আজ, বুধবার রাজ্যে প্রথম ‘বই দিবস’ পালন হতে চলেছে। কিন্তু, এমন দিনেও নিজেদের ভাষায় পাঠ্যবই না-মেলায় হাতাশার ছায়া ডুয়ার্সের হিন্দি ও নেপালি ভাষী পড়ুয়াদের মধ্যে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের জন্য সরকারি পাঠ্য পুস্তক ডুয়ার্সে পৌঁছেছে। হিন্দি এবং নেপালি মাধ্যমের বই এসে পৌঁছয়নি জেলা প্রশাসনের কাছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ২ জানুয়ারিকে বই দিবস ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই মত আজ বুধবার সবস্কুলে বই বিলি শুরু হবে। যদিও হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে বই দেওয়া সম্ভব হবে না। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে জেলায় পাঠ্যপুস্তক বিলি শুরু হতেই হিন্দি বই না পাওয়ার কথা রাজ্যস্তরে জানানো হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি মাসেও হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের বই পাওয়া যাবে না বলে কলকাতা থেকে জানানো হয়েছে।
রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকার এসে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডুয়ার্স এবং পাহাড়ের কথা মাথায় রেখে বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের বইও বিলি করা হবে বলে জানানো হয়। গত জুলাই মাসে জলপাইগুড়িতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাম জামানায় ডুয়ার্সের আদিবাসী ও নেপালি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের শিক্ষাতেও বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। ডুয়ার্সের আদিবাসী বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে ডুয়ার্সে হিন্দি মাধ্যমের বেশি করে স্কুল তৈরি করা এবং পাঠ্যপুস্তক বিলি করার কথা তিনি ঘোষণা করেন। তবে শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ারা হাতে পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। হিন্দি ও নেপালি ছাত্রছাত্রীদের বই ছাড়াই ক্লাস শুরু করতে হওয়ার ঘটনার পরে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়েই সন্দিহান আদিবাসী নেতারা। জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্পের আধিকারিক অলক মহাপাত্র, “আমরা যেমন যেমন বই পেয়েছি, তেমন সরবারহ করা হয়েছে। সব স্কুলে যাতে বই পৌছয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলা মাধ্যমের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না থাকলেও হিন্দি ও নেপালি বইয়ে ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি রাজ্যকে জানিয়েছি” সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে খবর, এই বছরের আগে রাজ্য সরকার থেকে বই কেনার জন্য প্রতিটি স্কুলে অনুদান পাঠানো হত। সেই অনুদান স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের অভিভাবকদের হাতে দিয়ে দিতেন। পড়ুয়ারা সেই টাকায় বাজার থেকে হিন্দি বা নেপালি বই কিনে নিত। শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, এ বছর থেকে আর্থিক অনুদানের বদলে পড়ুয়াদের হাতে সরাসরি বই তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেলেও এখনও বই না পৌঁছনয় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, “টাকা না থাকায় দোকান থেকে বই কিনতে পারছি না। স্কুল থেকে বই দেওয়ার কথা। সেই বইও এখনও পেলাম না।”
প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছে আগামী এক মাসের মধ্যে হিন্দি ও নেপালি বই বিলি করা সম্ভব হতে পারে। তবে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের তরাই ডুয়ার্স আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রাজেশ লাকড়া বলেন, “প্রশ্নটা নীতিগত। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে বই বিলি করা হবে বলেই বই দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। যখন রাজ্য সরকার জানল হিন্দি বা নেপালি বই এখনই বিলি করা সম্ভব হবে না, তখন বই দিবস কেন পিছিয়ে দেওয়া হল না? বাংলা মাধ্যমের ছাত্র ছাত্রীরা বই পাবে আর হিন্দির পড়ুয়ারা খালি হাতে স্কুলে যাবে, এটাই মোটেই ভাল বার্তা দেয় না। যেটা ঘোষণা হচ্ছে তার সঙ্গে কাজেরও মিল রাখতে হবে।”
রাজ্য সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, হিন্দি মাধ্যমের ছাত্র ছাত্রীদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অঙ্ক, পরিবেশ, ইতিহাস, সপ্তম শ্রেণিতে অঙ্ক, পরিবেশ, ইতিহাস, ভূগোল এবং অষ্টম শ্রেণিতে শুধু অঙ্ক এবং পরিবেশ বিদ্যার বই বিলি করার কথা জানায় রাজ্য সরকার। যদিও ষষ্ঠ শ্রেণির পরিবেশ এবং সপ্তম শ্রেণির কিছু অঙ্ক বই ছাড়া হিন্দি মাধ্যমের কোনও বই জেলায় এসে পৌছয় নি। জেলা সর্ব শিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ট্রাকে চাপিয়ে বই জেলায় এসেছে, তবে তাতে কোনও হিন্দি বই নেই। হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের কত বই প্রয়োজন? জলপাইগুড়ি জেলায় ষষ্ঠ শ্রেমিতে প্রায় ৯০ হাজার পড়ুয়া রয়েছে, তার মধ্যে হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এদের সকলকে তিনটে করে বই দিতে হবে। সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে আরও ২৬ হাজার পড়ুয়া রয়েছে ওই দুই মাধ্যমে।
হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের এই প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রীর কেউই বই দিবসে হাতে কোনও বই পাবে না। আগামী এক মাসেও তাদের বই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। |