|
|
|
|
বছরের প্রথম দিনে ভয়কে জয় করে বুরুডি, জোনহায় ভিড় |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
চিত্র ১: ঘাটশিলার কাছে বুরুডি লেক। লেকের আশপাশ জুড়ে গাড়ির মেলা। যার মধ্যে অনেকগুলিই আবার পশ্চিমবঙ্গ থেকেই গাড়ি নিয়ে বর্ষ বরণ করতে ছুটে এসেছে।
চিত্র ২:পাহাড় আর জঙ্গলের গা বেয়ে ঝরঝরিয়ে নেমে আসছে জোনহা ফলস। পাহাড় থেকে পাথরের ওপরের জল পড়ার শব্দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে উচ্চ ক্ষমতার সাউন্ড সিস্টেম থেকে ভেসে আসা হিন্দি গানের সুর। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষ চলছে ঝরণার জলে স্নান। পাহাড়ের খাঁজেই উনুন জ্বালিয়ে চড়ুইভাতিতে ব্যস্ত পর্যটকের দল।
একই ছবি ধানবাদের কাছে তোপচাঁচি কিংবা জামশেদপুরের ডিমনা লেকেও।
মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনটা এমনভাবেই খুশির আনন্দে মাতলেন পর্যটকেরা।
বছর দুই আগে পূর্ব সিংভূম জেলার এই বুরুডি লেকের ধারেই ল্যান্ড মাইনে পুলিশের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। ধানবাদের কাছে তোপচাঁচি লেকের গায়ে মাওবাদীদের ‘আস্তানা’-র তকমা এখনও পুরোপুরি ওঠেনি। রাঁচির অন্যতম দর্শনীয় স্থান, রাঁচি-হাজারিবাগ রোডের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে জোনহা ফলস এখনও সূর্যাস্তের পরে নিরাপদ নয়। |
|
জোনহা ফলসে নববর্ষে চড়ুইভাতির ঢল।—নিজস্ব চিত্র |
তা সত্ত্বেও বর্ষবরণ উৎসব পালন করার নেশাটা যেন সব কিছুকেই পিছনে ফেলে দিল। প্রশাসনের অঘোষিত ‘ঘোষণা’, চড়ুইভাতি সেরে দিনের আলো থাকতে থাকতেই ফিরে যেতে হবে। তাই সকাল হতে না হতেই দূর-দূরান্ত থেকে এখানে চড়ুইভাতি করতে এসেছেন সাধারণ মানুষ। এমনকী ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মরাণ্ডিও এ দিন জোনহা ফলস ঘুরে যান। এ যেন মাওবাদী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ‘জেহাদ’।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘরিয়া থেকে বুরুডি লেকে চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী। কলকাতার সায়েন্স সিটি মেগা কমপ্লেক্সের বাসিন্দা কালীপদ দলুইদের মতো সাধারণ বাঙালিরা শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে জমিয়ে চড়ুইভাতি করলেন সারাদিন। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “আসলে ভয় পেলেই ভয়। পর্যটকরা আসতে ভয় পান তাই অশুভ শক্তি সাহস পায়।” অনেকটা একই সুর জোনহা ফলসে বেড়াতে আসা গৌতম গিলানির কথাতেও। আদতে কলকাতার টালিগঞ্জের বাসিন্দা গৌতম গিলানি বছর তিনেক হল কর্মসূত্রে রাঁচিতে রয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি আসি। সঙ্গে আমার পরিবার, বাচ্চারাও থাকে। এমন ভিড় হয় না। সাহস করে একবার চলে এলেই আর কিছু হবে না।”
আসলে ঝাড়খন্ডে চড়ুইভাতি করার এমন অনেক জায়গাই রয়েছে যেগুলি এক সময় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু জঙ্গি অস্থিরতার কারণে সেই সব জায়গায় পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে বলেই দাবি প্রশাসনের। জোনহা ফলসে এ দিন প্রায় দশ হাজার ছিল পর্যটকের সংখ্যা। তোপচাঁচি কিংবা বুরুডি লেকেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তবু সাবধানের মার নেই। প্রতিটি জায়গাতেই এ দিন রাইফেল আর কার্বাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীদের। কোথাও কোনও ধরনের জটলা দেখলেই ভিড় হালকা করতে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন ভিড়ের মধ্যেই। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবু আমরা ঝুঁকি নিতে পারছি না।” তবে সার্বিক ভাবে প্রশাসন, পুলিশ কর্তারা খুশি, মাওবাদী নামক ‘ভয়’টিকে মানুষ অনেকটাই জয় করেছেন। নতুন বছরের প্রথম দিনে এটাই প্রশাসনকে মানুষের উপহার। |
|
|
|
|
|