১১ বছরেও হল না পূর্বে প্রশাসনিক ভবন
জেলা হওয়ার পরে পেরিয়েছে ১১ বছর। কিন্তু এতদিনেও জেলার নিজস্ব প্রশাসনিক ভবন গড়ে উঠল না। কাজ চলছে সেই ভাড়া বাড়িতেই। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি তমলুকের রাখাল মেমোরিয়াল ময়দানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন তৃকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তারপর থেকে তমলুক শহরের পুরোনো অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনিক ভবনেই নতুন জেলাশাসকের দফতর-সহ বিভিন্ন জেলা স্তরের অফিস চলছে। শহরের মানিকতলায় ভাড়া বাড়িতে চলছে জেলা পরিষদ অফিস, পুলিশ সুপারের অফিস-সহ অধিকাংশ রাজ্য সরকারি দফতর। জেলা পুলিশ লাইন চলছে তমলুক পুরসভার তৈরি অতিথিনিবাসে, পুলিশ ব্যারাক চলছে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি সঞ্চয় সংস্থার অসমাপ্ত বাড়িতে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জেলাবাসীর প্রশ্ন, জেলা তো শুধু নামেই, সদরের পরিকাঠামো হবে কবে?
শুধু সরকারি দফতর নয়, হাসপাতালেও রয়েছে পরিকাঠামোগত খামতি। তমলুক মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতাল স্বীকৃতি দেওয়া হলেও শয্যা সংখ্যা বাড়েনি। এছাড়া আর নতুন জেলা হওয়ার পর জেলাশহর তমলুকের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়েও শহরবাসী যে আশা করেছিলেন তাঁর ছিটেফোটাও হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে জেলা শহরে প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কাজে আসা লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধির জেরে শহরের অধিকাংশ রাস্তায় যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন স্কুলে, অফিসে যেতে দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। তমলুকের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “নতুন জেলা হওয়ার পর প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ার কাজে যে গতি আসা উচিত ছিল তা আসেনি। মূলত আর্থিক সঙ্কটের কারণেই কাজ ব্যহত হচ্ছে। তবে দ্রুত প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।” আর তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “জেলা প্রশাসনিক ভবন-সহ বিভিন্ন দফতরের অফিস তৈরির জন্য প্রায় ৬১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। পূর্ত দফতর টেন্ডার ডেকেছে। এছাড়া তমলুক স্টেডিয়াম উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য ক্রীড়া দফতর।”
এখন এই ভবনেই তলে প্রশাসনিক কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা পরিষদ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, নতুন জেলার প্রশাসনিক সদর চত্বর গড়ে তোলার জন্য ২০০৪ সালেই জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে চেয়ারম্যান করে সাইট সিলেকশন কমিটি গড়া হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নতুন জেলার প্রশাসনিক অফিস গড়ার জন্য পাঁচ বছর আগেই প্রায় ১২০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে তমলুক শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে নিমতৌড়ি এলাকায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে। এই জমিতে মাটি ভরাটও হয়েছে প্রায় দু’বছর আগে। চলতি বছরের মাঝামাঝি প্রস্তাবিত জেলাশাসকের অফিস তৈরির জন্য প্রায় ৬ একর, জেলাশাসকের বাসভবনের ২.৫ একর, অতিরিক্ত জেলাশাসকের বাসভবনের জন্য ১ একর, পুলিশ লাইনের জন্য ১৮.২২ একর, জেলা পরিষদ অফিস তৈরির জন্য ২.৫ একর, একটি অডিটোরিয়াম তৈরির জন্য ৫.৫৮ একর, জেলা সংশোধানাগার তৈরির জন্য ৬ একর ও বন দফতর, স্বাস্থ্য দফতরকে আধ একর করে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি কর্মী, আধিকারিকদের আবাসন, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অফিস, পার্ক, সবুজ এলাকা তৈরির জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অফিস ভাড়া বাবদ প্রতিবছর কয়েকলক্ষ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শুধু জেলা পরিষদ অফিসের ভাড়া বাবদই মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ মোটা টাকা খরচ হচ্ছে। দ্রুত অফিস ভবন তৈরির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।” জেলা সভাধিপতি জানান, তমলুক শহরের পুরনো আদালত চত্বরে কোর্ট ময়দানে সম্প্রতি নতুন জেলা আদালত ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই কাজ্যে। এছাড়া নিমতৌড়িতে সংখ্যালঘু অফিস ভবন তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।” কিন্তু জেলার মূল প্রশাসনিক ভবন, জেলা পরিষদ, পুলিশ সুপারের অফিস-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের অফিস ভবন নির্মাণের কাজ কবে সম্পূর্ণ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
তবে এর মধ্যেও জেলার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তমলুকে জেলা পরিষদের অফিস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ছিল রক্তদান শিবির ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার অভিযান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা, সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি, অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয় পাল প্রমুখ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.