|
|
|
|
স্কুলকে টাকা দিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে স্কুলকে এক লক্ষ টাকা দান করলেন এগরার প্রত্যন্ত গ্রাম কিয়ার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক বৈকুন্ঠ জানা। অভাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোয় সাহায্য করার জন্যই এই দান বলে তিনি জানিয়েছেন।
বৈকুন্ঠবাবু স্থানীয় হাসিমপুর আসদা দক্ষিণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। অবসর নেন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। তাঁর বাবা নারায়ণচন্দ্র ছিলেন দরিদ্র চাষি। সামান্য আয়ে দু’বেলা অন্ন সংস্থান হত না বললেই চলে। ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী ও পড়াশুনায় আগ্রহী বৈকুন্ঠকে পড়াশুনোর জন্য নিজের গহনা বেচে দেন মা অন্নপূর্ণাদেবী। বৈকুন্ঠবাবু বলেন, “তখন বাড়ি থেকে অনেক দূরে বর্তনা প্রভাতী আশ্রম হাইস্কুলে পড়ি। স্কুলে টাকা দিতে পারতাম না বলে সহপাঠী ও শিক্ষকদের একাংশের কাছ থেকে অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। মায়ের গহনা বেচার টাকাতেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। কলেজে ভর্তি হলেও পড়া শেষ করতে পারিনি। বর্তনা স্কুল না থাকলে আমার সামান্য শিক্ষাটুকুও হত না।”
সংসারে আজও তমন স্বাচ্ছন্দ্য নেই। একমাত্র ছেলে গৌতম সামান্য আয় করেন। তা সত্ত্বেও আদর্শগত কারণে তাঁর এই দানে গর্বিত গৌতম ও তাঁর মা রেণুকাদেবী। তাঁরা জানান, এই দান তাঁর মহত্বেরই প্রমাণ। বরাবারই তিনি দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এলাকায় বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করেন বিনামূল্যে। নিজের জীবনের দুঃখ, যন্ত্রণা তাঁকে অনেক বেশি মানবিক ও ছাত্র দরদি করেছে বলে মনে করেন বৈকুন্ঠবাবু।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সস্পাদক গুণধর জানা বলেন, “স্কুলে সংখ্যালঘু, তপসিলি জাতি-উপজাতি ও দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি। তাই মাস্টারমশাই দানের শর্ত হিসাবে জানিয়েছেন, ওই এক লক্ষ টাকা স্কুলের নামে ব্যাঙ্কে জমা থাকবে। বছরের শেষে প্রাপ্ত সুদের টাকায় দুঃস্থ মেধাবীদের লেখাপড়ায় আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। তাঁর এই দানে এলাকাবাসী কৃতজ্ঞ।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রাণকৃষ্ণ দাস ও সহ শিক্ষক উৎপল বর বলেন, “বৈকুণ্ঠবাবুর এই মহৎ দান শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করবে। ছাত্র ও শিক্ষক হিসাবে তাঁর আদর্শে অনু্প্রাণিত হলে ভবিষ্যতে অর্থাভাবে মেধা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।” বুধবার বৈকুণ্ঠবাবুকে স্কুলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। |
|
|
|
|
|