স্বাগত-বিদায়
মধ্যরাতের হুল্লোড়ের মধ্যেই জন্মাল অচেনা এক কলকাতা
র্জমান ট্রাফিক থমকে গেল এক্সাইড মোড়ে। ২০১৩-কে স্বাগত জানানোর মুহূর্তে তখন সোল্লাসে অজস্র হর্ন বাজছে। চক্রাকারে হাতে হাত মিলিয়ে এক মানব-বন্ধন তাদের পথ আটকে দিল।
নামী-দামি ক্লাবে ডিজে-র কাউন্টডাউন বা মোবাইলের এসএমএসে নয়া ইংরেজি ক্যালেন্ডারের আবাহন এখন নেহাতই ক্লিশে। সোমবার মধ্যরাতে, ২০১২-র শেষ মুহূর্তে এক অন্য কলকাতার দেখা মিলল। পার্ক স্ট্রিট ফেরত ঈষৎ স্খলিত জনতা বা ফুরফুরে গাড়িচালকের সামনে যখন স্পর্ধিত পোস্টার মেলে ধরেছেন কলেজপড়ুয়া তরুণী। যার বয়ান, ‘আমার শরীর কে ছোঁবে, সেটা আমিই ঠিক করব!’
গড়িয়াহাটের মোড় বা কার্জন পার্কের ছবিটাও আলাদা নয়। বয়সের ফারাক ভুলে প্রতিবাদী মুখের মহাজোট। কে কোন রাজনৈতিক পতাকায় বিশ্বাসী, সেটাও অবান্তর। সমবেত স্বর গাইছে, ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ বা ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। শুধু কি নয়াদিল্লির বাসে গণধর্ষণের জেরে তরুণী খুনের প্রতিবাদ? কলকাতার বর্ষবরণের রাত মানে তো বাপি সেনেরও রাত। সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে গানে-গানে কলকাতাকে দু’দশক আগের বানতলা-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন কবীর সুমন। শহরে-গাঁয়ে ধর্ষণের শিকার আরও অনেকের ক্ষতই মিশে গেল উৎসবের রাতে। গভীর রাতে তুরীয় মেজাজের পার্ক স্ট্রিটকে ব্যঙ্গ করে তিরতিরে মোমের শিখা জ্বলতে থাকল।
শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাস নয়, নতুন বছরকে এ ভাবেও স্বাগত জানাল মহানগর। সোমবার রাতে।
এক্সাইড মোড় ও কার্জন পার্ক থেকে দু’টো মিছিলের গন্তব্যই পার্ক স্ট্রিট। ক্যাডারসুলভ শৃঙ্খলা নয়। মিছিলে অনভ্যস্ত পায়ে আনাড়ি পথ চলা। প্রধানত ফেসবুকের আহ্বানেই এই পথে নামা। কেন? জবাব দিতে স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান,
আমরা কী চাই
পথ নির্ভয়
কখন তা চাই
আজ এখনই।

দিল্লিতে রাজপথে নিরাপত্তার আর্জিতে রাত কে ‘কব্জা’ করার ডাক দিয়েছিল নাগরিক সমাজ। আর কলকাতার প্রতিবাদীরা জনে জনে ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ লেখা ব্যাজ পরিয়ে দিয়েছেন।
শুধু দিল্লির ঘটনায় অভিযুক্তদের সাজার দাবি করেই এ মিছিল দায় সারেনি। তাই পোস্টার, ‘লজ্জা ধর্ষকদের, ধর্ষিতাদের নয়’। এবং স্লোগান,
এই মিছিল, সেই মিছিল
যেই মিছিল দিচ্ছে ডাক
পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক।

শীতের রাতে আপাদমস্তক জ্যাকেট-টুপিতে ঢাকা ছ’বছরের ‘পুরুষ’ আদিত্যও মিছিলে হাঁটছিল মায়ের হাত ধরে। ও কী বুঝছে, কেন হাঁটছে? আদিত্যের মা কাজরী দত্তের জবাব, ‘‘এটুকু বুঝিয়েছি, একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটা ছোট থেকেই শেখা উচিত।”
আনাড়ি মিছিলের লেজ ও মাথার মধ্যে গতির ভারসাম্য রাখতে কিন্তু হিমশিম খেয়েছেন সংগঠকেরা। মিছিলের ফাঁকে কখনও ঢুকে পড়েছে মদির রাতের বেপরোয়া মোটরবাইক-বাহিনী। সেখানে তখন পুলিশের চিহ্নও নেই। গালিগালাজ-টিটকিরি শুনেও পিছু হটেননি পদাতিকেরা। মোহরকুঞ্জের সামনে একটি বড় গাড়ির আরোহীদের অভব্যতায় পথ আটকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা।
বর্ষশেষের উন্মাদনা সামলাতে হিমশিম পুলিশ। পার্ক স্ট্রিটে।
আবার হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে মাকে ধমকেছেন কোনও সদ্য-লায়েক কলেজছাত্রী। ‘উফ্ মা, খেয়েছি...এখন কথা বলতে পারছি না। আমরা কী করছি, তা টিভিতে দেখে নিও!” পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের বিচার চেয়ে পোস্টার দেখা গিয়েছে ধর্মতলায়। পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড নিয়ে কটাক্ষের জেরে বিতর্কিত নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকেও দেখা গিয়েছে গড়িয়াহাটের মোড়ে, অন্য একটি অবস্থান-বিক্ষোভে।
সামগ্রিক ভাবে বর্ষবরণের মেজাজটা আলাদা কিছু নয়। রাত একটাতেও পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ সরগরম। সান্তাক্লজ টুপি ও রঙিন শিংধারী জনতার উচ্ছ্বাস। চেনা-অচেনা না দেখে রাস্তায় জনে জনে হাত মিলিয়ে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সম্ভাষণ। পানীয়ের প্রভাবে বাড়াবাড়ির অভিযোগও কিছু উঠেছে। অভব্য আচরণ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন এলাকায় ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
শুধু গণহুল্লোড়ে গা না-ভাসিয়ে বিশেষ রাতে অন্য রকম সচেতনতার কথাও কিন্তু বলে গেল কলকাতা।

—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.