মাইকে সেই বিরোধী সুর তৃণমূলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিরোধী আসন থেকে শাসকের মসনদে প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে সাড়ে উনিশ মাস আগে। তবু মেজাজটা হারায়নি! তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে তাই বিচ্ছিন্ন ভাবে বেজে উঠল হারানো সুর!
যেমন যাদবপুর। বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্তের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি এলাকায় দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা বক্তৃতার যে ক্যাসেট মাইকে বাজিয়ে চললেন, তাতে রয়েছে বামফ্রন্টের ‘অপশাসনে’র কথা! যেখানে বলা হচ্ছে, ‘শাসক দলের অত্যাচারে শ্রমিক কাঁদছে, কৃষক কাঁদছে...’! সেই বক্তৃতা শুনে পাড়ারই এক বাসিন্দা তৃণমূলের এক কর্মীকে ডেকে বলেন, “কোন বক্তৃতা প্রচার করছো? এখন তো তোমরাই শাসক দল! যা মাইকে শোনাচ্ছো, এ তো বিধানসভা ভোটের আগে প্রচার করেছিলে!”
প্রশ্ন শুনে ওই কর্মী হন্তদন্ত হয়ে অকুস্থলে গিয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতন নেতাকে ঘটনাটা জানান। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাইকে এ বার ঘোষণা: “কোনও প্ররোচনায় কান দেবেন না!” তার পরে যথারীতি মাইকে ওই বক্তব্যই প্রচারিত হতে থাকল!
প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে এক দিকে যেমন নতুন-পুরনো নেতাদের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে, তেমনই তৃণমূলের সামনে ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়ে সংশয়ও প্রকট হয়েছে। তারা যে এখন আর বিরোধী দল নয়, এই বোধই গুলিয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়! তৃণমূল নেতৃত্বও প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই ফিরে গিয়েছিলেন দল প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণায়। সেই বামফ্রন্টের অপশাসন, সেই দলতন্ত্র অবসানের প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল গড়ার কাহিনিই ফিরে এসেছে এ দিন। তৃণমূল ভবনে যেমন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং সাংসদ সি এম জাটুয়া দল তৈরির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। নারকেলডাঙা এলাকায় মিছিল করেছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিষ্ঠাত্রী-দলনেত্রী তাঁর বার্তা দেওয়ার জন্য বেছে নেন ফেসবুককেই। যেখানে মমতা বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের ভালবাসা ও আশীর্বাদে তৃণমূল ১৪ বছর পার করে এগিয়ে চলেছে। তৃণমূল সব সময়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে আমরা তৈরি’। তাঁদের সমর্থনের জন্য মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তৃণমূল নেত্রীর আরও বার্তা, ‘দলের বিশ্বাসযোগ্যতাই দলের পরিচয়’।
যা শুনে কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, “পুরনো ক্যাসেট বাজিয়ে গেলে আর কী বিশ্বাসযোগ্যতা! দলনেত্রীও ভুলে যান তিনি বিরোধী নেত্রী থেকে প্রশাসক হয়েছেন। তাঁর দলও পুরনো স্লোগান দেয়!”
বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গে স্বাগত ২০১৩! |