|
|
|
|
এক ব্যাগ ফুর্তি |
হালকা ওজনের ব্যাগ নিয়ে ফুরফুরে বেড়ানো।
এটাই এখন স্টাইল।
লিখছেন অদিতি ভাদুড়ি |
শীত ফুরোতে এখনও ঢের দেরি। বেড়ানোর তুঙ্গ মুহূর্ত হাজির।
সে কথা ভেবেই সিকিম বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানটা করে ফেলেছে জিনিয়া।
জাস্ট ব্যাগ গোছানোর অপেক্ষা। তবে যে-সে ব্যাগ নয়। পোশাকের সঙ্গে মানানসই না হলে বেড়াবার মজাটাই তো মাটি!
সাতসকালেই ফোনে মিমির চিৎকারে ঘুমটা চটে গেল জিনিয়ার। ‘‘কী রে, ঘুম ভেঙে ওঠ এ বার! হাওড়ায় ক’টায় আসছিস? বেশি লেট করলে কিন্তু ট্রেনটা বেকার মিস করবি।” সত্যিই তো! আজ ওরা পাঁচ বন্ধু মিলে বেড়াতে যাচ্ছে সিকিম। ব্যাগই তো গোছানো হয়নি এখনও! জিনিয়া ভাবল, স্টোর রুমে পড়ে থাকা ট্র্যাভেলার্স ব্যাগটাই নেবে।
রাতে হাওড়া পৌঁছতেই চেপে ধরল বন্ধুরা। ‘‘আরে জিনি, আর কোনও ব্যাগ পেলি না নেওয়ার মতো! এরকম একটা ফসিল টাইপ আনস্মার্ট ঠাকুমার ঝুলি?’’ হাসিতে ফেটে পড়ল ওরা।
আপনারাও কিন্তু জিনিয়ার মতো এই ভুলটা করবেন না।
আজকের জেনারেশনের কাছে জামা, জুতো, ব্যাগ সবই কিন্তু ফ্যাশনদুরস্ত হওয়া চাই। তাও যে কোনও জিনিস নয়। ‘লেটেস্ট থিং ইজ অলওয়েজ ইন।’
এসপ্ল্যানেড থেকে নিউ মার্কেট যেতে গোটা ফুটপাথ জুড়ে কেতাদুরস্ত সব ব্যাগের দোকান। দেখতে দারুণ। পকেট ফ্রেন্ডলি-ও।
লম্বা অফিস আওয়ার্স আর টানা কম্পিউটারে কাজ। কাজেই ‘ফ্রোজেন শোল্ডার’ তো ইদানীং রোজনামচা ।
এই সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র
উপায় হতে পারে লাইটওয়েট ট্রলি ব্যাগের ব্যবহার।
লিন্ডসে স্ট্রিটের এক খ্যাতনামা ট্র্যাভেল ব্যাগ বিপণির সেলস ম্যানেজার বললেন, “ টিন-রা তো বটেই, যে কোনও এজ-এর কাস্টমাররাই এখন ফ্যাশনেবল ট্র্যাভেল ব্যাগ কিনতে চাইছেন। সবচেয়ে সুবিধে ব্যাগগুলো খুব লাইট ওয়েট আর ট্র্যাভেল ফ্রেন্ডলি।” দামি ট্র্যাভেল ব্যাগের দাম ঘোরাফেরা করছে তিন হাজার থেকে তিরিশ হাজারের আশেপাশে। প্রীতি বেরোচ্ছিলেন এরকমই দামি রেঞ্জের এক ট্রলি ব্যাগ হাতে। বললেন, “ব্যাগগুলো দেখতে দারুণ স্মার্ট। তবে খুব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হওয়ায় দাম বেশ বেশি।” আর প্রতিটা ব্যাগের রং এক্কেবারে এক্সক্লুসিভ । গর্জাস রেড থেকে বার্গ্যান্ডি, ডিপ ব্লু থেকে সি ব্লু। পুরো রঙের হোলি।
|
|
ফুটপাথের স্টলগুলোর কালেকশনেও রয়েছে দারুণ সব ট্র্যাভেল ব্যাগ। আর দামের দিক থেকেও অসম্ভব সস্তা। সাধারণ পোর্টেবল ব্যাগ থেকে শুরু করে ট্রলি ব্যাগ। নানান রং আর ডিজাইনে কেউ কারও থেকে কম যায় না। ‘ডাফল’ ব্যাগও হিট এ বার। দাম শুরু ৮০০ টাকা থেকে। আর হার্ড ট্রলি পিকচারেই নেই। অনেকেই বললেন হার্ড ট্রলি নাকি বেড়ানোর লিস্ট থেকে একদমই অবসোলিট হয়ে গিয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা পল্লবীর সঙ্গে। সবে বিয়ে হয়েছে। ‘‘কয়েক দিন বাদে হানিমুনে যাব। বেড়াতে গেলে হালকা-পুলকা ব্যাগ না নিলে যে কী ঝামেলা!” এও জানাল, ব্র্যান্ডেড ট্র্যাভেল ব্যাগ কেনার ব্যাপারে কোনও ফ্যাসিনেশন ওর নেই। তবু ‘আমেরিকান ট্যুরিস্টার’, ‘ভি আই পি’ বা ‘স্যামসোনাইট’-এর শোরুমে ঢুঁ মারবে একবার। দামে পোষালে কিনে নিতেও পারে।
