্রম করিয়া সৌজন্য-সম্পর্কের কথা ভাবিতে শেখেন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.