নিম্ন মানের গজ-ব্যান্ডেজ কেনার অভিযোগ উঠল বীরভূমের স্বাস্থ্য-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, জেলাশাসকের কাছে ফ্যাক্স মাধ্যমে করা ওই অভিযোগপত্রে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত ১৭ ডিসেম্বর জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয় যে, ১৪ ডিসেম্বর সিউড়ি ডিআরএস-এ (ডিস্ট্রিক্ট রির্জাভ স্টোর) অত্যন্ত নিম্ন মানের গজ-ব্যান্ডেজ সরবরাহ করা হয়। যা রোগীদের পক্ষে ক্ষতিকারক। সরবরাহ করা ওই গজ-ব্যাণ্ডেজের মূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। আরও অভিযোগ, এই সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। ওই সমস্ত গজ-ব্যান্ডেজ স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদিত মানের চেয়ে অনেক নিকৃষ্ট।
অভিযোগপত্রে এও দাবি করা হয়েছে, গজ-ব্যন্ডেজে ৪০ ক্রাউন অর্থাৎ সরু সুক্ষ্ম সুতো থাকার কথা। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ২০-৩২ ক্রাউনের মোটা সুতো। যেখানে মুশির্দাবাদের মতো জেলায় স্বাস্থ্য দফতর ৩১ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২,২০০ গজ-ব্যন্ডেজ কিনেছে, সেখানে বীরভূমের মতো ছোট জেলায় গজ-ব্যন্ডেজ কেনা হয়েছে প্রায় ৩০,০০০।
এই সমস্ত মাল সরবরাহ করেছে পিফা তেঁতুলতলা তন্তুবায় সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে উত্তর ২৪ পরগনার একটি সংস্থা। জনৈক দিলীপ সাহা নামে এক ব্যক্তি ওই সোসাইটির নামে নিজের মাল সরবরাহ করেছেন শুধু অর্থের লোভ এবং ‘তন্তুজ’কে বিপদগ্রস্ত করার জন্য। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ওই নিম্নমানের গজ-ব্যান্ডেজ জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ছড়িয়ে পড়বে বলে অভিযোগ। পিফা তেঁতুলতলা তন্তুবাই সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক শুধাংশু মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোঅপারেটিভ ওয়েভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শিখর হালদার বলেন, “‘তন্তুজ’র সদস্য সমিতিগুলির মধ্যে একটি হল পিফা তেঁতুলতলা তন্তুবাই সমবায় সমিতি লিমিটেড। নিয়মানুযায়ী জেলা স্বাস্থ্য দফতর কর্তৃক গজ-ব্যান্ডেজের বরাত পায় তন্তুজ। সেই মতো জেলাভিত্তিক বরাত দিয়ে থাকে তারা। এ ক্ষেত্রেও পিফা তেঁতুলতলা তন্তুবাই সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ৪ হাজার ব্যন্ডেজ ও ৮ হাজার গজের বরাত দিয়েছিল তন্তুজ। মাঝখান থেকে দিলীপ সাহা নামে এক জনৈক ব্যক্তি বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজোস করে ওই নিম্নমানের গজ-ব্যান্ডেজ সরবরাহ করেছেন শুধু অর্থের লোভ ও ‘তন্তুজ’কে বিপদগ্রস্ত করার জন্য।”
জেলাশাসকের কাছে আবেদনপত্রের পাশাপাশি তন্তুজের এমডির কাছেও অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন আবেদনকারী। ‘তন্তুজ’র এম ডি রবীন রায় বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” এ বিষয়ে জানতে জেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক অরুণলাল মণ্ডল বলেন, “উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সুতোর সংখ্যা ও গুণগত মান তন্তুজের দেখার কথা। এ বার আমরা গজ-ব্যান্ডেজের জন্য সরকার থেকে অনুমোদিত অর্থ বেশি পাওয়ায় বেশি পরিমাণ মাল কিনে ফেলেছি। এতে আমাদের ২০১৩ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত চলে যাবে।” |