ব্যাখ্যা করুন।
ছোট থেকেই সবাই আমায় বলত দারুণ সম্ভাবনাময়। কিন্তু শুরুতে মোটেও আমি অফ-স্পিনার ছিলাম না। পেস বল করতাম আর ব্যাটিং। তামিলনাড়ুর হয়ে যে ম্যাচে আমার ডেবিউ হয় তাতে ব্যাট আর বল দুটোতেই ওপেন করেছিলাম। এর পর আস্তে আস্তে চাকা নানা রকমভাবে ঘুরতে থাকে। শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। পোলিও নিয়ে ছোটবেলায় আমার সমস্যা ছিল। পা দু’টোতে তাই নানান রকম ঝামেলা হত। ছোটবেলায় আমাকে পোলিও চাইল্ড হিসাবেই দেখা হত। ওই পা নিয়ে মিডিয়াম পেস বোলার হওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার নেশা ছিল যা-ই করি না কেন স্পেশালিস্ট হতে হবে। আমি তখন ঠিক করি ব্যাটস্ম্যান হব। আর খুব দক্ষ ক্লোজ-ইন ফিল্ডার। সমস্যা হচ্ছিল যে টিম ফিল্ডিং করার সময় টানা পঞ্চাশ ওভার মাঠে কাটাতে আমি বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। সুইপার কভার বা
লং অফে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? তখন আমি ঠিক করি না, বল আমায় করতেই হবে। যাতে খেলার ইনভল্ভমেন্ট থেকে হারিয়ে
না যাই।
সেই শুরু হল অফ স্পিন!
না শুরু হল লেগ স্পিন। শেন ওয়ার্ন একটা বিশাল বড় প্রেরণা ছিলেন। লেগ স্পিনার হিসাবে বল নিয়ে আমি নানা রকম কারুকার্য করাও শুরু করি। যাকে বলে চমক-ঠমক। কিন্তু লেগ স্পিনারের জীবনও আমার ভাল লাগছিল না।
কেন? প্রচুর মার খাচ্ছিলেন?
না, মার খাইনি। বরং প্রচুর উইকেট পাচ্ছিলাম। কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছিল লেগ স্পিনার ম্যাচের অনেক পরে আসে। তা-ও ক্যাপ্টেন তাকে কী ভাবে হ্যান্ডেল করবে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তো হঠাৎ একদিন সকালে আমি নেটে এসে অফ স্পিনার বনে গেলাম। কোচ আমাকে এবার ডাকলেন। ডেকে বললেন, ‘‘এটাই কি ফাইনাল? নাকি আরও চেঞ্জ করবে?’’
আপনার বয়স কত তখন?
ষোলো।
কোচ নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছিলেন?
ঠাট্টা ঠিক নয়। উনি বিরক্ত হয়ে বলতে চাইছিলেন, যা করবে এ বার একটায় মন দাও। বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি স্কুল বদলাই ক্রিকেটের জন্য। নতুন যে স্কুলে গেলাম, সেখানে অফ স্পিন করতে শুরু করি। কয়েকটা হ্যাটট্রিক করি। এমনকী প্রথম থেকেই আমাকে শেষ ওভারটা করানো হত। মাত্র পাঁচ-ছ’ রান ডিফেন্ড করতাম। তাতেও ধারাবাহিক জিতিয়েছি। মনে করতে পারি না তামিলনাড়ুর হয়ে খেলার আগে আমার দশ ওভারে ২০ রানের বেশি কখনও গেছে বলে।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে নিরানব্বই সালের দ্রাবিড় বা কুম্বলের সঙ্গে কথা বলছি। ওঁরা-ও ক্রিকেটের সঙ্গে পড়াশুনাটা চালাতেন। আর বলতেন, “এক্সেলেন্ট না হতে পারলে কোনও মানে হয় না।”
একদম তাই। দারুণ ভাল ভাবে খেলতে না পারলে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। রাহুল ভাইকে আমি অস্ট্রেলিয়ায় খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমারা একসঙ্গে সাবওয়ে স্যান্ডউইচ কিনে খেতাম। রাহুল ভাইকে দেখে শিখেছি কী ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সচিনকে সরিয়ে রাখলে রাহুল ভাই-ই আমার অল টাইম ফেভারিট। |