লোকায়ুক্ত হচ্ছেই, বিপাকে মোদী
ধাক্কাটা এল সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে। পরপর তিন বার গুজরাত জয় করে নরেন্দ্র মোদী যখন জাতীয় রাজনীতিতে আসার জন্য ঘুঁটি সাজাতে তৎপর, তখনই নিজের রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগের প্রশ্নে আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন তিনি। শীর্ষ আদালত আজ গুজরাত সরকারের আবেদন খারিজ করে রাজ্যে লোকায়ুক্ত হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এ মেহতার নিয়োগ বহাল রেখেছে।
মোদী সরকারকে এড়িয়ে শুধুমাত্র হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়াল গত ২০১১-র ২৫ অগস্ট লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেছিলেন। রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে যায় মোদী সরকার। সেখানে রায় দ্বিধাবিভক্ত হওয়ায় রাজ্য সরকার যায় সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি বি এস চৌহান এবং এফ এম ইব্রাহিম কালিফুল্লাকে নিয়ে গঠিত শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ বলেছে, রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিয়ে চলতে বাধ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গুজরাত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে লোকায়ুক্ত নিয়োগ অবৈধ নয়।
এই রায় আসার পরেই গুজরাত সরকার তড়িঘড়ি জানিয়ে দিয়েছে, খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টের রায় রূপায়িত করা হবে। তবে দলের যাঁরা মোদীকে আরও বড় ভূমিকায় ও জাতীয় স্তরে দেখতে চান, তাঁরা এতে বিপদের আঁচ পাচ্ছেন। অতীতে কর্নাটকে বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে গদি খোয়াতে হয়েছে সে রাজ্যের লোকায়ুক্তের তৎপর ভূমিকার কারণে। বহু চেষ্টাতেও গদি ফিরে না পেয়ে দলছুট ইয়েদুরাপ্পাই এখন সেখানে সব চেয়ে বিপদ বিজেপি-র।
স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত কংগ্রেস, এই রায়কে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছে। বিজেপি-কে বিঁধে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, “বিজেপি দিল্লিতে লোকপাল নিয়ে হল্লা করে, গুজরাতে তাদেরই সরকার আট বছর ধরে লোকায়ুক্ত গঠন আটকে রেখেছিল। গুজরাতের আম-জনতাও এখন সরব হওয়ার মঞ্চ পেলেন। এ বার তাঁরাও জানতে পারবেন, রাজ্যে কত দুর্নীতি হয়!” মোদী-বিরোধী সামাজিক কর্মী তিস্তা শেতলবাদ বলেন, “ক্ষমতার ঔদ্ধত্যকে আজ পরাস্ত করল দেশের সংবিধান।”
বিরোধী শিবিরের এই উৎসাহ দেখে প্রমাদ গুনছেন মোদী সমর্থকরা। অভিসন্ধির গন্ধও পাচ্ছেন তাঁরা। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “যখন জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে, তখন তাঁকে ফের বিপাকে ফেলতে ঝাঁপাতে চাইতে কংগ্রেস।” সিএজি ইতিমধ্যেই গুজরাতের অনেক দুর্নীতি খোলসা করেছে রিপোর্টে। তাই বিজেপি-র ওই নেতার আশঙ্কা, এ বার রাজ্যপালের নিয়োগ করা লোকায়ুক্ত গঠন হলে একের পর এক বিপদের মুখে পড়তে পারেন মোদী। তাঁর ভাবমূর্তি ফের কলঙ্কিত করার চেষ্টা হতে পারে। বিশেষ করে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করার জন্য যখন অনেকেই সক্রিয়। আজও ফের মায়াবতী বলেছেন, যেন-তেন-প্রকারে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব ঠেকাবেন তিনি।
এর মধ্যেও দু’ভাবে ভরসা খুঁজছেন মোদী অনুগামীরা। এক, পরপর তিন বার জয়ের পর মোদীর দাপট এখন অনেক বেড়েছে গুজরাতে। ফলে সেখানে তাঁকে বেগ দেওয়া কঠিন। ফলে তাঁকে হয়তো ইয়েদুরাপ্পার মতো মুখ্যমন্ত্রিত্ব খোয়াতে হবে না। বিচারপতি মেহতা অবশ্য এ দিনই স্পষ্ট বলেছেন, রাজ্য সরকারের মনোভাব লোকায়ুক্তের কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না।
দুই, এ দিনের রায়কে কংগ্রেস তাঁদের জয় মনে করলেও বিজেপি কিন্তু রায়ের অন্য একটি ব্যাখ্যাও তুলে ধরতে তৎপর। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “শীর্ষ আদালত লোকায়ুক্ত নিয়োগ বহাল রাখার পাশাপাশি এটাও বলেছে যে, লোকায়ুক্ত নিয়োগের প্রশ্নে রাজ্যপালকে মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনেই চলতে হবে। এই কথাটাই বলে আসছিল গুজরাত সরকার। অর্থাৎ আদালত রাজ্য সরকারের বক্তব্যেই মোহর বসিয়েছে।”
তবে বিজেপি নেতৃত্ব এটাও বুঝতে পারছেন, এই রায়ের এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ, শীর্ষ আদালত রাজ্যপালের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ না করার বিষয়টিকেই মান্যতা দিয়েছে। ভবিষ্যতে যে কোনও দলই এই রায়কে ব্যবহার করতে পারবে কোনও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.