|
|
|
|
দিল্লি গণধর্ষণ-মামলা |
বাস থেকে ফেলে পিষে মারার চেষ্টা হয় তরুণীকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শুধু গণধর্ষণ ও মারধর নয়, ‘আমানত’ ও তাঁর বন্ধুকে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার পর চাকায় পিষে মারতে চেয়েছিল রাম সিংহ ও তার সঙ্গীরা। দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে হাজার পাতার চার্জশিটে এই অভিযোগও আনতে চলেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণ দিল্লির সাকেতের একটি ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে শুরু হবে দিল্লি গণধর্ষণ মামলাটির শুনানি। ওই দিনই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট পেশ করবে পুলিশ। তার পর ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে প্রতিদিন মামলার শুনানি চলবে। সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী দয়ান কৃষ্ণনকে এই মামলার জন্য নিয়োগ করেছে সরকার। এর আগে দিল্লি পুলিশ ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার হয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সওয়াল করেছেন কৃষ্ণন। যার অন্যতম নীতীশ কাটারা হত্যা মামলা। কৃষ্ণন এই মামলার জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেবেন না বলে জানিয়েছেন। দিল্লি পুলিশের কর্তারা মনে করছেন, যে পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য রয়েছে, তাতে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা যাবে। আদালত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই দেবে বলে পুলিশের আশা। |
শ্রদ্ধার্ঘ্য
|
মৃত তরুণীর স্মৃতিতে সমাবেশ যন্তরমন্তরে। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই |
পুলিশ সূত্রের খবর, হাজার পাতার চার্জশিটে ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাসে নিজেকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন ওই তরুণী। বাধা দেওয়ার চেষ্টায় তিন জনকে তিনি কামড়েও দেন। অভিযুক্তদের শরীরে তার দাগও রয়েছে। আদালতে তা-ও প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হবে। গণধর্ষণ ও মারধরের পরে তরুণী ও তাঁর বন্ধুকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চাকার তলায় পিষে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তরুণীকে কোনও রকমে সরিয়ে নেন তাঁর ওই বন্ধুই। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে শুয়ে তরুণীর দেওয়া বয়ানের পাশাপাশি ওই যুবকের সাক্ষ্যও পুলিশের সবথেকে বড় হাতিয়ার। পেশায় সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবক ইতিমধ্যেই পুলিশের সামনে ধৃতদের শনাক্ত করেছেন। রাম সিংহ, মুকেশ সিংহ, পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা এবং অক্ষয় ঠাকুরের বিরুদ্ধে ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে মামলা চললেও ষষ্ঠ অভিযুক্ত নিজেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে দাবি করায় তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে ৩০-৪০ জনকে সাক্ষী তালিকায় রাখা হয়েছে। যার মধ্যে দিল্লির হাসপাতালের চিকিৎসকরা ছাড়াও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও রয়েছেন। ওই বাসের মালিক দীনেশ যাদবের বিরুদ্ধেও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। কারণ সে ভুয়ো ঠিকানা দিয়ে বাস চালানোর পারমিট জোগাড় করেছিল বলে জানা গিয়েছে।
এর মধ্যেই রাজধানীতে মহিলাদের সুরক্ষা খতিয়ে দেখতে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্তে আগেই বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়া হয়েছিল। ধর্ষণের কড়া শাস্তির বিধান তৈরির জন্য তৈরি হয়েছে কমিটিও। এ সবের উদ্দেশ্য একটাই দিল্লিতে ২৩ বছরের তরুণীর গণধর্ষণ ও তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমজনতার মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ যতটা সম্ভব প্রশমিত করা। এখনও অবশ্য সেই ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। গত কাল বছর শেষের রাত থেকে শুরু করে আজ নতুন বছরের প্রথম দিন, দিল্লির সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করেই যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ আজও অব্যাহত। কিছুক্ষণ পরপরই আওয়াজ উঠছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। নয়াদিল্লির কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক শিথিল হলেও এখনও ইন্ডিয়া গেট-রাজপথ-বিজয় চক চত্বর পুলিশি নিরাপত্তায় মোড়া। একই ভাবে যন্তরমন্তরেও পুলিশি নিরাপত্তায় কোনও খামতি নেই। পুলিশি ব্যারিকেডের মধ্যেই কোথাও মোমবাতি জ্বালিয়ে, কোথাও ছবি-পোস্টার সাজিয়ে চলছে বিক্ষোভ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দিল্লির ওই তরুণীর গণধর্ষণের পরে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ওই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি পুলিশের গাফিলতিও খতিয়ে দেখা হবে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইন সংশোধন হবে। দিল্লিতে মহিলাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হবে। প্রথম দু’টির জন্য ঊষা মেহরা কমিশন এবং জাস্টিস বর্মা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বার স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হল। তদন্ত রিপোর্ট এবং আইন সংশোধন সংক্রান্ত সুপারিশ জানিয়েই মেহরা কমিশন বা বর্মা কমিটির কাজ শেষ হবে। টাস্ক ফোর্স পাকাপাকি ব্যবস্থা হিসেবে থাকবে। মহিলাদের সুরক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়মিত পর্যালোচনা করাই এর প্রধান কাজ। |
|
|
|
|
|