দেখভালে খরচ কোটি, ফুলগাছ নেই একটিও
ফুলের চারা কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩৬ লক্ষ টাকা। জৈব সার ব্যবহারে খরচ আরও ৩০ লক্ষ। গাছ দেখভালের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে তিন জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদের বেতন বাবদ খরচ হয়েছে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। অথচ একটা ফুলগাছও নেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের আলিসাগড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্প ফুল ও ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে। আছে বলতে শুধু উদ্বোধন ফলক। কাজ বলতে হয়েছে শুধু জমি সমতলীকরণ আর কিছুটা পাঁচিল। এখানেই শেষ নয়, খাতায়-কলমে যে জমিতে প্রকল্প হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে, সেই জমিটিও প্রকল্পের নামে নেই।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আদৌও কি কোনও দিন ফুল গাছ লাগানো হয়েছিল?
জমির পাশেই বাড়ি সুধাকৃষ্ণ দিগর, বিষ্ণু দিগরদের। তাঁদের কথায়, “কোনও দিন গাছ লাগানো হয়েছে বলে তো দেখিনি। এখানে একটা বড় টিলা ছিল। টিলাতে বরং অনেক গাছ ছিল। সেই গাছ কেটে, টিলা ভেঙে শুধু জমিটা সমান করেছে। তখন বলেছিল, এখানে কারখানা হবে। সেন্ট তৈরি হবে। কোথায় কী?”
ফলকই সার। —নিজস্ব চিত্র।
যিনি উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এই বিশেষ প্রকল্প আদায় করে নিয়ে এসেছিলেন, সেই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “আগের সরকারও প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে কিছু করেনি। এই সরকারও করছে না। আমি বহু বার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও চিঠি দিয়েছিলাম। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি দিয়েছি। কত কষ্ট করে প্রকল্পটি আদায় করেছিলাম। দুঃখ হচ্ছে, কিছুই হল না।” ফুলের চারা কেনা, জৈব সার তৈরি, জমি সমতলীকরণ-সহ বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। কিন্তু কোথায় সে সব? প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা সাংসদের জবাব, “হ্যাঁ হয়েছিল। কিন্তু কোথায় গেল তা বলতে পারব না। উদ্বোধনের সময় গাছ দেখেছিলাম। জানি না তখন আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কি না।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, উদ্বোধনের সময় বিভিন্ন নার্সারি থেকে ফুলের টব ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছিল। সবাই সেই ফুল-ই দেখেছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে টব সরে যেতেই প্রকল্প এলাকা খাঁ-খাঁ মাঠ। যেখানে এখন খেলাধুলো করে এলাকার শিশুরা। সুধাকৃষ্ণবাবু বলেন, “কিছু না হলে ছেলেরা খেলাধুলোই তো করবে। আর কী করার আছে বলুন।”
কিন্তু কী ভাবে এমনটা ঘটল? অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর অরিন্দম দত্তের সংক্ষিপ্ত জবাব, “প্রকল্পের কাজ সেই ভাবে এগোয়নি বলে জেলাশাসকের নির্দেশে ওই প্রকল্পে আর কোনও টাকা দেওয়া হচ্ছে না।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পে জেলার তিন জায়গায় তিনটি প্রকল্প তৈরির কথা ছিল। খড়্গপুর ২ ব্লকে ও ডেবরাতে ফুল ও ফল প্রক্রিয়াকরণ এবং সবংয়ে আধুনিক মানের মাদুর তৈরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রকল্প রূপায়ণ করার কথা জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের। তার জন্য ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার ১৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪ হাজার টাকা মঞ্জুর করে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে মেলে ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। আর রাজ্য ম্যাচিং গ্রান্ট হিসাবে দেয় ১ কোটি ১৬ লক্ষ। সব মিলিয়ে জেলা পেয়েছিল ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। তিনটে প্রকল্পের মধ্যে খড়্গপুর ২ ব্লকে কোনও কাজই হয়নি। সবংয়ের রুইনানে প্রকল্প তৈরির জন্য জমি দেখা হয়। এখনও জমি প্রকল্পের নামে হয়নি। হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অথচ সেই জমি সমতল করতে ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে প্রশাসন। ডেবরাতেও জমিটি প্রকল্পের নামে নেই। কিন্তু কাজ হয়েছে বলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের হিসেব রয়েছে। প্রশাসনিক কতার্দের কাছেও এই গরমিলের কোনও সদুত্তর নেই। ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি বলেন, “শুধু আমি নই, ডেবরা ব্লকের কেউউ কোনও দিন এখানে ফুল গাছ দেখেননি। টিলা ভেঙে সমতল করা হয়েছে, কিছুটা পাঁচিল দেওয়া হয়েছে ওই পর্যন্ত। যদি এর বাইরে খরচ দেখানো হয় তা হলে তদন্ত দাবি করব। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.