ওয়াঘা-যুদ্ধ
ইডেন টেনশনে রাখছে ভারতকে,
মেজাজে পাকিস্তান

হম্মদ হাফিজ টিম হোটেলে কলকাতার চেনা কাউকে দেখলেই ডেকে নিচ্ছেন। পাশে বসিয়ে প্রাক্তন কেকেআর প্লেয়ারের ছোট্ট জিজ্ঞাসা: আপনাদের রঞ্জি টিমটা কেমন করছে? ক্যাপ্টেন কে?
চেনা ঠাট্টা-ইয়ার্কি সব উধাও। দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইট লেট করল ঝাড়া দু’ঘণ্টা। শরীর আর দিচ্ছে না বীরেন্দ্র সহবাগের। সিরিজে পিছিয়ে থাকার মানসিক চাপ, তার উপর কানের কাছে ইডেনের বিদঘুটে পরিসংখ্যান নিয়ে অষ্টপ্রহর খোঁচাখুঁচি। আজ পর্যন্ত ইডেনে ভারত হারাতে পারেনি পাকিস্তানকে। হোটেলের দিকে যেতে যেতে ঘনিষ্ঠমহলে সহবাগ বলেও ফেলেছেন, “জানি, রেকর্ডটা পাল্টাতে হবে। কিন্তু তার জন্য ওদের বোলারদের সামলাতে হবে। আমাকে আর গোতিকে টানতে হবে।”
ডাভ হোয়াটমোরের নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। পাকিস্তানের প্র্যাক্টিস সামলাও, ক্রিকেটারদের মন বোঝো। সিএবি-র উপদেষ্টা হয়ে শহরে ছিলেন বছর দু’য়েক, এখন ক্রিকেটারদের জন্য ‘কনডাক্টেড ট্যুর’-এর ব্যবস্থা না করলে চলবে কেন?
বিরাট কোহলি শহরে এসেছেন, তবে খেলবেন কি না জানেন না এখনও। টিমের স্থানীয় ম্যানেজার সন্দীপ দাসের মতো কাউকে কাউকে বলে ফেলেছেন ‘পারব’। কিন্তু পারবেন তো? বোর্ডের তরফে কুয়াশা এখনও কাটেনি। আর তিনি না থাকলে তিনে কে? পরিষ্কার, ‘ব্ল্যাকহোল’!
ইডেন তাঁর বড় প্রিয় মাঠ। ওয়াঘার এ পারে এসে এই মাঠের সঙ্গে কত সুখস্মৃতি যে জড়িয়ে আছে। পাঁচ বছর আগে এখানে তাঁরই সেঞ্চুরি হার বাঁচিয়েছিল পাকিস্তানের। সেই ইউনিস খান আজও আছেন। আল্লাহ্-র কাছে প্রার্থনাতেও বসছেন। ইডেনে তিন নম্বর সেঞ্চুরিটা চাই...।
নন্দনকাননে নিমগ্ন
ইডেনে জুনায়েদ। মঙ্গলবার। ছবি: উৎপল সরকার
দু’টো দেশের ভৌগলিক অবস্থান কত কাছাকাছি। অথচ দু’দেশের মানসিক অবস্থানে কত দূরত্ব।
ভারত-পাকিস্তান এখন দুই ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা। পাকিস্তান যদি আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে বসে থাকে, ভারত ডুবে অতলান্তিকের অতলে।
আর এই দুই ‘পৃথিবী’র সম্মুখসমরের প্রেক্ষাপট প্রস্তুত। ইডেনের ভিভিআইপি কোশেন্ট কমছে, বৃহস্পতিবারের ইডেনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আসছেন না, কিন্তু তাতে গ্ল্যামার কোশেন্ট কমছে কোথায়? ইডেনের ‘নিজাম’ লক্ষ্মণ থাকছেন, থাকছেন ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’, প্রাক্তন-বর্তমান মিলিয়ে যে সব ভারতীয় ক্রিকেটারদের জিপে করে ইডেন ঘোরানো হবে, কপিল-গাওস্কর-বিশ্বনাথের সঙ্গে সেখানে ঢুকে পড়েছেন এমএসডি-বীরু-গোতিও। ও দিক থেকে আবার ওয়াসিম আক্রম, ইন্তিখাব আলমদের সঙ্গে হালফিলের শোয়েব মালিক। মানে, ভারতের জামাই আর কি। মোদ্দা কথা বাদশাহী বিরিয়ানি তৈরির রেসিপিতে মশলার কোনও অভাব নেই। সিএবি-ও আবার নিত্যনতুন পরিকল্পনা গুঁজে চলেছে। সাড়ে পাঁচশো পাকিস্তানি সমর্থকের জন্য থাকছে ইডেনে ‘দাওয়াত’। ‘মেহমান’ বলে কথা। এখানেই শেষ নয়, ম্যাচের দিন তাঁরা যাতে ঠিকঠাক সময়ে নমাজ পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থাও থাকছে গ্যালারি চত্ত্বরে।
