হুল্লোড়
টিমে নিয়মিত হওয়ার টার্গেটটা বড় চিপ

ভারতীয় দলে এই মুহূর্তে আপনার যা অবস্থান। রবিচন্দ্রন অশ্বিন যেন এক ইয়ুথ আইকন। তাঁর দায়িত্বের মধ্যে কী পড়ে?
দায়িত্ব বলতে ওই ভাবে আলাদা করে কিছু বলা ডিফিকাল্ট। এখনকার দিনে আমাদের এত খেলতে হয়! কখনও কখনও এক মাসে আমরা দশ-বারোটা ম্যাচ খেলে ফেলি। এত ম্যাচের মধ্যে থাকলে দায়িত্ববোধের বৃহত্তর ছবিটা সব সময় মাথায় রাখা সম্ভব হয় না। ব্যাপারটা হয়ে যায় দৈনন্দিন। আমাদের পরীক্ষাটাই তো হয়ে যায় দৈনন্দিন।

টার্গেটটাও কি দৈনন্দিন হয়ে যায়?
আমার ক্ষেত্রে শুরুর দিকে ওটা ছিল বার্ষিক। ২০০৯-তে ভারতীয় দলে ঢোকার পর বছর পিছু সেট করতাম। আজ ২০১৩-র শুরুতে খুব তৃপ্ত ভাবে বলতে পারি গত তিন বছরের টার্গেটগুলো সব পূরণ করতে পেরেছি। ঠিক তিনটে বছরই যা যা লক্ষ্য ছিল অ্যাচিভ করতে পেরেছি।

কী টার্গেট ছিল? ভারতীয় দলে নিয়মিত হওয়া?
নিয়মিত হওয়া টার্গেটটা বড় চিপ।

তা হলে? পারফর্মার হয়ে ওঠা?
একটা কথা আছে না পারফর্ম করো নইলে জাহান্নমে যাও। ছোটমুখে বড় শোনাতে পারে। কিন্তু আমি কথাটায় খুব বিশ্বাসী। এক্সেলেন্সকে যদি প্রাণপণ ধাওয়া না করেন, বড় পর্যায়ের মঞ্চ থেকে খুব দ্রুতই আপনার জঙ্গলযাত্রা অবশম্ভাবী। আমি এটা শিখেছি পড়াশোনা আর ক্রিকেট দুটোর মধ্যে খাবি খেতে খেতে। দুটোকে ব্যালেন্স করতে গিয়ে বারবার নাকানিচোবানি খেয়ে।

ব্যাখ্যা করুন।
ছোট থেকেই সবাই আমায় বলত দারুণ সম্ভাবনাময়। কিন্তু শুরুতে মোটেও আমি অফ-স্পিনার ছিলাম না। পেস বল করতাম আর ব্যাটিং। তামিলনাড়ুর হয়ে যে ম্যাচে আমার ডেবিউ হয় তাতে ব্যাট আর বল দুটোতেই ওপেন করেছিলাম। এর পর আস্তে আস্তে চাকা নানা রকমভাবে ঘুরতে থাকে। শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। পোলিও নিয়ে ছোটবেলায় আমার সমস্যা ছিল। পা দু’টোতে তাই নানান রকম ঝামেলা হত। ছোটবেলায় আমাকে পোলিও চাইল্ড হিসাবেই দেখা হত। ওই পা নিয়ে মিডিয়াম পেস বোলার হওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার নেশা ছিল যা-ই করি না কেন স্পেশালিস্ট হতে হবে। আমি তখন ঠিক করি ব্যাটস্ম্যান হব। আর খুব দক্ষ ক্লোজ-ইন ফিল্ডার। সমস্যা হচ্ছিল যে টিম ফিল্ডিং করার সময় টানা পঞ্চাশ ওভার মাঠে কাটাতে আমি বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। সুইপার কভার বা লং অফে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? তখন আমি ঠিক করি না, বল আমায় করতেই হবে। যাতে খেলার ইনভল্ভমেন্ট থেকে হারিয়ে না যাই।

