বাবা জ্ঞান দিয়ো না
ইয়ারি দোস্তি অ্যান্ড মোর

সৃজিত মুখোপাধ্যায়
মাপা ও চাপা। তবে প্রফেশনাল লক্ষ্যেই সেটা। প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’ মারকাটারি রেজাল্ট করে ফেলায় বেচারার চাপ একটু বেশি। দুম করে ‘হিট’ বা ‘নাম্বার ওয়ান’ পরিচালক হয়ে যাওয়ায় বাকি লোকজন কিন্তু আড়চোখে মাপে ওকে। আর হিংসেও করে। তাতে বেচারা মাঝে মাঝে একটু উত্তেজিত হয়ে ‘রিঅ্যাক্ট’ করে ফেলে। আড্ডাবাজ, তবে সিনেমার চাপে একটু ‘গম্ভীর টাইপ অ্যাটি’ দিচ্ছে মাঝেমাঝে। শহুরে জনগণ দুঃখ, কষ্ট, রাগ, অভিমানের কী মশালা চায় আধুনিক সিনেমায় সেটা ও ভাল করে জানে। যতই চাপ হোক, সৃজিত কিন্তু জন্ম-প্রেমিক। হিংসা হয় ওকে তাই। তবে আমার পরিচালক হয়ে ওঠাতে ওর হাত সবথেকে বেশি। ওর নিজের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ ‘ডজন’ এই দেড় বছরে তিন বার ডেট নিয়ে তিন বার ক্যানসেল করেছে। সেই রাগে ‘নিকুচি করেছে’ বলে আমিও পরিচালক সেজেছি। আয় এ বার!!!
পরমব্রত
যোগ্যতা আর বুদ্ধি দিয়ে সফল হওয়াটা পরমের কাছ থেকে শেখার মতো। নিজের বিশ্বাস ও পছন্দগুলোকে শ্রেষ্ঠ ভাবে। তাই বেশ কিছু মানুষ ওকে ভুল করে নাক উঁচু বলে। বেশ করে পরম। ওর নাক উঁচুটা যেমন ওর জন্মগত অধিকার। তেমনি আমার বোঁচা নাকটাও আমার জন্মগত সিদ্ধান্ত। দশ বছর আমাদের বন্ধুত্ব। কিন্তু আজও একটা প্রশ্ন আমার রয়েই গেল, ‘ঋত্বিক’ বাড়ির ছেলে হয়ে ‘সত্যজিৎ’ টাইপ অ্যাটিটিউডটা ব্যাল্যান্স করল কী করে?

রাজ চক্রবর্তী
২০০৩। ভাড়াবাড়ি। মেঝেতে একটা থালা থেকে দু’জন দু’দিকে বসে ভাত খাচ্ছে। কিংবা মেসের একটা জলচৌকিতে একটাই বালিশ। সে বালিশে দুটো মাথা ঘুমের ঘোরে ঠোক্কর খাচ্ছে। একটা রুডির। একটা শিবুর। সেই ঘুমন্ত শিবুই ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে আজ রাজ চক্রবর্তী। সফল পরিচালক হতে গেলে সৃজনশীল হওয়া ছাড়াও ‘ম্যানেজমেন্ট’ জানাটাও একটা বিরাট ফ্যাক্টর। রাজ সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর অসাধারণ সাফল্যের পর প্রায় দু’বছর এক থালায় ভাত খাওয়া শিবুর সঙ্গে রুডির কথা বন্ধ ছিল। আমার মনে হয়েছিল ওর সরলতার সুযোগে বেশ কিছু মানুষ ওকে শিবু থেকে ‘সফল রাজ চক্রবর্তীর’ অ্যাটিটিউড শেখাচ্ছে এবং রাজও তেমন চলছে। দেখা হলে অভিমানে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতাম না। কিন্তু জানি কষ্ট পেতাম দুজনেই। তার পর রাজু স্বাধীন হল। ঘেরাটোপের বাইরে এসে নিজের মতো কথা বলতে ও মতামত রাখতে শুরু করল। আমিও আমার শিবুকে পেলাম। আবার বন্ধুত্ব জুড়ল। একটাই বড় আশা ওর ওপর। রাজ চক্রবর্তী সিনেমা বানাক ‘রাজু বা শিবুর বিশ্বাসে’। তাহলেই আবার সত্যিকারের একটা ভাল হিট ছবি পাবে টলিউড। ইদানীং দেখা হলেই আমার সানগ্লাস চুরি করে। এ জন্য ওর জেল হওয়া উচিত। মা কালী।
বিরসা দাশগুপ্ত