টিম পাকিস্তানকে দেখে অবশ্য মনে হবে না, তারা এ দেশে ‘মেহমান’। পাক সাংবাদিকদের ইউনিস খান বলছিলেন, “মিসবার সুবিধেটা হল, ও ড্রেসিংরুমে কোনও চাপ ঢুকতে দেয় না। ইনজামামের আমলেও এ রকম দেখেছি। ধরুন দলের কেউ খারাপ ফর্মে আছে। মিসবা কোনও দিন তাকে গিয়ে বলবে না, পরের ম্যাচে তুমি নেই। বরং এমন একটা ভাব নিয়ে ঘুরবে, যেন কিছুই হয়নি।” বোধহয় সেই কারণেই ম্যাচের টেনশনকে ‘ধুত্তোর’ বলে টিম পাকিস্তান গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের প্ল্যান করে। ম্যাচের মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে। হোয়াটমোরকে সিএবি-র কাছে তদ্বির করতে পাঠায়। যদিও রয়্যাল বেঙ্গল দর্শনের মতো এটাও শেষ পর্যন্ত গঙ্গাবক্ষেই নিক্ষিপ্ত হল।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী: ইডেনে তৈরি হচ্ছেন ইরফান। শহরে এসে পড়লেন যুবরাজ। ছবি: উৎপল সরকার, শঙ্কর নাগ দাস
‘কন্ডাক্টেড ট্যুর’ আয়োজনে ব্যর্থ। ডাভ হোয়াটমোর তাঁর ‘ঘরের মাঠের’ সুবিধেটাও তুলতে পারলেন না। ম্যাচ পিচে অল্প ঘাস দেখে হোয়াটমোর ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়কে বলতে গিয়েছিলেন, “প্র্যাক্টিস পিচের ঘাসটা একটু ছেঁটে দিন।” প্রবীর কী বলতে পারেন, বুঝে নিন। পরে বলছিলেন, “ও সব অন্যায় দাবিদাওয়া আমার কাছে চলবে না।” পিচে বাউন্স থাকছে। বল দ্রুত আসবে ব্যাটে। মানে জুনায়েদ-ইরফানদের পোয়াবারো। জুনায়েদকে তো আবার ‘ভবিষ্যতের আক্রম’ সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন ইউনিস। প্র্যাক্টিসেও তার যথেষ্ট নমুনা পাওয়া গেল। আক্রম ঘরানার মারাত্মক ইনসুইংগুলো যত বার বেরল জুনায়েদের হাত থেকে, তত বার জামশেদদের ডিফেন্স ভেঙে ছিটকে যাচ্ছিল স্টাম্প। ইউনিস বলছিলেন, “জুনায়েদের সবচেয়ে বড় গুণ, ও বর্তমানে থাকে। আমাদের টিমও সেটা করে। এখন যেমন। সিরিজে ভাল জায়গায় আছি, যে কোনও উপায়ে সিরিজটা জিতে ফিরতে চাই।”
জুনায়েদের ইনসুইং শায়েস্তা করার এক নম্বর লোক ছিলেন যিনি, তিনি টিমে আর নেই। তবু সিএবি চেষ্টা করেছিল। চেয়েছিল, টিমে না থাকুন, ইডেনে অন্তত আসুন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। কিন্তু এসআরটি আসছেন না। সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে এসএমএস করে দিয়েছেন: ‘৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকব।’
রোদ ঝলমলে ম্যাচের আবহে এটুকুই যা মনখারাপের মেঘ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.