|
|
|
|
মা ‘ডাইন’, তাই ছেলের দেহ দাহ হল দু’দিন পরে |
বরুণ দে • শালবনি |
‘ডাইন’ মায়ের বিচারের পরেই ছেলের দাহকার্যমোড়লদের এমন নিদানের জেরে দু’দিন ধরে ঘরের মধ্যে পচল মৃতদেহ। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার মৌপালের ঘটনা। পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার দুপুরে মৃতদেহ দাহ হল কোনও রকমে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে রোগে ভুগছিলেন আদিবাসী পাড়ার ক্ষুদিরাম কিস্কু (৩৬)। রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। গ্রামের মোড়লেরা নিদান দেন, ক্ষুদিরামের মা স্বর্ণময়ীদেবীর উপর ‘ডাইন’ ভর করেছে। আগে জানগুরুকে ডাকতে হবে। বিচার-সভার পর দেহ দাহ হবে। দেহ পচছে খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে আদিবাসী পাড়ায় আসে পুলিশের একটি দল। তবে দেহ দাহ হয়নি। মহকুমাশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার সকালে গ্রামে আসেন শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস এবং শালবনি থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা। দু’জনে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে দেহ দাহ করার ব্যবস্থা করেন। |
|
মৃতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন শালবনির বিডিও। |
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, প্রশাসনের ‘নাক গলানো’তে খুশি নন কেউ। কাঁপা-কাঁপা গলায় স্বর্ণময়ীদেবী বিডিওকে বলেন, “গ্রামের বড়দের কথা অমান্য করার উপায় নেই। আমরা দেহ দাহ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কী করব?” মৃত যুবকের ভাই বিশাল প্রথমটায় মুখ খুলতে না চাইলেও পরে বিডিও-র আশ্বাসে বলেন, “গ্রামেরই কয়েকজন বলেছিলেন দাহ করা যাবে না। তাই দাহ করা হয়নি।” কারা বলেছিলেন? বিডিওর প্রশ্নের উত্তরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রবি কিস্কুর দিকে আঙুল দেখান বিশাল। ষাটোর্ধ্ব রবিবাবু অবশ্য বলেন, “আমি কিছু বলিনি। সমাজের কয়েকজন বলেছিলেন।”
সম্প্রতিই দাসপুরে ডাইনি সন্দেহে তিন জনকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার আগে ডেবরায়
|
ক্ষুদিরাম কিস্কু। |
ডাইনি সন্দেহে অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছিল। দিন তিনেক আগে শ্যালো পাম্পের তার-চোরকে ধরতে দাসপুরের এক গ্রামের লোকেরা নন্দীগ্রাম থেকে ডেকে এনেছিলেন গুণিন। একের পর এক ঘটনাই বলে দিচ্ছে, অজ্ঞানতা আর অশিক্ষার আঁধার এখনও কাটেনি প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায়।
সচেতনতা প্রসারে প্রশাসনের কোনও চেষ্টাও নেই বলে অভিযোগ মেদিনীপুর লোধা শহর কল্যাণ সমিতির জেলা সম্পাদক বলাই নায়েকের। একমত পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের জেলা কমিটির সদস্য বাবুলাল শাসমলও। তিনি বলেন, “আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি। কিন্তু সব জায়গায় শিবির করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসন চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করতে পারে। স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে প্রচার চালাতে পারে। প্রয়োজনে আমাদের মতো সংগঠনদের দিয়েও শিবির করাতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তো প্রশাসনকে কিছু করতে দেখলাম না।”
প্রশাসন কিছু করছে না কেন? প্রশ্ন এড়িয়ে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “আমি বিডিও ও আইসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। দু’-এক দিনের মধ্যেই ওখানে কুসংস্কার বিরোধী সভা হবে।”
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|