হাসপাতাল আর দমকলের চাপানউতোরে ঘুরেছে বছর। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি কালনা মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতালের দাবি, পরিদর্শন করে গেলেও অগ্নি নির্বাপণ সামগ্রী লাগাতে খরচ কত পড়বে, তা লিখিত ভাবে জানায়নি দমকল। যদিও দমকল জানাচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা জোগাড় করলে তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত।
প্রায় চার দশক আগে শহরের জাপট এলাকা থেকে হাসপাতালটি হাটকালনা পঞ্চায়েত এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। এসটিকেকে রোডের পাশে প্রায় ১৩ একর জমির ওপরে তৈরি হয় সেটি। বর্তমানে মহকুমার পাঁচ ব্লকের মানুষই শুধু নয়, নদিয়া এবং হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষও ওই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। |
কিন্তু হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গোড়া থেকেই নড়বড়ে। অথচ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের পরিসরও বেড়েছে। আমরি-কাণ্ডের পরে মহকুমার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ), হাসপাতালের সুপার-সহ দমকলের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে। সেই সময় পরিদর্শকেরা দেখেন, প্রসূতি ওয়ার্ডের গা ঘেঁষেই রান্নাঘর। ঠিকাদার সংস্থার তরফে রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রাখা হয়। রান্নাঘরের পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের ‘মিটার বক্স’। এ ছাড়াও দমকল বিভাগের আধিকারিকেরা মেয়াদ উত্তীর্ণ দু’টি অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারও দেখতে পান। বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। অপারেশন থিয়েটার, পুরুষ, মেডিসিন, শিশু, সংক্রামণ, প্রসূতি-সহ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলি ঘুরে কোথায় কোন ধরনের যন্ত্র কমাতে হবে দমকল তার তালিকা তৈরি করে। পাশাপাশি আগুন লাগলে আপদকালীন যন্ত্রের মাধ্যমে কী ভাবে তা নেভানো সম্ভব, তাও দেখিয়ে দেন দমকল কর্তৃপক্ষ। তবে সেই শেষ। আমরি-কাণ্ডের পরে বছর ঘুরলেও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সেই তিমিরেই।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রসূতি ওয়ার্ডের পাশে আগের মতোই গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না চলছে। এখান থেকে কোনও ভাবে আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য কোনও সরঞ্জামও নেই। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার মুখে দেওয়ালে প্রচুর বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম রয়েছে। গুদাম ঘরে সিলিন্ডার-সহ দাহ্য পদার্থ থাকলেও আশপাশে কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা। নাদনঘাটের বাসিন্দা রমজান আলির কথায়, “এখানে প্রচুর রোগী ভর্তি থাকেন। অথচ ভাবতে অবাক লাগে এখানে কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।” বধূ সঞ্চিতা দে-র বক্তব্য, “কাছাকাছি দমকল কেন্দ্র থাকলেও বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গেলে হাসপাতালের উচিত সমস্ত বিভাগের পাশেই অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জাম রাখা।” |
সুপার অভিরূপ মণ্ডলের দাবি, “দমকলের তরফে কোথায় কোন ধরনের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হবে, তা নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তবে দমকল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনও খরচের হিসেব না পাঠানোয় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা চাইতে পারিনি।” দমকলের কালনা শাখার ওসি অরিন্দম দেবনাথের পাল্টা দাবি, “এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খরচের হিসেব পাঠানের নিয়ম নেই।” তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতাল তাদের বরাদ্দের কথা জানালে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র সরবরাহ করে এমন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে দরপত্র ডেকে মালপত্র কেনার ব্যাপারে সহযোগিতা করা যেতে পারে।”
|