‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের খারাপ খেলার চেয়ে
অনেক বড় বড় সমস্যা দেশে রয়েছে’

প্রশ্ন: প্রিয় শহরে বছরের প্রথম দিনে পা দেওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
গম্ভীর: দারুণ। কলকাতায় পা দিলেই ভালবাসা আর স্নেহের একটা অদ্ভুত আস্তরণ চার পাশে ঘুরে বেড়ায়। এয়ারপোর্টে যারাই হাত মেলাতে এল, সবার মুখে হাসি। কণ্ঠস্বরে উষ্ণতা। কলকাতায় বছরটা শুরু করতে পারাটা আমার কাছে একটা দারুণ অভিজ্ঞতা।

প্র: দিল্লির অবস্থা কেমন?
গম্ভীর: দিল্লি ঠান্ডায় কাঁপছে। অবশ্য আবেগেও কলকাতার উষ্ণতা অনেক বেশি। ইডেন টেস্টে এ বার যখন ৫০ করলাম, গ্যালারি যে ভাবে আমাকে স্বাগত জানাল, সেটা একমাত্র নিজের শহর থেকেই পাওয়া যায়। এ জন্যই আমি বেশ কিছু দিন ধরে বলছি কোটলা আর আমার হোম গ্রাউন্ড নয়।

প্র: গত বছরের প্রথম দিনটা আপনাদের কেটেছিল সিডনিতে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। টিম আগে এসে যাওয়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, মনে আছে?
গম্ভীর: ওটা খুব ছোট ঘটনা। মাথা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এখন সামনের দিকে এগোতে চাই।

প্র: দিল্লি শহরের যা সাম্প্রতিক ঘটনা, তাতে দিল্লির ছেলে হিসেবে সামনের দিকে কি এগোনো যাচ্ছে?
গম্ভীর: আমার মনে হয়, এর চেয়ে শোচনীয় কিছু বহু বহু বছর ঘটেনি। এখন তো হাওয়াই একটা উঠে গিয়েছে যে, দিল্লিতে মেয়েরা অরক্ষিত। এটা কেন হবে? দেশের সর্বত্র ছেলেরা যেমন সুরক্ষিত, মেয়েরাও তাই থাকা উচিত। সর্বত্র নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকা উচিত। এই নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যা হয়েছে, হওয়ারই কথা।
শহরে গৌতম গম্ভীর। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্র: কখনও কি মনে হয়েছে, আমি যদি বিখ্যাত কেউ না হতাম, আমার অংশগ্রহণকে যদি অন্য ভাবে দেখানোর সুযোগ না থাকত, তা হলে আমি গৌতম গম্ভীর ইন্ডিয়া গেটে পৌঁছে যেতাম। ওই ভিড়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কাঁদানে গ্যাস আর লাঠি খেতাম।
গম্ভীর: আমার মনে হয় না। ইন্ডিয়া গেটে গিয়ে প্রকাশ্য বিক্ষোভে অংশ নিলেই সে কেবল প্রতিবাদী আর বাড়ি বসে থাকলে নয়, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি এই প্রতিবাদ ও মিছিল আজ আছে, কাল নাও থাকতে পারে। আমি দীর্ঘস্থায়ী রাস্তায় যেতে চাই। আমি চাই পরিবর্তন আনতে। দেশের পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে যে, মেয়েদের দেখার ভঙ্গিটা বদলাও।
এটা হয়তো হতে অনেক দিন সময় লাগবে। কিন্তু ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভ নয়, এটাই আসল ওষুধ।

প্র: আর কোনও ওষুধ?
গম্ভীর: তীব্রতম শাস্তি দাও অপরাধীদের, দরকার হলে ফাঁসিতে ঝোলাও। কিন্তু এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও যে, ভবিষ্যতে কেউ অপরাধ করার আগে যেন সাত বার ভাবে। লোকের মনে ঠকঠকানি এনে দাও। আর বিশেষ আইন তৈরি করো, এই ধারায় তীব্রতম শাস্তির।

প্র: দিল্লির নাগরিক হিসেবে শহরের এই ভাবমূর্তি কেলেঙ্কারিতে আপনি কি লজ্জিত?
গম্ভীর: আমি লজ্জিত ভারতীয় হিসেবে, দিল্লিবাসী হিসেবে নই। এটা দিল্লি, কলকাতা বা মুম্বইয়ের প্রশ্ন নয়। এটা গোটা দেশের লজ্জা। প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা নিচু হয়ে যাওয়া উচিত। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, আমাদের একটা কিছু করতেই হবে। এই প্রতিবাদের হাইপ-টাইপ দু’দিনে চলে যাবে। তখন যেন আমরা ইস্যুটা ভুলে না যাই। কার্পেটের তলায় ঢুকিয়ে না দিই। এ বারও যদি আমরা সমাজকে বদলাতে উদ্যোগী না হই, তা হলে ভবিষ্যতে কে বলতে পারে আমাদেরই কারও বোন বা স্ত্রী এর শিকার হবে না?

