বছরভর চাষ, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার
জলপাইগুড়িতে মান কমছে মাটির
ধিক ফলনের আশায় একদিকে বছরভর চাষ। অন্যদিকে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। এ দুই কারণে যে মাটি নিষ্প্রাণ হচ্ছে জানেন ওঁরা। কিন্তু বিপদ বুঝেও ভাল ফলনের জন্য রাসায়নিকে ভরসা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। রোজগার বাড়াতে বছর ভর চাষের কাজ করছেন। ফলাফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব উপাদান, ছত্রাক ও জীবাণু। কমছে ফলনের পরিমাণ। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উর্বর মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমান ৫ শতাংশ থাকার কথা। তিন দশক আগেও উত্তরের মাটিতে সেটা ছিল। কিন্তু বর্তমানে কমে হয়েছে ১ শতাংশ। এটা বিভিন্ন এলাকার মাটি পরীক্ষার গড় হিসেব। প্রাণশক্তি ক্ষয়ের পরিমাণ এখানে সীমাবদ্ধ থাকলেও রক্ষা ছিল। কিছু এলাকায় জৈব উপাদানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ০.৫ শতাংশ। কেন ওই পরিস্থিতি? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সহ সার আধিকারিক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, “মাটিকে বিশ্রাম না দেওয়া এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার এ জন্য দায়ী।” কৃষিকর্তারা জানান, জৈব উপাদান মাটির প্রাণশক্তি। সেটা ‘হিউমাস’ গঠন করে। তার উপরে নির্ভর করে ছত্রাক ও রাইজোবিয়াম লেগুমিনোসেরাম, ব্যাসিলাস ফার্মাসের মতো উপকারী জীবাণুর বংশবিস্তার। সেটা কমে যাওয়ায় ছত্রাক ও জীবাণু দুর্বল হচ্ছে। কমে যাচ্ছে। তাই মাটি প্রাণ হারাচ্ছে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষক তথা গবেষক ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, “উত্তরবঙ্গের চাষিরা যে মাটি চাষ করছেন সেটার মৃতপ্রায় দশা চলছে। ওই বিপদ থেকে বাঁচতে মাটিকে বিশ্রাম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।” ভোলানাথবাবু দীর্ঘদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্লকে কৃষি আধিকারিকের দায়িত্ব সামলেছেন। একই কাজ করেছেন বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষক রামবিলাস মল্লিক। তিনিও বলেন, “একটানা চাষ এবং অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির গুণগত মান খারাপ জায়গায় চলে যাচ্ছে।” ভোলানাথবাবুদের উদ্বেগ উড়িয়ে দেননি রাজ্য কৃষি দফতরের একজন অধিকর্তা সার্থক বর্মা। তিনি বলেন, “মাটি থেকে শুধু নিয়ে যাব। তাকে বিশ্রাম দেব না সেটা হয় না। বিপদ এড়াতে চাষিদের মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার দিকে বেশি যত্নবান হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।” চাষিরা যে সমস্যার কথা জানে না সেটা নয়। কিন্তু বিপদ বুঝেও বছরভর চাষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে রাশ টানতে পারছেন কোথায়! ময়নাগুড়ির সিঙ্গিমারি গ্রামের ৭২ বছর বয়সী চাষি অনাথ বর্মন জানান, ১৯৬২ সালে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না-করে ৭ মন ধান পেয়েছেন। তখন নিজের পরিশ্রম ছাড়া খরচ তেমন ছিল না।

ক্ষারত্ব কম, অম্লত্ব বেশি। সংকটে কৃষি সহায়ক জীবাণু।
ফসফেটের মাত্রা যথেষ্ট নয়।
পটাশের মাত্রা কম।
জৈব কার্বনের মাত্রা আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে।

১৯৮০ সাল থেকে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বিঘা প্রতি জমিতে ধানের ফলন বেড়ে হয় প্রায় ১২ মন। এর পরে যত সার দিয়েছেন ফলন তত বেড়েছে। খরচও বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। কিন্তু রাসায়নিকের ব্যবহার কম করে খরচ কমাবেন উপায় নেই। সার না দিলে ফসল মিলছে না। একই বক্তব্য, দোমহনি-১ -এর প্রবীণ চাষি হরেন্দ্রনাথ রায়ের। তাঁর কথায়, “জমির শক্তি এতটাই কমেছে যে প্রতি বছর রাসায়নিক সার বাড়াতে হচ্ছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর মহকুমার মাটি বেলে, বেলে দোয়াঁশ ও পলি দোয়াঁশ। সেখানকার হাল্কা মাটির জল ধারণ ক্ষমতাও কম। ওই কারণে জৈব পদার্থের পচনক্রিয়া ঠিক মতো হয় না। তাই প্রাকৃতিক ভাবে জৈব কার্বনের ঘাটতি পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র রাসায়নিক সার দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করা যে সম্ভব নয় সেটা চাষিদের অনেকে জানেন না। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষক ভোলানাথবাবু জানান, চাষিরা বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কারণ অনেকেই জানেন না গাছ রাসায়নিক উপাদান সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। রাসায়নিককে খাদ্যে রূপান্তরিত করে মাটিতে লুকিয়ে থাকা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া। তারাই ইউরিয়া, পটাশ, ফসফেটকে গাছের উপযোগী করে। ওই সমস্ত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া যত কমবে ততই রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা ও উৎপাদন কমবে। ওই সমস্যার পাশাপাশি ‘নাইট্রেট ইনফেকশনের’ মতো মাটি দূষণের সমস্যাও তীব্র হয়েছে। রামসাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের এগ্রোনমিস্ট জ্যোতির্ময় কারফর্মা জানান, ওই সংক্রমণের সমস্যা বেড়ে চলায় উত্তরবঙ্গের মাটির জলধারণ ও উৎপাদন ক্ষমতা কমছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.