আমার দেখা যে ক’জন বন্ধু সত্যিই সিনেমাটা বোঝে, তার মধ্যে প্রথম সারিতেই বিরসা। শান্ত। ভাবুক। ক্ষতিকর নয়। ওর প্রথম সিনেমা ‘০৩৩’ বা ‘জানি দেখা হবে’, দু’টোই হিট হতে পারত। কিন্তু দু’টোর মধ্যেই মানবিক হৃদয়টা বড্ড কম লেগেছে আমার। কারিগরি ক্ষমতাটাই যেন সবচেয়ে বেশি। আমার বিশ্বাস ওর ‘অভিশপ্ত নাইটি’ সিনেমাটা খুব ভাল ফল করবে বক্স অফিসে। খুব রাগ হয়েছিল যখন ‘অভিশপ্ত নাইটি’-তে আমার জন্য একটা পুঁচকি রোল অফার করেছিল। কিন্তু খুশি হয়েছিলাম ও ভেঙ্কটেশ ফিল্মের সঙ্গে এত বড় একটা প্রজেক্ট করছে বলে। আমার এও বিশ্বাস এর পর যখন ও ‘দাগী পায়জামা’ সিনেমাটা বানাবে, আমাকেই লিড রোলে নেবে। মাঝে মাঝে ‘চোরের ওপর রাগ করে ভুঁয়ে ভাত খাওয়া’-র মতো ‘ওরা ঘোড়ার ডিম ফিল্ম বোঝে’ বলে গাল ফুলিয়ে অভিমানে বসে থাকে। তবে আশার কথা, ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এসএমএস প্রেরক’ পুরস্কারটাও ছিনিয়ে নিয়েছে। ওর রাগ বা অভিমান ভরা যে কোনও একটা এসএমএস সাইজে একটা ২ ঘণ্টার চিত্রনাট্যের থেকেও দীর্ঘ।
তনুশ্রী
আমার চেনা সাত কোটি পঞ্চান্ন হাজার চেক, ক্যাশ বা খুচরো বান্ধবীর মধ্যে যে মানুষটাকে আমি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি সে হল তনুশ্রী। প্রয়োজনীয় বুদ্ধি, সঠিক সিদ্ধান্ত, নির্লোভ মতামত আর ক্লান্তিহীন পরিশ্রম ওকে রোজ নম্বর ওয়ান হিরোইনদের তালিকায় ঠেলছে একটু একটু করে। অনেক মডেলই একটু ‘মেঘে মেঘে বেলা’ বেড়ে গেলেই গ্ল্যামার ধরে রাখতে অ্যাক্টিংয়ে কল্কে খোঁজে। তার আগে, “অ্যাম গো... আই হেট পচা বাংলা ফিল্ম, ইউ নো...” টাইপের বাতেলা করে। তনুশ্রী তেমনটা ছিল না কোনও দিনই। তনুশ্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বটা না হলে, চেহারা সর্বস্ব মডেলদের অ্যাক্টিংয়ের বুদ্ধি যে শুধু হাঁটুতেই থাকে এই ধারণাটা ভাঙত না আমার। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের পরিবার চালানোর কঠিন মুহূর্তগুলো ওকে আরও বেশি যোগ্য করেছে সব দিক থেকে। কিন্তু এত টানাটানিতেও ছ’ ফুট লম্বা হল না আমার হাইটটা। ফলে মালাবদল অবধি পৌঁছচ্ছে না বন্ধুত্বটা। সাইজে কুলোচ্ছে না যে! সাইজ ডাজ ম্যাটার ইয়ার!
পাওলি
আমার ইন্ডাস্ট্রির ‘ট্যান বিউটি’। ধারালো চোখ-নাক, সাপের মতো হিলহিলে শরীর আর ‘বিশ্বাসী অভিনয়ে’ নিজের একটা স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড তৈরি করে ফেলেছে পাওলি। টেলিভিশনের অত্যন্ত সাধারণ মানের অভিনেত্রী থেকে ফিল্মের প্রথম সারির অভিনেত্রী হয়ে ওঠার রাস্তাটা কোনও দিন ফুল বিছানো ছিল না। টলিউডের তুলতুলে নরম ও ফ্যাটফ্যাটে ফরসা হিরোইনের গতানুগতিক কনসেপ্টটা ভেঙে চুরে দিয়েছে পাওলি ‘কালবেলা’ থেকেই। তবে আজকের সময়টা ‘কালবেলা’র থেকে একটু নড়বড়ে ওর। ‘মাশরুম’য়ের স্পাইসি প্রিপারেশনটা ‘হেট স্টোরি’ হয়ে গেল। খাবারটা ‘হট’ হলেও ‘হিট’ হল না। তবে আমার বিশ্বাস পাওলির দম ফুরিয়ে যাবার নয়।
আবির
যে সব বাবা নিজের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে জেদি মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন, কিন্তু মেয়ে গোঁ ধরে ‘না’ বলছে। মেয়েদের বলুন পাত্রের নাম আবির চ্যাটার্জি। ব্যাস্, দেখবেন মেয়ে নিজেই লাল বোনারসি পরে, কপালে চন্দন ঘষে পাত্রের ঘরে টিং টং করে বেল বাজাচ্ছে মালা হাতে!
