ক্যাপসুলের অন্দরে চুপিসারে পাচার হচ্ছে হাসিস
চার সেন্টিমিটার লম্বা একটি প্লাস্টিকের ক্যাপসুল। একনজরে দেখলে মনে হতেই পারে তা ওষুধ। কিন্তু, ক্যাপসুলের দুটো অংশ আলাদা করে দিলে অন্দরে মিলবে হাসিস। নজরদারি এড়াতে ইদানীং উত্তরবঙ্গের নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্তে ক্যাপসুলের মোড়কে হাসিসের কারবার জাঁকিয়ে বসছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। সম্প্রতি নিউ জলপাইগুড়ি এলাকা থেকে মাদক পাচার চক্রে জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতারের পরে তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।
কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ ওই সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের পরে জেরায় অনেক তথ্যই জানতে পেরেছে। জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দাদের অনুমান, বিশেষ ধরনের ‘ক্যাপসুল’ বানিয়ে ফি বছর অন্তত ১০ কোটি টাকার হাসিসের কারবার চলছে। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা বলেন, “হাসিস পাচার চক্রের কয়েকজন সদস্যকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের গোয়েন্দারা গ্রেফতার করে। ধৃতদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমস্ত থানাকে সতর্ক করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে পর্যন্ত বিশেষ ধরনের ‘কেক’ তৈরি করে তার মধ্যে হাসিস পুরে পাচার করত কারবারিরা।
শিলিগুড়ির নেপাল সীমান্ত, জলপাইগুড়ির বাংলাদেশ সীমান্ত ও কলকাতায় কয়েকবার তা ধরা পড়ে। এর পরেই সতর্ক হয়ে নতুন ছক কষে হাসিসের কারবারিরা। তখনই ক্যাপসুলের মধ্যে হাসিস পাচারের কারবার শুরু হয় বলে সন্দেহ।
সম্প্রতি রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের শিলিগুড়ি শাখার অফিসাররা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে চার যুবককে গ্রেফতারের পরে সন্দেহভাজন কিছু প্রথমে পাননি। তবে প্রত্যেকের কাছেই ছিল প্রচুর পরিমাণে ক্যাপসুল। সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শো ক্যাপসুল। তারা ক্যাপসুলগুলি নেশার ওষুধ বলে গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছিল। সন্দেহের বশে ক্যাপসুল খুলে ভেতরে থাকা গুঁড়ো পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, তা হাসিস। গোয়েন্দাদের হিসেবে, একেকটি ক্যাপসুলে অন্তত ১০ হাজার টাকার হাসিস মেলে। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা জানান, জেরায় জানা গিয়েছে নেপাল সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়িতে ঢুকে উত্তর পূর্ব ভারতের একাধিক সীমান্ত দিয়ে ওই হাসিস বিদেশের বাজারে যায়।
কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের শিলিগুড়ির আইনজীবী রতন বণিক জানান, শিলিগুড়িতে ধৃতদের যোগাযোগ আন্তর্জাতিক মাদকের বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা এখন শিলিগুড়ি জেলে। ওই ঘটনায় পরে কলকাতায় গিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই চক্রের সব সদস্যকে ধরা জরুরি।”
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় ধৃতদের নাম মহম্মদ ইসলাম ওরফে শাহরুখ, মহম্মদ সরফরাজ ওরফে বনু, কামালুদ্দিন ওরফে সানু, আমিরুল রহমান এবং নাসিম আখতার। তাদের কাছে দুটি প্যাকেটে ক্যাপসুল পাওয়া যায়। ভারতীয় বাজারে ওই ক্যাপসুলের মোট দাম ১২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও ২৪টি ‘কেক’-এর প্যাকেট পাওয়া যায়। সেগুলিতেও হাসিস ছিল। আটক করা হাসিসের দাম ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, পাকিস্থান থেকে এক যুবক ওই ক্যাপসুল এবং কেক নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডুর একটি হোটেলে ওঠে। সেখানে আগে থেকেই ছিল শাহরুখরা। তারা জামাকাপড়ের আড়ালে সেগুলি নিয়ে পৌঁছে যায় এনজেপিতে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ওঠে বসার পরই ওত পেতে থাকা গোয়েন্দারা তাদের ধরে ফেলেন।
এ যাত্রায় ‘ক্যাপসুল’ ধরা পড়লেও সব সময় তা নজরে পড়া সহজ নয় বলে গোয়েন্দারা উদ্বিগ্ন। কারণ, ধৃতরা জানিয়েছে, ওই বিমানে ওঠার আগে ওই ক্যাপসুল তাঁরা গিলে ফেলতেন। গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে ওষুধ খেয়ে মলত্যাগ করলে ওই ক্যাপসুলগুলি বেরোলে তা সংগ্রহ করেন কারবারিরা।


একনজরে হাসিস
ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে সক্রিয় চোরাকারবারিরা
পাচার রুট দু’টি
• পাকিস্তান-নেপাল-শিলিগুড়ি-কলকাতা হয়ে বিদেশে, মূলত লন্ডনে।
• নেপাল থেকে শিলিগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান। সেখান থেকে লন্ডন।

• গত ছ’মাসে উত্তরবঙ্গের নানা এলাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকার হাসিস উদ্ধার। গ্রেফতার পাঁচ জন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.