রায়গঞ্জ-বর্ধমান
চুক্তিতে কর্মী নিয়োগে বিধিভঙ্গের অভিযোগ
থাযথ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চুক্তির ভিত্তিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করার অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
কৃষি দফতরে ওই কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে মঙ্গলবার বিক্ষোভ হল উত্তর দিনাজপুরে। একই দিনে এ ব্যাপারে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগপত্র জমা পড়ে বর্ধমানেও।
নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় এ দিন প্রায় তিন ঘণ্টা জেলা কৃষি দফতর ঘেরাও করে ডিওয়াইএফ। ঘেরাও ছিলেন জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা। আজ, বুধবার থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবিতে কৃষি দফতরের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান-বিক্ষোভে বসার কথা ঘোষণা করেছে ডিওয়াইএফ। সংগঠনের তরফে রাজ্য কৃষি দফতরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
দুই জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে হচ্ছে এই নিয়োগ। তবে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও গোলমাল বা দুর্নীতি নেই।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, নিয়োগ হওয়ার কথা ৬,৬০০ টাকা মাসিক বেতনে আপাতত এক বছরের চুক্তিতে। কৃষি ও কৃষি বিপণনে ওই পদ রয়েছে ১,০১৫টি। গত ১৯ অক্টোবর রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি সচিবের অনুমোদন পেয়ে কৃষি দফতরের ডিরেক্টর পরিতোষ ভট্টাচার্য ২৮ ডিসেম্বর উত্তর দিনাজপুরে উপ-কৃষি অধিকর্তা শিবপ্রসাদ রায়কে কলকাতায় ডেকে পাঠান। জেলায় ১৪ জনকে ১ জানুয়ারি থেকে চুক্তির ভিত্তিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগপত্র দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয় শিবপ্রসাদবাবুকে। ওই ১৪ জনের মধ্যে পাঁচ জন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, পাঁচ জন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, তিন জন স্নাতক এবং এক জন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ।
ওই ১৪ জনকে (১১ জন ইসলামপুর ও ৩ জন রায়গঞ্জ মহকুমার) এ দিন নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ শুরু হয়। খবর চাউর হতেই বিক্ষোভ-ঘেরাও শুরু করে ডিওয়াইএফ। শিবপ্রসাদবাবুকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সরকারি তালিকায় থাকা কয়েকজনকে নিয়োগপত্র নিতে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত আট জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ শেষ করেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। সদ্য নিযুক্তরা জানান, তাঁরা বিজ্ঞাপন দেখে আবেদনের পরে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন।
উত্তর দিনাজপুরের উপ কৃষি অধিকর্তাকে পাঠানো নির্দেশের প্রতিলিপি।
ডিওয়াইএফের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম মেনে ওই নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রাণেশ সরকার বলেন, “বেআইনি ভাবে ১৪ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ শুরু করেছে কৃষি দফতর। জেলার লক্ষাধিক বেকার যুবক যুবতীদের অন্ধকারে রেখে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।” রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, বিধি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্য পদের সংখ্যা জানিয়ে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাতে বিরাট সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর কাছে ওই নিয়োগবার্তা পৌঁছয়। চুক্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
এ ক্ষেত্রে কি তা করা হয়েছে? জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা শিবপ্রসাদ রায়ের দাবি, “নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। কৃষি দফতরের ডিরেক্টরের লিখিত নির্দেশেই চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিওয়াইএফের অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বর্ধমানে মুখ্য কৃষি করণে এ দিন কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে একটি ফর্ম পূরণ করতে দেখে অন্য কয়েক জন প্রশ্ন করে জানতে পারেন, চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদের জন্য এই ফর্ম পূরণ। অন্যদের ফর্ম দেওয়া হবে না। বর্ধমানের উপ-কৃষি অধিকর্তা শ্যামল দত্তের কাছে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, রাজ্য কৃষি দফতর থেকে আসানসোলের নানা ব্লকের জন্য ২৫ জনের নাম এসেছে। তাঁদেরই নিয়োগ সংক্রান্ত ফর্ম পূরণ করানো হচ্ছে। তখনই তাঁরা জেলাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। কী ভাবে বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ হচ্ছে, জানতে চাওয়া হলে শ্যামলবাবু বলেন, “কৃষিমন্ত্রী ও সচিব সুব্রত বিশ্বাসের সই করা একটি নির্দেশ এসেছে। এই ২৫ জনের নামও তার সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশ আমাকে পালন করতে হবে।”
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও দুর্নীতি নেই দাবি করে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “গত ছ’মাস ধরে এই নিয়োগের কাজ চলছে। আসানসোলের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরেও কিছু দিন আগে এ ভাবেই নিয়োগ হয়েছে। রাজ্য সরকার যে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক করেছে, তা থেকেই সারা রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে তিন হাজার জনকে নিয়োগ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.