|
|
|
|
নাচে-গানে সামিল যাবজ্জীবন বন্দিরাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দু’দিনের বিবেক ছাত্র-যুব উৎসবে নাচে-গানে সামিল হলেন মেদিনীপুর সংশোধনাগারের বন্দিরা। মেদিনীপুর কলেজে পুরসভা আয়োজিত উৎসবের প্রথম দিন, বুধবার গান ও অঙ্কন প্রতিযোগিতায় যোগ দিলেন ৬ জন বন্দি। মান্নান খান, দিলীপ সিংহ সর্দার, মন্টু মাহাতোরা গান গাইলেন। আর ছবি আঁকলেন বলাই রায়, তারক সর্দার, মধুসূদন লায়েকরা। আজ, বৃহস্পতিবার রয়েছে নাচের অনুষ্ঠান। ১১ জন বন্দি ছৌ-নাচেও যোগ দেবেন।
কিশোর বয়সে খেলতে গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া। কষিয়ে কানের গোড়ায় ২-৩ থাপ্পড়। মৃত্যু হয়েছিল বন্ধুর। সেই অপরাধেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরে ভূপতিনগর থানার রাধাপুর গ্রামের মান্নান খানের। পুরুলিয়ার মানবাজারের কুঁয়োরডি গ্রামের দিলীপ সিংহ সর্দারের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল জমি নিয়ে। তা থেকে মারামারি, খুনোখুনি। দিলীপের হয় যাবজ্জীবন সাজা। তিনিও এখন মেদিনীপুর সংশোধনাগারে। এমন নানা কারণে দোষীসাব্যস্ত হয়ে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে বন্দি বলাই রায়, তারক সর্দার, মধুসূদন লায়েক, মন্টু মাহাতোরা। এদেরই মধ্যে যে শিল্পীসত্তা রয়েছে, তা আগেই জেনেছিলেন সংশোধনাগারের কর্মী-আধিকারিকেরা। |
|
রং-তুলি হাতে এক কয়েদি। নিজস্ব চিত্র। |
এ বার তা সকলের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগী হলেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।
বন্দিরা কেউ ঝুমুর গাইলেন, কেউ বা হিন্দি গান। আবার কেউ তুলি কলমের টানে ফুটিয়ে তুললেন বিবেকানন্দের কোলে অসুস্থ রামকৃষ্ণকে। কারও বিষয় প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। জেলের কন্ট্রোলার সন্তোষ সরকার ও সিকিওরিটি অফিসার স্বপন দাস বলেন, “মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সংস্কৃতিমনস্ক বেশ কয়েকজন বন্দি রয়েছেন। তাঁদেরই অনেকে উদ্যোগী হয়ে অন্যদেরও নাচ, গানে উৎসাহিত করেন। মাওবাদী সমস্যার জন্য সংস্কৃতি চর্চায় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব এলেও এখন আবার ফুটবল, নাচ, গান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বন্দিদের যুক্ত করবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ওরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।” এতদিন জেলের মধ্যেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতে বন্দিরা যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ প্রতিযোগীদের সঙ্গে এ ভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আগে তাঁদের মেলেনি। মন্টু মাহাতোর কথায়, “মন খুলে গান গাইতে পারলে মনে হয় আমরা আর বন্দি নই। খোলা আকাশের নীচেই আছি। মনও উড়ে বেড়ায়।”
তবে বর্তমানে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে সংস্কৃতি চর্চা কিছুটা ধাক্কা খাচ্ছে বলেই বন্দিদের অভিযোগ। মন্টু মাহাতো, দিলীপ সিংহ সর্দারদের কথায়, “আমরা নিজে নিজেই গান শিখেছি। নিজেদের ইচ্ছেতেই সকলে একসঙ্গে বসে চর্চা করি। যে ভাল জানে তাঁর কাছেই তালিম নিই। জেল কর্তৃপক্ষ যদি একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করতেন তাহলে খুব ভাল হত।” তবে কেন সংশোধনাগারে সংস্কৃতি চর্চা কমছে? জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাওবাদী সমস্যার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে জেলের নিরাপত্তা নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামাতে হয়েছে যে, সংস্কৃতি চর্চার দিকে ততটা নজর দেওয়া যায়নি। রামকৃষ্ণ মিশন একটি হারমোনিয়াম দিলেও তার ব্যবহার প্রায় হয়নি। জেলের ওয়েলফেয়ার অফিসার মহুয়া বাগচি মিত্র বলেন, “এ বার সংস্কৃতি চর্চায় জোর দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই সংস্কৃতি চর্চা নিয়মিত করার জন্য, শিক্ষক রাখা বা অন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদন জানাব।’’ |
|
|
|
|
|