আজকের জিলিপির বাজারে একমাত্র মন-শরীরে সৎ শুভ্রতার চমক আবির। প্রবল প্রকাশিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা হুড়োহুড়ি ছাড়াই গুটিগুটি পায়ে গ্রাম ও শহরে হানা দিচ্ছে ও। ‘মনোপলি’ পরমব্রত’র নিঃশব্দ প্রতিদ্বন্দ্বী। কারও বিরূদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, না ঈর্ষা। ক্রমশ গভীর ও শক্তিশালী হচ্ছে আবিরের ‘স্ক্রিন-প্রেজেন্স’।
কিন্তু আমার কু’মনে একটা অবিশ্বাস খালি খোঁচা মারে। যে ছেলে সারা গায়ে অনিল কপূরের মতো বড় বড় লোম নিয়ে বিখ্যাত হয় সারা টলিউডে, তার ছবির নাম ব্যোমকেশ কেন হল? ‘লোমকেশ’ হল না কেন?
অপর্ণা সেন, মুনমুন সেন, রূপা, ঋতুপর্ণা
হাজার হাজার সুন্দরী আসে যায় ইন্ডাস্ট্রিতে, কেউ এক, কেউ একাশি বছর রাজত্ব করে মানুষের মনে। কিন্তু স্বপ্নের নায়িকারা বন্ধু হতে পারেআর ক’জন? আমার এখনকার সমস্ত নায়িকা বন্ধু আমার চর্মচক্ষুর সামনে দিনরাত থাকলেও ওই চারজনের উপর আমার যাবতীয় দুর্বলতা সব চেয়ে বেশি। জানুয়ারির এই কনকনে ঠান্ডায় কাথা, কম্বল, চাদর ছাড়াই একমাস কাটিয়ে দিতে পারি হিমালয়ের চূড়ায় হাসিহাসি মুখে। যদি সঙ্গে এই চারজনের মধ্যে যে কোনও একজন বন্ধু থাকে।

মৈনাক
কলকাতা শহরে যে কটা চেহারা হাজার ভিড়েও হারায় না তেমনই একটা মৈনাক। হেলে পড়া ঝাউপাতার মতো চুল, চোখে ভুগোল দিদিমণির মতো পাতলা চশমা, বড় মাইমার মতো নিষ্পাপ মুখ। বিশ্বাস করা শক্ত যে মনের মধ্যে মিষ্টি শয়তানির জিলিপির দোকান। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে নিষ্পাপ নারদ একটা। যেটা বিশ্বাস করে না সেটা নিয়ে পিঁয়াজি মারে না ওর সিনেমায়। এত ছুপা রুস্তম বুঝতেই দেয় না। ওর ‘বেডরুমে’ ঢোকে আসলে কে? আরশোলা না টিকটিকি? তারা কী খায়? হোমো না মোমো?
স্বস্তিকা
আমার বেস্ট ‘কিউটি বিউটি’। সুন্দরী নায়িকা যে সু-অভিনেত্রীও হয় তার বড় প্রমাণ স্বস্তিকা। এমন একটা ব্র্যান্ড, এখনও যার প্রতিযোগী টিকতে পারেনি ওর কাছে। বাবার স্টারডমের পরিচয় নিয়ে কেরিয়ার বানাতে চায়নি কোনও দিন। এটা আজও বড্ড ভাল লাগে আমার। ফিল্ম কেরিয়ারে লড়াই আর ব্যক্তিগত জীবন-যুদ্ধের লড়াইওকে দৃঢ় করেছে অনেক কিছুর থেকেই। বাণিজ্যিক ছবির সফল নায়িকা থেকে আজ শহুরে ফিল্মের সফল নায়িকা হবার রাস্তাটা যথেষ্ট কঠিন ছিল ওর। বারবার প্ল্যান বদল, বারবার সোচ্চারে প্রেমিক বদল, অথচ সঙ্গে মেয়েকে একা মানুষ করার কঠিন দায়িত্ব অনায়াসে যে ভাবে সামলায় সেটা নিয়ে হিংসা করে অনেক নায়িকাই ওকে। সব শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে ‘বিন্দাস ভেবলি’-এর একটাই স্লোগান, “তোর পয়সায় খাই? নাকি, তোর পয়সায় ঘুরি? তোর নাটকে ‘সতীর-পুণ্য। আর, আমারটা জোচ্চুরি?’”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.