|
|
|
|
রুষ্ট রাজ্যপাল, কমিশনের তদন্ত, যুযুধান ধর্ষিতাও |
কাকলির মন্তব্যে ত্রিফলা-বিদ্ধ তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কলকাতা পুলিশকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ। রাজ্যপালের মন্তব্য। এবং ধর্ষিতার তরফে মানহানির মামলার হুমকি। পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতা সম্পর্কে সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের কটূক্তির জেরে একই দিনে ত্রিফলায় বিদ্ধ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।
দিল্লিতে বাসের মধ্যে গণধর্ষিতা তরুণী তখন সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাঁর জীবনের প্রায় শেষ লগ্নে পৌঁছেছেন। সেই সময়েই কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষিতার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দেন তৃণমূল সাংসদ কাকলিদেবী। গত ২৮ ডিসেম্বর একটি টিভি চ্যানেলে পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতাকে কার্যত যৌনকর্মী বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার পাঁচ দিন পরে, বুধবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এই ব্যাপারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আর এ দিনই রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মন্তব্য করেছেন, ধর্ষণ নিয়ে এই ধরনের চর্চা হলে মহিলাদেরই অসম্মান করা হয় এবং এটা লজ্জাজনক। সেই সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতা জানান, তিনি মানহানির মামলা করবেন কাকলিদেবীর বিরুদ্ধে।
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন ওই তৃণমূল সাংসদ?
কাকলিদেবী একটি টিভি চ্যানেলে মন্তব্য করেন, “পার্ক স্ট্রিটে আদৌ কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। পার্ক স্ট্রিটে যা হয়েছে, তা হল, পেশাদার কাজকর্ম নিয়ে ওই মহিলা এবং তাঁর খদ্দেরদের মধ্যে গোলমাল।” শাসক দলের সাংসদের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগকারিণী বলেন, “পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে, হয়তো আত্মহত্যা করতে হবে। কিন্তু যৌনকর্মীকেও কি ধর্ষণ করা যায়? ওঁর কথায় মনে হচ্ছে, যৌনকর্মী ধর্ষিতা হলে বিচার চাওয়ার অধিকার নেই!”
অভিযোগকারিণী সম্পর্কে কাকলিদেবীর ‘কু-ইঙ্গিত’ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল আগেই। এ বার মানবাধিকার কমিশনও এতে হস্তক্ষেপ করল। বড়দিন ও নববর্ষের ছুটির পরে কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এ দিনই কাজে যোগ দেন। কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার বলেন, “পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে কাকলিদেবী একটি টিভি চ্যানেলে যা বলেছিলেন, তার ফুটেজ পরে বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হয়। সে-সব খতিয়ে দেখেই তৃণমূল সাংসদ ঠিক কী বলেছিলেন, সেটা মানবাধিকার কমিশনকে জানাবেন পুলিশ কমিশনার।”
পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কাদের খান এখনও অধরা। এখনও ওই মামলার চার্জ গঠন হয়নি এবং সেই জন্য শুরু হয়নি শুনানিও। সিপি-র কাছে মানবাধিকার কমিশন জানতে চেয়েছে, ঘটনার পরে প্রায় বছর ঘুরতে চলল। তবু মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গেল না কেন? ওই ঘটনার তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, তা-ও জানতে চেয়েছে কমিশন। তাদের নির্দেশ, সিপি-কে তিন সপ্তাহের মধ্যে তাঁর রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
এ দিন রাজভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপালকে দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা এবং এই বিষয়ে রাজনীতিকদের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, “ধর্ষণ জঘন্য অপরাধ। এই নিয়ে চর্চা হওয়াও উচিত নয়। এটা খুবই লজ্জাজনক। সকলেরই উচিত, এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা।”
কাকলিদেবীর মন্তব্য প্রসঙ্গে পার্ক স্ট্রিটে নির্যাতিতাকে এ দিন প্রশ্ন করা হলে ওই মহিলা বলেন, “এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। তার পরেও এক জন সাংসদ কী ভাবে এমন কথা বলেন, তা ভাবতে পারছি না। আমি ওঁর (কাকলিদেবী) বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব। তবে আমার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কোনও অরাজনৈতিক আইনজীবী আমাকে সাহায্য করলে ভাল হয়।” ইতিমধ্যেই একটি সংস্থা ওই মহিলাকে আইনি সাহায্য দিতে উদ্যোগী হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিনই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, ধৃত সুমিত বজাজের জামিনের আবেদনের শুনানি দু’সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট গত ১৯ অক্টোবর সুমিতের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল। |
|
|
|
|
|