বিকেল ৪টের পরেই বন্ধ হয়ে যায় প্যাথোলজি, ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক, এমনকী এক্স-রে যন্ত্রও। কর্মীর অভাবে ‘রোগী সহায়তা কেন্দ্র’ বোর্ড লাগানো হলেও তা চালু করা যায় না। এমন চিত্র আসানসোল হাসপাতালের, বেশ কিছু দিন আগেই যাকে মহকুমা থেকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে এখন শয্যার সংখ্যা ২৭০। জেলা হাসপাতাল হওয়ায় যা অন্তত ৪৫০টি হওয়ার কথা। চতুর্থ শ্রেণির ১৫০টি পদের মধ্যে ৮৮টি পদ শূন্য। প্রয়োজনের সময়ে রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করতে পারেন না। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আরও তিন জন চালকের প্রয়োজন। এর ফলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারদের আনা-নেওয়া করা হয়। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে কোনও মুখ্য করণিক নিয়োগ হয়নি। করণিক পদেও শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে তিনটি পদ। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি-র ব্যবস্থা নেই। কারণ, ওই বিভাগে চার জন কর্মীর প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র দু’জন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জরুরি বিভাগে প্রতি পালিতে দু’জন চিকিৎসকের কাজ এক জনকে করতে হয়। জিডিএমও থাকার কথা ১৫ জন। কিন্তু রয়েছেন মাত্র আট জন। এত বড় হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এক জন। তা-ও আবার তিনি দু’মাস পরেই অবসর নেবেন। ওই পদে অবিলম্বে নিয়োগ না হলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। শিশু বিভাগ, অস্থি বিভাগ, শল্য বিভাগ, সাধারণ বিভাগ এবং ব্লাড ব্যাঙ্কেও অবিলম্বে পাঁচ জন চিকিৎসক নিয়োগ জরুরি। ট্রমা সেন্টার নির্মাণের কাজ ২০০৯ সালে শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। |
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির আসানসোল জেলা হাসপাতাল ইউনিটের সম্পাদক সুকান্ত দাসগুপ্তের দাবি, শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ ছাড়া সরকার ঘোষিত পরিষেবার আশ্বাস কোনও দিনই পূরণ করা সম্ভব নয়। তাঁরা চার বছর ধরে এ কথা জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পরিকাঠামোর অভাবে মাইক্রো লেপ্রোস্কপি বিভাগ তৈরি এখনও বিশ বাঁও জলে।
জেলা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হলেও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ পুরোপুরি অরক্ষিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দক্ষিণ দিকের পাঁচিল ভেঙে যাতায়াতের পথ তৈরি করে নিয়েছে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যত্রতত্র গাড়ি রাখা আটকানো সম্ভব হয়নি। দু’বছর আগে হাসপাতালের পুলিশ সেল থেকে এক বন্দিকে তার সঙ্গীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও প্রশাসন চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের দাবি মতো হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ ক্যাম্প চালু করেনি। কয়েক মাস আগেই ফের এক বন্দি শৌচাগারের জানালা ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাকে আবার ধরে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ললিত রায় বলেন, “অনেক বিষয়ে উন্নতি হয়েছে। বাতানুকুল বার্ন ইউনিট এবং এসএনসিইউ চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’জন চিকিৎসক আনার ব্যাপারে সরকারি স্তরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া অন্য শূন্য পদগুলিতেও নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।” |