তরুণীর নাম প্রকাশ করার পক্ষে সওয়াল করে ফের বিতর্কে শশী
র্ষিতা যুবতীর নাম প্রকাশ করেই তাকে সম্মান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শশী তারুর। আইন মোতাবেক এ দেশে ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করা যায় না। তা জেনেও তিনি কী করে এই মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
এ দিন তারুর টুইটারে লিখেছেন, “ওই যুবতীর নাম এখনও গোপন রেখে কী উপকার হচ্ছে, বুঝছি না। তার নাম প্রকাশ করে তাকে সম্মান জানানো উচিত।” তারুরের মতে, যুবতী আর বেঁচে নেই। “এমতাবস্থায় তার বাবা-মায়ের যদি আপত্তি না থাকে, তা হলে ওই যুবতীর নামেই নামকরণ হোক এ দেশের ধর্ষণ-বিরোধী আইনের। সে তো এক জন মানুষই ছিল, শুধু একটা প্রতীক নয়।”
ঘটনা হল, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২২৮-ক ধারা অনুযায়ী, ধর্ষিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে ধর্ষিতা নিজে যদি চান, তা হলে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে পারেন। তা বাদে প্রশাসন বা সংবাদমাধ্যম নিজে থেকে ধর্ষিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে পারে না। শশীর টুইটকে কেন্দ্র করে তাই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে শশীর এই মন্তব্য থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে কংগ্রেসও। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “শশী যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে খামোখা বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক নয়।”
অর্থাৎ শশীর কথাকে খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না তাঁর দল। দিল্লির গণধর্ষণ নিয়ে এই মুহূর্তে এমনিতেই যথেষ্ট চাপে রয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে শশীর বক্তব্য তাদের অস্বস্তিই বাড়াল। এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্নে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলকে বিপাকে ফেলেছেন শশী। এক বার খরচ কমাতে নেতা-মন্ত্রীদের বিমানে ইকনমি ক্লাসে ভ্রমণ করার নির্দেশ দিয়েছিল দল। তারুর সেটাকে টুইটে লিখেছিলেন, ‘ক্যাটল ক্লাস’। বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। বারবার তাঁকে তাঁর কথার জন্য কৈফিয়ৎ দিতে হয়েছে, দলের কাছ থেকে সতর্কিত হতে হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের সভানেত্রী মমতা শর্মা এ দিন শশীর বিরোধিতা করে বলেছেন, “ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করা যায় না।”
সুযোগ নষ্ট না করে বিজেপি এটাকে নজর ঘোরানোর রাজনীতি বলে বর্ণনা করতে শুরু করেছে। বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে কংগ্রেস। শশী তারুরের মন্তব্যে সেটাই প্রতিফলিত হচ্ছে। মেয়েটির নাম প্রকাশ করে তাঁকে আরও কলঙ্কিত করতে চাইছেন তারুর।” বিজেপির বক্তব্য, কঠোর আইন প্রণয়ন করাটাই আশু কাজ। কার নাম প্রকাশ করা হবে না হবে, সেটা এখন ভাবার সময় নয়।
নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজসেবী রঞ্জনা কুমারীর কথায়, “দেশের আইন সম্পর্কে হয়তো শশী তারুর অবগত নন। তাই এমন মন্তব্য করছেন।” পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের মত, আইনটা কার নামে হচ্ছে, সেটা বড় কথা নয়। তাঁর বক্তব্য, “ধর্ষিতার নাম প্রকাশ হলে তাঁর পরিবারকে বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে।” শশীর এই কথা দেশ এবং সংস্কৃতিকে সঠিক ভাবে না চেনারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। একমত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যও। “দিল্লির মেয়েটিকে নিয়ে আন্দোলন চলছে, সে বেঁচে নেই। নাম প্রকাশ হলে হয়তো তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু পরিবারের মুখ চেয়ে সেটা না করাই ভাল।”
শশীর কথাকে কেউই সমর্থন করছেন না, এমন অবশ্য নয়। টুইটারে তাঁর সমর্থনে কিছু বক্তব্য এসেছে। কিরণ বেদী শশীকে সমর্থন করে বলেছেন, “তরুণীর লড়াইকে অমর করে রাখতে এটা সাধু প্রস্তাব। এই পথে হেঁটে আমরা ধর্ষণের কলঙ্কও মোচন করতে পারব।” কিরণ উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, আমেরিকায় মহিলা ও শিশুদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত আইন ব্র্যাডি, মেগান, জেসিকা, কার্লি এ ভাবেই নামকরণ হয়েছে।
রাতে শশী ফের টুইট করে বলেন, তাঁর বক্তব্য নিয়ে প্রচুর ভুলভাল কথা ছড়াচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তরুণীর বাবা-মার আপত্তি না থাকলে তবেই তার নাম প্রকাশ করা হোক। নচেৎ নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.