যাদবপুর ইউনিভার্সিটির রোহন বা প্রেসিডেন্সির অহনার চাই ঝাক্কাস দেখতে ট্র্যাভেল ব্যাগ। আর এই ব্যাগগুলো পাওয়ার বেস্ট ঠিকানা ওদের মতে নিউ মার্কেট লিন্ডসে স্ট্রিট। ‘‘এর থেকে ভাল ডেস্টিনেশন আর কীই বা আছে? ওই যে চেরি রেড কালারের সফ্ট ট্রলি ব্যাগ বেরিয়েছে না? ওটা তো এ বার কিনবই কিনব।”
কথা হল তন্ময় বসুর সঙ্গেও। সদ্যপ্রয়াত পণ্ডিত রবিশঙ্করের দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেশে-বিদেশে ঘোরার প্রচুর অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। ‘‘বিদেশে ঘোরার সময় তো এয়ারপোর্টের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ পাউন্ড ওজনের ব্যাগ ক্যারি করি। আর মিউজিক ইন্সট্রুমেন্টসগুলো যায় কাস্টম মেড কভারে। ওজনে খুবই হালকা।’’ বললেন তিনি। আর এমনিতে ঘোরার জন্য তাঁর পছন্দ ব্র্যান্ডেড লাইটওয়েট ট্রলি ব্যাগ। “ট্রলি ব্যাগগুলোয় চাকা থাকায় ক্যারি করার কোনও ঝামেলাই নেই। তবে চেক করে নিই ওপরে যেন হার্ড কভার থাকে। অবশ্যই বেশি নিরাপত্তার খাতিরে।” বললেন তন্ময়বাবু।
অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক বা সেলেব ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। ওঁদের একটাই কথা। ‘ট্র্যাভেল লাইট’। তাতে বেড়ানোটাকে পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করা যায়।
“ট্রলি ব্যাগের হুইলস আর হ্যান্ডেল অবশ্যই দেখে নিই। চওড়া হ্যান্ডেলে সুবিধে বেশি। আর স্মুদ রাইডের জন্য চাকাগুলো ভাল হওয়া দরকার,” বললেন অগ্নিমিত্রা। আর বিদেশে ঘুরতে নেন স্লিং ব্যাগ বা রুকস্যাক। এতে যেমন ল্যাপটপ নেওয়া যায় তেমনি তিন চার দিনের মতো জামাকাপড়ও গুছিয়ে ফেলা যায়। তিনি অবশ্য ব্র্যান্ডেড ব্যাগই ব্যবহার করেন বেশি।
কোয়েল আবার ব্র্যান্ড কী নন-ব্র্যান্ড, দু’য়েতেই স্বচ্ছন্দ।
“আমার ট্রলি ব্যাগ অনেকগুলো আছে। বিদেশ থেকেও কিনেছি কিছু। বাইরে গেলে তো ট্রলি ছাড়া ভাবাই যায় না। তবে স্লিং ব্যাগও নিই খুব। হাতদুটোকে ফ্রি রাখা যায়।” কোয়েলের ঝটিতি উত্তর।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পারেটিভ লিটারেচার’ ডিপার্টমেন্ট-এর প্রফেসর ঈপ্সিতা চন্দের ট্র্যাভেল ব্যাগ নিয়ে এত মাথাব্যথা নেই। ‘‘বড়সড় একটা ব্র্যান্ডেড ট্রলি ব্যাগ আছে। লং ট্যুর-এ গেলে কাজে লাগে। আর এমনি যে ব্যাগ নিয়ে ঘোরাঘুরি করি তার এত কেতা নেই।” ওনার স্মার্ট উত্তর।
|
ব্যাগের চেকলিস্ট |
• চেষ্টা করুন হালকা ওজনের ব্যাগ নিতে। মজাসে ঘুরতে পারবেন তা হলে।
• ব্যাগে একাধিক খোপ থাকা খুবই জরুরি। একসঙ্গে বেশ কিছু দরকারি জিনিস পুরে নিন। বের করুন প্রয়োজনমতো।
• কেনার সময় দেখে নিন সাধের ব্যাগে কোনও ফাটা আছে কি না বা লক্ ঠিক আছে কি না। সেলাই ঠিক আছে কি না। কিছু গোলমাল থাকলে কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে বিপদে পড়বেন আপনিই। |
|
|
|
|
|
|