|
|
|
|
মোদীর শপথে নেই অনেকেই |
‘দিল্লি চলো’র শুরুতেই হোঁচট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আজ শপথ নিলেন। কাল আসছেন দিল্লি। নরেন্দ্র মোদীর অভ্যর্থনায় সাজছে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর। কিন্তু তিন বার গুজরাত জয়ের পর এ বারে দিল্লি জয়ও কি ততটাই সহজ হবে মোদীর পক্ষে?
আজ চতুর্থ বারের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গোটা দেশে নিজের গ্রহণযোগ্যতার ছবিটি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন মোদী। কলহ ভুলে গোটা বিজেপিও যে তাঁর পাশে একজোট, দেখাতে চেয়েছিলেন সেই চিত্রটিও। কিন্তু বাস্তবে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীর পাশে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ছিলেন বটে। কিন্তু মোদীর জয়ে তাঁরা যে উচ্ছ্বসিত, তাঁদের অভিব্যক্তি তেমনটি বলল না।
এনডিএ-তে থেকেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসবেন না, তা প্রত্যাশিত ছিল। যেমনটি প্রত্যাশিত ছিল এনডিএ-র বাইরে থেকেও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার আসাটি। কিন্তু সব দলের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষায় যে মোদী উত্তীর্ণ হতে পারলেন না, সেটি আজ বোঝা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-নবীন পট্টনায়কদের অনুপস্থিতিতে। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, নবীনের দলের প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন। কিন্তু তিনি যে কে, তা তাঁরা বলতে পারছেন না। এনডিএ-র পুরনো শরিক শিবসেনার নেতা উদ্ধব এসেছিলেন সপরিবার। এসেছিলেন এনডিএ-র বাইরের রাজ ঠাকরেও। কিন্তু এক বছর আগে মোদীর অনশন মঞ্চেও এসেছিলেন রাজ। |
 |
শপথ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই |
বিজেপিরই এক নেতার কথায়, “যে ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, ‘সদ্ভাবনা মিশন’-এর এক বছর পরেও তিনি জাতীয় স্তরে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারলেন কই? দাঙ্গার কলঙ্ক যে তাঁর পিছু ছাড়েনি, তা স্পষ্ট। মায়াবাতী তো প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন, মোদীকে কিছুতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে দেবেন না!”
সংখ্যালঘু ভোট এখনও গলার কাঁটা মোদীর কাছে। ‘সদ্ভাবনা মিশন’-এ সংখ্যালঘুর দেওয়া টুপি পরতে না চাওয়া, আমেরিকার ভিসা দিতে না চাওয়া, রাজ্যে এক জনও সংখ্যালঘুকে টিকিট না দেওয়া, ইস্তাহারে সংখ্যালঘুর জন্য বিশেষ প্রতিশ্রুতি না রাখা এই সব ভাবমূর্তি তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বিজেপিতে মোদী-বিরোধী নেতারাও কিছুটা স্বস্তিতে। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২০৭টি এমন আসন রয়েছে, যেখানে সংখ্যালঘুরা প্রভাবশালী। তার মধ্যে ১২৬টি আসন রয়েছে, যেখানে মুসলিম ভোটার ১০-২০ শতাংশ। ৮১টি আসনে প্রভাব ২০ শতাংশের বেশি। গোটা দেশে ১৩.৪ শতাংশ মুসলিম ভোটার থাকলেও গুজরাতে এই সংখ্যা মাত্র ১০%। ফলে গুজরাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি মোদীকে। কিন্তু জাতীয় স্তরে লোকসভা ভোটে এই সংখ্যা উপেক্ষা করা অসম্ভব।
বিজেপি নেতৃত্ব যে সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার আশায় রয়েছেন, তা নয়। কিন্তু মোদীকে সামনে আনলে মেরুকরণের ভোট হবে। তাতে লাভের থেকে লোকসান বেশি হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেক বিজেপি নেতা। কারণ, হিন্দুরা যে মোদীর পক্ষে একজোট হবেন না, তা স্পষ্ট।
তবে বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, মোদীর জয়ে অন্তত কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র লখনউয়েও স্লোগান উঠছে, “মোদী লাও, দেশ বাঁচাও।” সেখানকার কর্মীদের দাবি, লখনউ থেকেই প্রার্থী করা হোক মোদীকে। মোদী শিবিরের নেতারা ভাবছেন, গোধরার কলঙ্ক মুছে ফেলেছেন মোদী। এখন উন্নয়নই তাঁর মন্ত্র। এ বারে দিল্লির মসনদ জয়ও হবে উন্নয়নের স্লোগানে। দিল্লিও আর দূর-অস্ত নয়।
কিন্তু এ দিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অন্তত তাঁদের মুখে হাসি ফোটাবে না। |
|
|
 |
|
|