এসএমই রেটিং |
ছোট হলেও ভরসাযোগ্য |
হ্যাঁ, পকেটে ভাল রেটিং থাকলে, ব্যাঙ্কের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে পারবেনআপনি।
সহজ হবে ব্যবসার ঋণ পাওয়া। এমনকী মিলতে পারে সুদে ছাড়ও। ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি
সংস্থার রেটিং-বৃত্তান্ত আগাম শুনে রাখলে মন্দ কী? প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
দেশ থেকে যত পণ্য রফতানি হয়, তার ৪০ শতাংশই তৈরি হয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পে। উৎপাদন শিল্পের ৪৫ শতাংশও রয়েছে এদের দখলে। শুধু তা-ই নয়, দেশে যত কল-কারখানা রয়েছে, তার ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র, ছোট কিংবা মাঝারি। অথচ ব্যাঙ্কে ধার পাওয়ার জন্য সব থেকে বেশি হ্যাপা পোহাতে হয় এই সব শিল্পোদ্যোগীকেই।
|
সমস্যার শিকড় |
আসলে, অনেক সময়েই ছোট শিল্পকে ঋণ দেওয়া বাড়তি ঝুঁকির বলে মনে করে ব্যাঙ্ক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। কারণ, সংস্থার পরিচালন ব্যবস্থা কতটা স্বচ্ছ কিংবা আগামী দিনে তার মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কেমন— এই সমস্ত বিষয়ে অনেক সময়ই অন্ধকারে থাকে তারা। তাই দ্বিধা থাকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে।
|
সহজ সমাধান |
এই পরিস্থিতিতে আপনার সংস্থার সামনে মুশকিল আসান হিসেবে হাজির হতে পারে রেটিং। কারণ, ভাল রেটিং-এর সার্টিফিকেট পকেটে থাকলে, অনেক সহজ হবে ধার পাওয়া।
|
রেটিং কী? |
কোনও সংস্থাকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তারই মূল্যায়ন হল ক্রেডিট রেটিং। রেটিং যত ভাল, তাকে ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সে ক্ষেত্রে ধার দিতে ইতস্তত করে ব্যাঙ্ক। কিংবা ঋণের জন্য চড়া সুদ গুণতে হয় সংস্থাকে। কিন্তু তেমনই রেটিং ভাল হলে, ধার পাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন আপনি।
|
করে কারা? |
ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থার রেটিং-এর জন্য দেশের প্রধান তিন সংস্থা হল ক্রেডিট রেটিং ইনফর্মেশন সার্ভিসেস অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ক্রিসিল), ইন্ডিয়ান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি (ইক্রা) এবং ক্রেডিট অ্যানালিসিস অ্যান্ড রিসার্চ (কেয়ার)। এ ছাড়াও রয়েছে স্মেরা, ডান অ্যান্ড ব্র্যাডশিট, অনিক্রা-র মতো আরও কয়েকটি সংস্থা। এরা শিল্প সংস্থার আর্থিক অবস্থা এবং পরিচালন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে তার রেটিং ঠিক করে। |
|
করাবেন কী ভাবে? |
যে সব রেটিং সংস্থার নাম বললাম, তাদের সকলেরই নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। রেটিং সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নির্দেশিকাও দেখতে পাবেন সেখানে। তা ছাড়া, এ বিষয়ে সহায়তা পেতে পারেন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কিংবা ন্যাশনাল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (এনএসআইসি)-এর কাছ থেকে।
|
রেটিংয়ের পদ্ধতি |
আপনার সংস্থার ঋণ শোধ দেওয়ার ক্ষমতা কেমন, তা খুঁজে বার করে সেই অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেওয়াই রেটিং সংস্থার মূল কাজ।