সেই শুরু হল অফ স্পিন!
না শুরু হল লেগ স্পিন। শেন ওয়ার্ন একটা বিশাল বড় প্রেরণা ছিলেন। লেগ স্পিনার হিসাবে বল নিয়ে আমি নানা রকম কারুকার্য করাও শুরু করি। যাকে বলে চমক-ঠমক। কিন্তু লেগ স্পিনারের জীবনও আমার ভাল লাগছিল না।

কেন? প্রচুর মার খাচ্ছিলেন?
না, মার খাইনি। বরং প্রচুর উইকেট পাচ্ছিলাম। কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছিল লেগ স্পিনার ম্যাচের অনেক পরে আসে। তা-ও ক্যাপ্টেন তাকে কী ভাবে হ্যান্ডেল করবে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তো হঠাৎ একদিন সকালে আমি নেটে এসে অফ স্পিনার বনে গেলাম। কোচ আমাকে এবার ডাকলেন। ডেকে বললেন, ‘‘এটাই কি ফাইনাল? নাকি আরও চেঞ্জ করবে?’’

আপনার বয়স কত তখন?
ষোলো।

কোচ নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছিলেন?
ঠাট্টা ঠিক নয়। উনি বিরক্ত হয়ে বলতে চাইছিলেন, যা করবে এ বার একটায় মন দাও। বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি স্কুল বদলাই ক্রিকেটের জন্য। নতুন যে স্কুলে গেলাম, সেখানে অফ স্পিন করতে শুরু করি। কয়েকটা হ্যাটট্রিক করি। এমনকী প্রথম থেকেই আমাকে শেষ ওভারটা করানো হত। মাত্র পাঁচ-ছ’ রান ডিফেন্ড করতাম। তাতেও ধারাবাহিক জিতিয়েছি। মনে করতে পারি না তামিলনাড়ুর হয়ে খেলার আগে আমার দশ ওভারে ২০ রানের বেশি কখনও গেছে বলে।

আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে নিরানব্বই সালের দ্রাবিড় বা কুম্বলের সঙ্গে কথা বলছি। ওঁরা-ও ক্রিকেটের সঙ্গে পড়াশুনাটা চালাতেন। আর বলতেন, “এক্সেলেন্ট না হতে পারলে কোনও মানে হয় না।”
একদম তাই। দারুণ ভাল ভাবে খেলতে না পারলে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। রাহুল ভাইকে আমি অস্ট্রেলিয়ায় খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমারা একসঙ্গে সাবওয়ে স্যান্ডউইচ কিনে খেতাম। রাহুল ভাইকে দেখে শিখেছি কী ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সচিনকে সরিয়ে রাখলে রাহুল ভাই-ই আমার অল টাইম ফেভারিট।

নাদালের অ্যাটিচিউডটা আমার অসাধারণ লাগে।
ওঁর ফিটনেস, প্রতিজ্ঞা, প্রতিটা বলের জন্য যাওয়া... অভিভূত করার মতো।

সচিন-ই কি আপনার আদর্শ?

আদর্শ র‌্যাফায়েল নাদাল। আমি নিজে টেনিস খেলতে খুব ভালবাসি বলে নয়। নাদালের অ্যাটিচিউডটা আমার অসাধারণ লাগে। ওঁর ফিটনেস, ওঁর প্রতিজ্ঞা, প্রতিটা বলের জন্য যাওয়া... অভিভূত করার মতো। নাদালের খেলা থেকে একটা জিনিস ঠিকরে বেরোয়, জীবন এখনও শেষ হয়নি। সেটা আমার কাছে ভীষণ ইন্সপায়ারিং।

