ত্রিফলার উপর বাড়তি কাঁটা
পুর স্কুলে মিড-ডে’র ৯ হাজার কুইন্টাল চাল উধাও
লকাতা পুরসভার স্কুলে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের অন্তত ৯ হাজার কুইন্টাল চালের কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না! উধাও চালের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। ত্রিফলা নিয়ে এমনিতেই বিড়ম্বিত পুর-কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে এই ঘটনা, যার কোনও ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারছেন না। ওই বিপুল পরিমাণ চাল কোথায় গেল, কী ভাবেই বা গেল, পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যত তার কোনও উত্তর নেই!
কলকাতা পুরসভার স্কুলগুলোয় পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনুযায়ী গত ক’বছর ইস্তক তারা দুপুরে স্কুলে রান্না করা খাবার (মিড-ডে মিল) পেয়ে আসছে। পুর-শিক্ষা দফতরের এক অফিসার জানাচ্ছেন, ২০০৬-এর এপ্রিল থেকে ২০১১-র ডিসেম্বর পর্যন্ত মিড-ডে খাতে প্রায় ২৭ হাজার ৯৫৮ কুইন্টাল চাল ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই)-র কাছ থেকে নিয়ে পুরসভার চারটে গুদামে রাখা হয়েছিল। এবং পুর-নথি বলছে, ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার ৭১৫ কুইন্টাল চাল পড়ুয়াদের খাওয়াতে খরচ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশিষ্ট থাকার কথা ১০ হাজার ২৪৩ কুইন্টাল। অথচ ২০১২-র জানুয়ারিতে দেখা যায়, গুদামে পড়ে রয়েছে সাকুল্যে ১১৫০ কুইন্টাল!
অর্থাৎ ৯ হাজার ৯৩ কুইন্টাল চাল উধাও!
পুর-সূত্রের খবর: মাস কয়েক আগে অডিটের একটা দল পুর-গুদামে গিয়ে চালের অঙ্কে এ হেন গরমিলের সন্ধান পায়। জানা যায়, মজুত চালের লেনদেনের ঠিকঠাক হিসাব খাতায় রাখা হয়নি। তার পরেও দীর্ঘ দিন ব্যাপারটা ধামাচাপা ছিল। কিন্তু পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট-রিপোর্টের জেরে সম্প্রতি তা জানাজানি হয়ে গিয়েছে। ত্রিফলা আলোর বরাতে
অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে ইতিমধ্যে পুর-কর্তৃপক্ষকে বিস্তর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তার উপরে স্কুলের শিশুদের খাবারের জন্য বরাদ্দ চাল উধাও হয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে আরও এক কাঠি। কী বলছেন ওঁরা?
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। পুরসভার নথি অবশ্য বলছে, গত বছরের ১১ জুলাই এটা তাঁর নজরে এসেছিল। অন্য দিকে মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) শশী পাঁজার বক্তব্য, “চুরি হয়েছে, না হারিয়ে গিয়েছে, নাকি নষ্ট হয়েছে কিছুই জানা নেই।” শশীদেবী মনে করছেন, তদন্ত করা দরকার। এবং তাঁর অভিযোগ, “যা হয়েছে, বাম আমল থেকেই হয়েছে। ওই কাজের দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কয়েক জন এখন পুরসভাতেই নেই।” কলকাতার প্রাক্তন মেয়র, সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “সবটাই হয়েছে তৃণমূল বোর্ডের সময়ে। এ বার ওঁদের ঘুম ভাঙা দরকার। সব কিছুতেই বামেদের ঘাড়ে দায় চাপানোর অভ্যেস ছাড়তে হবে।”
এত চালের হিসেবে যে গণ্ডগোল, তা অডিট পরিদর্শনের আগে ধরা পড়ল না? পুর-সচিবালয়ের এক অফিসারের ব্যাখ্যা, “এফসিআইয়ের থেকে ওজন করেই চাল নেওয়া হয়। কিন্তু গুদামে তা মজুত এবং সেখান থেকে বার করার সময় ওজন করা হয় না। কারণ, পুরসভার যে চারটে গুদামে চাল রাখা ছিল, কোথাওই ওজন-যন্ত্র নেই।” এই অব্যবস্থার কথা শশীদেবীও মানছেন। “চাল উধাও হওয়ার খবর জানার পরে প্রতিটা গুদামে ওজন-যন্ত্র বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বলছেন তিনি। সেই নির্দেশ অবশ্য এখনও কার্যকর হয়নি। তবে চাল-কাণ্ডের জেরে পুরসভার শিক্ষা দফতরের চিফ ম্যানেজারকে অন্যত্র সরানো হয়েছে বলে পুর-সূত্রের খবর।
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি-ও। যাদের প্রশ্নের জবাবে পুর-শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, ৩৫৯৩ কুইন্টাল চালের হিসেব ‘ভুল করে’ স্টক রেজিস্টারে তোলা হয়নি। আর বাকি ৫৫০০ কুইন্টাল নিয়ে গিয়েছে পুরসভার নথিভুক্ত পরিবহণ সংস্থারা। কোথায় নিয়ে গিয়েছে?
শশীদেবীর কাছে সদুত্তর নেই। বস্তুত পরিবহণ সংস্থগুলোর কাছে তা জানতেও চাননি তাঁরা। তবে শশীদেবী স্বীকার করছেন, সংস্থাগুলিকে গুদাম থেকে অন্যত্র চাল পরিবহণের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তা হলে কি অনুমতি ছাড়াই এই বিরাট পরিমাণ চাল গুদাম থেকে বার করা হল?
প্রশ্নটা এখন নিছক পুর-প্রশাসনের গণ্ডিতে আটকে নেই। ব্যাখ্যার অপেক্ষায় রয়েছে সিএজি-ও।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.