|
|
|
|
পুলিশের আঠারো ঘা-এর ভয়েই এগোয়নি বো স্ট্রিট |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বো স্ট্রিটে তাঁর দোকানের সামনেই মঙ্গলবার এক যুবতীর শ্লীলতাহানি করছিল দুই যুবক। যুবতীটির চিৎকার শুনেও এগিয়ে আসেননি তিনি। কারণ, ওই দুই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিলে তাঁর ঝক্কি বাড়বে বলেই মনে করেছেন ৬৫ বছরের ওই দোকানদার।
শুধু ওই বৃদ্ধ নন। একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ২৭ বছরের এক যুবকও। তাঁর সাফ কথা, “পুলিশ ছুঁলেই আঠারো ঘা। কে ও-সব ঝামেলার জড়াবে বলুন!”
পুলিশের ছোঁয়া বাঁচানোর জন্য চোখের সামনে মহিলার নিগ্রহ দেখে চুপচাপ ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন অনেকেই। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টেয় (ওই সময়েই জমজমাট রাস্তায় ঘটনাটি ঘটেছিল) বো স্ট্রিটে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে খোলা রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। মঙ্গলবারের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সেই সব দোকানের মালিকদের এক জন বলেন, “ওই সময় আমার দোকান বন্ধ ছিল। তাই ঘটনাটি দেখিনি।” আর এক দোকানি বলেন, “দোকান খোলা ছিল। তবে আমি কিছু দেখিনি।” |
|
ব্যাঙ্কশাল আদালতে ঘনশ্যাম থাপা ও সীতারাম থাপা।—নিজস্ব চিত্র |
বুধবার এমনটাই ছিল কলকাতার মুখ। যে-শহরের হাজার হাজার মানুষ দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করছেন, তাঁরাই চোখের সামনে মহিলাকে নিগ্হীত হতে দেখে প্রতিবাদ করছেন না কেন? কী বলছেন সমাজতত্ত্ববিদেরা?
সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা সুস্মিতা ভট্টাচার্য বললেন, “মানুষ বরাবরই চিহ্নিত হতে ভয় পায়। জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে মিছিলে পা মেলালেও একা কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করতে দ্বিধা বোধ করে।” তাঁর ব্যাখ্যা, পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে মামলায় জড়িয়ে পড়লে নিজের ক্ষতি হতে পারে, এই ভয়টা কিন্তু আজও মানুষের মনে থেকে গিয়েছে। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষগুলি হয়তো এই ধারণা থেকেই পিছু হটেছেন।
আমজনতার পিছিয়ে যাওয়ার বা নীরব থাকার ঘটনাটিকে অবশ্য অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছেন মনস্তত্ত্ববিদ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায়। সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন তিনি। ওই মনস্তত্ত্ববিদ বলেন, “দিল্লির বাসে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে জনসচেতনতা কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সমাজের প্রতিটি শ্রেণির প্রতিটি মানুষ এখনও সচেতন নয়। সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতনতা না-বাড়লে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে এবং তার প্রতিবাদ করতেও লোকে ভয় পাবে।”
তবে ঘটনার পরে ভয়ে দমে যাননি ওই যুবতী। এ দিনও তিনি ওই রাস্তা দিয়েই হেঁটে নিজের কাজ সেরেছেন। তিনি বলেন, “আমি মোটেই ভয় পাইনি। ভয় তো অভিযুক্তদেরই পাওয়ার কথা।
আমি রোজ যেমন রাস্তায় বেরোই, তেমনই বেরোব।”
এ দিন ওই নারী-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত ঘনশ্যাম থাপা এবং সীতারাম থাপাকে আদালতে তোলা হয়। তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। |
|
|
|
|
|