রাজ্যে আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আর্থিক পুনর্গঠনে রাজ্যকে ঋণ দিলেও শঙ্কা কাটছে না এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর। একটাই চিন্তা তাদের, পশ্চিমবঙ্গ পারবে তো! সূত্রের খবর, সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব ও সরকারের সস্তা ভোটমুখী রাজনীতিই চিন্তায় রেখেছে তাঁদের। আর তাই রাজ্যকে সংস্কারের পথে ধরে রাখতে যেমন প্রতিনিয়ত নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এডিবি, তেমনই রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পুনর্গঠনে সম্প্রতি ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে এডিবি। গত ৬ নভেম্বর এ ব্যাপারে দিল্লিতে কেন্দ্র-রাজ্য-এডিবি চুক্তি সই হয়েছে। যে কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হল, রাজ্যের আর্থিক মেরুদণ্ডকে মজবুত করা। চুক্তি অনুযায়ী সামগ্রিক কর্মসূচির তিনটি দিক রয়েছে। ১. সরকারের খরচ কমানো এবং ব্যয়কে আরও কার্যকরী করে তোলা। ২. রাজস্ব তথা আয় বাড়ানো। এবং ৩. ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যকরী করা। কিন্তু সরকারের খরচ কমানোর পাশাপাশি আয় বাড়াতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ করতে হবে, যা সস্তা হাততালি কুড়োনোর রাজনীতির পরিপন্থী। ঋণ নেওয়ার জন্য সে সব বিষয়ে সম্মতি দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজ্যের তৃণমূল সরকার তা করে উঠতে পারবে কি না, সেটাই উদ্বেগের বিষয় এডিবি-র।
সূত্রের খবর, সেই ঝুঁকির কথা স্বীকার করেছেন স্বয়ং এডিবি প্রেসিডেন্ট হারুহিকো কুরোদা। ঋণের জন্য সম্মতি দিয়েও চূড়ান্ত রিপোর্টে তিনি বলেছেন, মূলত তিন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। ১. সংস্কারে দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব। ২. কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও ৩. সরকারের খরচ কমানোর বাধা হতে পারে রাজ্যের বিবিধ নির্বাচন।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও এডিবি সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকারের খরচ কমানো ও আয় বাড়ানোর জন্য কিছু বিষয়ে রাজ্যের কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে সম্মতি আদায় করে নিয়েছে এডিবি। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি খরচ কমানোর জন্য মোটামুটি তিন ধরনের দাওয়াইয়ের কথা ভাবা হয়েছে।
প্রথমত, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে রাশ টানা। স্বাভাবিক নিয়মে কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের জন্য যে শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে, তাতে নতুন নিয়োগ না করা। (এর ফলে বেতন ও পেনশন বাবদ সরকারের দায়ের বোঝা কমে।) দ্বিতীয়ত, সরকারি ও সরকারের অনুদানে চলা মাধ্যমিক স্কুলগুলির শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ওষুধ কেনা ও মজুত ব্যবস্থা কম্পিউটার-নির্ভর করা। (কারণ, এই দুই ক্ষেত্রেই হিসেবের গরমিলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।) তৃতীয়ত, ভর্তুকি বাবদ সরকারের আর্থিক বোঝা কমানো। ভর্তুকির অর্থ নগদে হস্তান্তরের কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আপত্তি জানাচ্ছেন, তখন এডিবি কিন্তু মনে করছে রাজ্যকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি এই সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমানোর আরও কঠোর ব্যবস্থার পরামর্শ দেবে এডিবি।
আয় বাড়ানোর জন্য কর কাঠামো সংস্কারের কিছু ব্যাপারে রাজ্যের সম্মতি আদায় করেছে এডিবি। যেমন, করদাতা ও কর আদায়কারীর মধ্যে আলোচনা ও যোগাযোগ যথাসম্ভব কমাতে হবে। কর ফাঁকি দেওয়া কমাতেই এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই উদ্দেশ্যে সম্পত্তি কর ব্যবস্থার সরলীকরণ, পণ্য পরিবহণ কর আদায়ের ক্ষেত্রে ‘বারকোডিং’ ব্যবস্থা চালু করা ও উৎপাদন শুল্ক আদায় ব্যবস্থা মজবুত করার দাওয়াইও দিচ্ছে এডিবি।
এডিবি-র এই দাওয়াই শেষ পর্যন্ত রাজ্য কতটা বাস্তবায়ন করে উঠতে পারে, সেটাই এখন সেটাই দেখার। |