তা হলে হঠাৎ সচিনের কথা তুললেন?
সচিন আমার জীবনের এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। ভারতীয় দলে যে দু’বছর ওঁর সঙ্গে কাটাচ্ছি সেটা আমার নিজের কাছে রূপকথার মতো। ছোটবেলায় যখন দেশের হয়ে খেলব লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, আশেপাশে সবাই বলত, তুই কি পাগল? ক্রিকেট কোনও দিন তোকে ডাল-রুটি জোগাতে পারবে? আমি মনে মনে বলতাম সবাইকে ভুল প্রমাণ করব। করেই ছাড়ব। কিন্তু সচিনের সঙ্গে খেলতে পারব এই বিশ্বাস আমারও ছিল না। আমি মনে মনে দুঃখ পেতাম আমাদের এত বেশি এজ গ্যাপ যে আমি ঢোকার অনেক আগেই ও বেরিয়ে যাবে। সচিন যে তেইশ বছর ধরে নিজের ক্রিকেট জীবনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এটা অবিশ্বাস্য! উনি গোটা পৃথিবীকে দেখাচ্ছেন, চাইলে একটা স্পোর্টসম্যান নিজের কেরিয়ারকে কত দূর স্ট্রেচ করতে পারে। একবার ভেবে দেখুন সচিনের ফর্টি পার্সেন্ট ক্রিকেটজীবনও যদি কেউ করে দেখাতে পারে, সে ন’-দশ বছর ক্রিকেট খেলে ফেলবে। তাকে বলা হবে দারুণ করেছে। এটা হল পৃথিবীর জন্য সচিন। আর আমি যাঁকে কাছ থেকে দেখেছি তিনি আরও বিহ্বল করে দেওয়ার মতো! এখনও প্রত্যেকটা ম্যাচের জন্য সমান তীব্রতা নিয়ে তৈরি হন। সেই প্রিপারেশন দেখলে মনে হবে যেন কালই প্রথম ম্যাচ খেলছেন। সেই ম্যাচগুলোতে তিনি সফল হলেন না হলেন না, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি শুধু ওঁর প্রস্তুতি আকন্ঠ গিলেই মুগ্ধ।

সচিন ছিলেন জেনারেশন এক্স ক্রিকেটার। আপনি, বিরাট কোহলি এঁরা জেনারেশন ওয়াই। দৃষ্টিভঙ্গিতে তফাত কোথায়?
সেদিন স্টার ক্রিকেটে ’৯২ বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখছিলাম। দেখে মনে মনে ভাবছিলাম, জেন এক্স ক্রিকেটার হিসাবে সচিন কী ভাবে নব্বই দশকের শুরুতেই লিড নিয়েছিলেন! দেখছিলাম অন্যরা যখন আগের প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। যখন স্পিনারকে সেই স্টেপ আউট করেই মারতে যাচ্ছেন, তখন সচিন ব্যাকফুটে গিয়ে স্পিনারকে কাট করছেন, পুল মারছেন। আমির সোহেলকে তুলে দিচ্ছেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। লেংথ জাজ করার ব্যাপারটাই অন্য আঙ্গিকে নিয়ে গেলেন। ব্যাটিংও একটা অন্য লেভেলে চলে গেল। ফার্স্ট মুভারের অ্যাডভান্টেজটা সেই যুগে পুরোপুরি নিয়ে নিয়েছিলেন সচিন।

এ বার জেনারেশন ওয়াই কী করবে?
জেনারেশন ওয়াই ক্রিকেটারকে অনেক সোচ্চার হতে হবে। তাকে ডরভয়হীন না হয়ে সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে হবে। বলতে হবে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ভাবে সাপোর্ট স্টাফ রাখার সময় হয়েছে। তার এখন নিজস্ব ট্রেনার চাই। নিজস্ব ভিডিও অ্যানালিস্ট লাগবে। নিজস্ব কোচ সব সময় হাতের কাছে থাকা চাই।
এত ক্রিকেট খেলতে হচ্ছে এখন যে মাঠের দুটো বাজে দিন শুধরোনোর সময়টাই পাওয়া যায় না। সব সময় নিজের টিমের কাছে ফিডব্যাক নেওয়াটা জরুরি যে ভুলটা কোথায় হচ্ছে।


জেনারেশন ওয়াইকে কি অনেক বেশি আউট অব দ্য বক্স ভাবতে হবে? প্রচলিত ভাবনার বাইরে গিয়ে?
একদম তাই। আর সেজন্যই নিজস্ব সাপোর্ট স্টাফটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.