কোনও সংস্থার আর্থিক বুনিয়াদ যত পোক্ত, ব্যবসা বাবদ আয় বৃদ্ধি (ক্যাশ ফ্লো) যত মসৃণ এবং মুনাফার পথ যত খোলা, তার ঋণ শোধের সম্ভাবনাও তত বেশি। তাই রেটিং দেওয়ার আগে এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ শোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ব্যবসা পরিকল্পনার স্বচ্ছতা, পরিচালন ব্যবস্থা ইত্যাদি। তাই ব্যবসা কিংবা লাভের অঙ্ক কষার পাশাপাশি এই সব বিষয়ও খুঁটিয়ে দেখে রেটিং সংস্থাগুলি।
|
সুবিধার ছয় আখ্যান |
• ঋণ পাওয়ায় অগ্রাধিকার।
• মিলতে পারে সুদে ছাড়ও। এই সুবিধা দেয় অধিকাংশ ব্যাঙ্কই। সে ক্ষেত্রে গুণতে হবে ০.২৫-১.২৫ শতাংশ পর্যন্ত কম সুদ।
• বাড়তি সুবিধা বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রেও। কারণ, রেটিং দেখেই সংস্থার আর্থিক অবস্থা এবং পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের দক্ষতা বিচার করে বাজার।
• অনেকখানি এগিয়ে থাকা যায় ভিন্ দেশে রফতানির বাজার ধরা কিংবা অন্য রাজ্যে পণ্য বেচার ক্ষেত্রে। কারণ, সেখানে আপনার সংস্থা তুলনায় অপরিচিত। তা সত্ত্বেও রেটিং দেখে তার সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক একটা ধারণা করা সম্ভব হয়। তাই পণ্য কেনার সাহস পায় অচেনা ক্রেতারাও।
• ধরা পড়বে পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি। ফলে পাওয়া যাবে তা শোধরানোর সুযোগও।
• অনেক সময়ে পরিচালন ব্যবস্থার ভুল শুধরে খরচ কমানোর পথ বাতলে দেয় রেটিং সংস্থা। ফলে বাড়তে পারে মুনাফাও। সমীক্ষা অনুযায়ী, খরচ এক শতাংশ কমলে, মুনাফা বাড়তে পারে ১২.৫% পর্যন্ত। |
|
|
ইচ্ছে বনাম বাধ্যবাধকতা |
রেটিং প্রধানত দু’রকম |
(১) সাধারণ রেটিং ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ পাওয়ার ক্ষমতা এবং পরিচালন ব্যবস্থার মান যাচাইয়ের জন্য ইচ্ছে হলে এই রেটিং নিজেরাই করাতে উদ্যোগী হতে পারে এসএমই সংস্থাগুলি। এবং তা করিয়ে রাখলে যে কতটা সুবিধা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা।
(২) ব্যাঙ্ক লোন ফেসিলিটিজ রেটিং এসএমই সংস্থা হিসেবে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ইত্যাদি নিতে গেলে এই রেটিং করানো কিন্তু বাধ্যতামূলক। যা করাতেই হবে আপনাকে। |
মেয়াদ |
রেটিংয়ের মেয়াদ সাধারণত এক বছর। অর্থাৎ, এক বার করে ফেললে, এক বছর নিশ্চিন্তি। তবে এর হেরফের হবে কি না, তা গোড়াতেই সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিন। |
রেটিং ভাল হলে, সুদে ছাড় পাওয়া
যেতে পারে ১.২৫ শতাংশ পর্যন্ত |
|
খরচের বহর |
এক-এক সংস্থার দর এক-এক রকম। নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপর। যেমন, সংস্থাটি ক্ষুদ্র, ছোট না মাঝারি, তার উপর ভিত্তি করে ফি নেয় রেটিং সংস্থা। কখনও আবার আয়ের উপর ভিত্তি করে ফি নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয় ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করা ঋণের অঙ্ককেও। রেটিং করাতে কত টাকা লাগতে পারে, তা এক কথায় বলা শক্ত। সাধারণত এ ক্ষেত্রে খরচের অঙ্ক ৮-১৫ হাজার টাকা। তবে একেবারে সঠিক অঙ্ক বলতে পারবে একমাত্র রেটিং সংস্থাই। |
প্রথম বারে ভর্তুকি |
প্রথম বার রেটিং করানোর সময় ফি-র ৭৫% কেন্দ্রের কাছে ভর্তুকি হিসেবে পেতে পারেন আপনি। ন্যাশনাল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের মাধ্যমে ওই ভর্তুকি দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র। |
|