বছরের মাঝখানে কাজের দিনে নতুন বছর পড়লে পিকনিক কী আর জমে! এ বছরের ১ জানুয়ারি মঙ্গলবার হওয়ায় সে ভাবে পিকনিকের দল চোখে পড়ে নি। আশপাশের কতিপয় লোকজন হাজির হয়েছিলেন নবদ্বীপ, মায়াপুরের মতো জায়গায়। কেউ কেউ আবার চৌগাছার মোড়েই গাড়ি থামিয়ে আয়োজন করে চড়ুইভাতির। এটাই ছিল এ বছরের প্রথম দিনের চিত্র।
তবে এই বছরেই প্রথম গঙ্গা বা জলঙ্গীর বুকে নৌকায় সাউন্ড বক্স বাজিয়ে উদ্দাম বেহেড নাচের বিপজ্জনক পিকনিক চোখে পড়েছে। এরই সাথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কোনও ফাঁকা মাঠ, মায়াপুর-চৌগাছা রাজ্য সড়কের পাশে চৌগাছা মোড় বা বামুনপুকুরের ধূ ধূ মাঠে পিকনিক এ বছরের নতুন ট্রেন্ড। বেথুয়াডহরি থেকে ম্যাটাডোরে করে জনা পঞ্চাশেক মিলে মায়াপুরের উদ্দেশ্যে পিকনিকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় চৌগাছার কাছেই ধীরাজ ঘোষ ও তাঁর সঙ্গীরা বসান চড়ুইভাতির আসর। ধীরাজবাবু বলেন, “আমরা একই সমবায় সমিতির সদস্য। প্রতিবছর বড়দিন বা নিউ ইয়ারে পিকনিক করি। তবে এ বছর নিউ ইয়ার সপ্তাহের মাঝখানে হওয়ায় দূরে কোনও জায়গায় যাওয়া হল না।” তিনি বলেন, “এ বছর সব কিছুরই দাম বেড়েছে। গ্যাস পাওয়াটা বেশ কষ্টকর হয়েছে। ফলে পিকনিকের সেই রমরমা নেই এ বার।” |
কেবল রান্নার গ্যাসই নতুন বছরের পিকনিকের বাধ সাধেনি। গত বারের চেয়ে বছর গাড়ির ভাড়া প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “গত বছর যে দূরত্ব অতিক্রম করতে ১০০০ টাকার তেল লাগত। এ বছর তা বেড়ে ১৪০০-১৫০০ টাকা লাগছে। বার বার পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য এটা হচ্ছে। তাই গাড়ির ভাড়া স্বভাবতই গত বারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ভাড়া চড়া হওয়ায় এ বছর গাড়ির চাহিদাও তুলনামূলকভাবে কম।” নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও সাধারণ মধ্যবিত্তের ধরাছোয়ার বাইরে। সব্জির বাজার সস্তা হলেও মাছের বাজার কার্যত নিষিদ্ধ সাধারণ ক্রেতাদের জন্য। প্রতি কেজি রুই-কাতলা বিকোচ্ছে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। বোয়াল, চিতল, ভেটকির দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা। দেশি হাঁসের ডিমের জোড়া ১৬ টাকা। শীতের খাদ্য তালিকায় অন্যতম জনপ্রিয় নলেন গুড়। ভালো গুড়ের কেজি ১৫০ টাকা। কমলালেবুর জোড়া ৮ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে শীতের পিকনিকে সস্তার দিন অতীত। আর এত কিছুর চাপে ছুটির পর্যটনে বাঙালির সেই রাজকীয় মেজাজটাই হারিয়ে গিয়েছে। |