এই রাত হোক আমারও, ‘নির্ভয়’ শপথ দিল্লির
ল মেয়ে, তোকে আকাশ দেখাই। রাতের আকাশ।
চল, তোকে নিয়ে হাঁটি। রাত একটা, দু’টো, তিনটে।
চল, হেঁটে বেড়াই গোটা বছর। হিসেব নিই। আর ক’বার মরবি তুই?
ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। নতুন বছর আসছে। দিল্লি হাঁটতে বেরিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আম দিল্লিবাসী। ‘নির্ভয়’কে অভয় দিতে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাক কাটছে মুনিরকা বাস স্টপে। যেখান থেকে মেয়েটি বাসে উঠেছিল। সেখান থেকেই আওয়াজ উঠছে, ‘হক কি দাবিদারি হ্যায়, সারি রাত হামারি হ্যায়।’ রাতের দিল্লি কব্জা করার লড়াই। সেই বাহাদুর মেয়েটির লড়াই। যে দু’সপ্তাহ আগে বন্ধুর সঙ্গে এক মুঠো স্বপ্ন নিয়ে বাসে উঠেছিল। বিয়েও হত এই নতুন বছরটিতে। কিন্তু শিকার হল বারোটি নৃশংস চোখের। এই চোখ এই সমাজেরই। যার কবলে কখনও পড়ে ‘নির্ভয়’ বা ‘দামিনী’। কখনও বা মনোরমা দেবী, নিলোফার, আশিয়া, সনি সুরিরা।
আর ভয় নয়। সেই বাসস্ট্যান্ডের পাশেই মধ্যরাতের দিল্লি। —নিজস্ব চিত্র
বর্ষবরণের রাতে যখন অনেক বাড়ির ছাদে আতসবাজির ফোয়ারা, দিল্লির হাজারো জনতা তখন আগামী সব রাতকে উজ্জ্বল করার ব্রতে সামিল হল। ঠিক যখন রাত বারোটা, নীরবতা পালন করা হল দু’মিনিট। সঙ্গে অঙ্গীকার। কোনও যৌন নিগ্রহ বা হিংসা ঘটাব না। এমন ঘটনা চোখে পড়লে চুপ করেও বসব না।
এই রাত দখলের লড়াই নিছক প্রতীকী নয়। ‘দামিনী’র মৃত্যুকে সামনে রেখে শহর চাইল, সমাজের বদল। চিন্তার বদল। দৃষ্টির বদল। শুধু ধর্ষণ বা যৌন হিংসা কেন! ঘরে-বাইরে, বাসে-মেট্রোয় রোজ মহিলাদের যে হেনস্থার শিকার হতে হয়, বদল হোক তার। তাই গান হল, কবিতা হল, পথনাটক হল। তুলে ধরা হল কিছু চেনা-পরিচিত নমুনাও। যখন রাস্তায় কোনও মেয়ের পথ আটকে ছেলেরা বলে, “তোমার পথই তো আটকিয়েছি, তুমি যে আমার শ্বাস আটকিয়েছ!” কিংবা ঘুরঘুরিয়ে দেখার জবাব আসে, “আমি তো শুধু মেপেইছি, অন্য কিছু তো করিনি!” কিংবা পরিবারেরই কোনও ভাই-বাবা-চাচা যখন স্নেহের মোড়কে বাড়িয়ে দেয় অসম্মানের হাত।
মেয়েরা এ বার নিজেদের সম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন। প্রশ্ন তুলছেন, কেন ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরই শেখানো হবে ‘পোশাক এ ভাবে পোরো না!’ ‘রাতে একা বেরিও না’, ‘ছেলেদের সমঝে চলো’! কেন ছেলেদেরও শেখানো হবে না ‘মেয়েদের সম্মান করো’, ‘বন্ধু হতে চাইলেও জিজ্ঞেস করো’, ‘যৌনসঙ্গ পেতে চাইলেও জিজ্ঞেস করো’!
নেতাহীন লড়াইয়ের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল নেতাদের উপরে। কেন একটা আইন মিলবে না, যাতে ভরসা থাকে? কেন একটা পুলিশ থাকবে না যাকে বিশ্বাস করা যায়? কেন এক জন সংবেদনশীল নেতা পাওয়া যাবে না? কেন নেতারা কেউ বলবেন, ছোট স্কার্ট পরলে তো ধর্ষণ হবেই! কেনই ধর্ষণ হলে বলবেন, তা খদ্দেরের সঙ্গে গোলমাল? কেন বলবেন, প্রতিবাদীরা মুখে রংচং মেখে আসেন? বর্ষশেষের রাত জেগে দিল্লির প্রশ্ন ‘দামিনী’র মৃত্যুর জন্য দায়ী কি শুধু পুলিশ ও সরকার? না আমি আর আপনিও?
রাত আড়াইটে। ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। মুনিরকা বাসস্ট্যান্ডে দু’টি পুলিশের পাহারা বসেছে। মোমের শিখা তবু জ্বলছে। কেউ না কেউ বুজে যাওয়া শিখা থেকে নতুন মোম জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। এই বাসস্টপই হোক ‘দামিনী’র মেমোরিয়াল দাবি তুলেছে শহর। চোখের সামনে এ ভাবেই বেঁচে থাকুন অচেনা মেয়েটি। পথচলতি গাড়ি থমকে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই নামছেন। এক কিশোরীও এল। বাবার সঙ্গে। হাতে ফুল। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল অসংখ্য মোমবাতির দিকে। চোখ ফেটে জল। কান্নাভরা চোখে বাসস্টপে একটি কাগজে লিখে দিল, ‘সরি’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.