প্র: নতুন বছরের মেজাজটাই কেমন খিঁচড়ে আছে না? দিল্লির ঘটনা। টনি গ্রেগের মৃত্যু। সচিনের অবসর। টিমের খারাপ খেলতে দেখা। ঠিক যেন করুণ একটা মিউজিক বাজছে।
গম্ভীর: টিমের কথা বলতে পারি। এখনও আমাদের একই প্যাশন। একই অ্যাটিচিউড। একই রকম খিদে। হয়তো আমরা জিতছি না। তাই কনফিডেন্সটা নেই। কিন্তু জিতলেই কনফিডেন্স ফেরত আসবে। সমর্থকদের উদ্দেশে এক জন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে বলতে চাই, নতুন বছরেও আমাদের সমর্থন করে যান। আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর সব রকম চেষ্টা আমরা করে যাব।

এটা দিল্লি, কলকাতা বা মুম্বইয়ের প্রশ্ন নয়। এটা গোটা দেশের লজ্জা।
প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা নিচু হয়ে যাওয়া উচিত...
...তীব্রতম শাস্তি দাও অপরাধীদের, দরকার হলে ফাঁসিতে ঝোলাও।

প্র: ভারতীয় মিডিয়ায় টিমকে নিয়ে রীতিমতো উত্তপ্ত সমালোচনা চলছে। রেহাই পাচ্ছেন না আপনার মতো সিনিয়ররাও।

গম্ভীর: মিডিয়ায় ওদের চাকরি টিমকে সমালোচনা করার। আমাদের চাকরি দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর। দু’পক্ষই নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। আমি এ জন্যই কালেভদ্রে টিভি দেখি। কাগজ কম পড়ি।
মিডিয়ার উদ্দেশে শুধু এটাই বলতে চাই, ইন্ডিয়ান টিমের খারাপ খেলার চেয়ে অনেক বড় বড় ইস্যু এই মুহূর্তে দেশে রয়েছে।

প্র: যেমন?
গম্ভীর: যেমন, দেশব্যাপী মহিলাদের সুরক্ষা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। এটা একটা সাঙ্ঘাতিক সমস্যা এবং প্রচুর অপরাধের মূলে। তিন নম্বর হল শিক্ষার অভাব।

প্র: আজ হঠাৎ করে আপনার টুইটার অ্যাকাউন্ট আবির্ভূত হয়েছে @5gautamgambhir। এই অ্যাকাউন্টটা কি চাপে থাকা টিমের এবং নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য?
গম্ভীর: না না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেসেজ দেওয়ার জন্য। আমার মনে হয় না, ক্রিকেট নিয়ে আমি খুব বেশি টুইট করব-টরব বলে। হয়তো করবই না।

প্র: সচিনহীন ড্রেসিংরুম কেমন লাগছে?
গম্ভীর: একটু ‘অড’ তো লাগছেই। সচিন থাকলে যে কোনও সমস্যায় যাওয়া যেত। জেনে নেওয়া যেত কোথায় ভুল হচ্ছে। সেই বড়দা চলে গেল। আমি তো ওর সিদ্ধান্ত শুনে অবাকই হয়ে যাই। একেবারেই আন্দাজ করতে পারিনি।
কিন্তু আমার মতে, চলে যাওয়াটা জীবনেরই অঙ্গ। চলে গিয়েছে বলে হা-হুতাশ করে বসে থাকলে চলবে না। টিমে কাউকে না কাউকে ওই জায়গাটা নিতে হবে।

প্র: চেন্নাইয়ে ধোনির ইনিংস কি ওঁর ওয়ান ডে-তে খেলা সেরা?
গম্ভীর: ওর সেরা কী! ওয়ান ডে ক্রিকেটে আমার দেখা সব সেরা ইনিংসের একটা।

প্র: বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনি ধোনির সঙ্গে অনেকক্ষণ ব্যাট করেছিলেন। ভারত অধিনায়কের সেই ইনিংসের তুলনায় এটা কোথায় পড়বে?
গম্ভীর: এটা অনেক বেটার। যেমন পরিবেশ ছিল, যেমন পরিস্থিতি ছিল। ওখান থেকে টিমকে টেনে তোলা। অনবদ্য।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.