|
|
|
|
|
|
গৌরী সেনের হদিস |
বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। কিন্তু সেই ব্যবসা শুরুর জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে?
কে হবে ক্ষুদ্র বা ছোট শিল্প গড়ার গৌরী সেন? কোথায় পাবেন সরকারি ভর্তুকির
সুলুক-সন্ধান? সরেজমিনে খবর নিলেন দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত |
আজ নতুন নয়। ব্যবসা শুরুর জন্য ব্যাঙ্কের কাছে ধার পাওয়া সহজ কি না, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি অনেক দিনের।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির দাবি, ব্যবসা আরম্ভ করতে ধার পাওয়া একেবারেই কঠিন নয়। অন্তত আজকের বাজারে। যেখানে এ জন্য সুলভে ঋণ দিতে মুখিয়ে রয়েছে বহু সংস্থা। তা ছাড়া, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য সহজে ধারের বন্দোবস্ত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি। এতটাই যে, এখন এ ধরনের শিল্পকে ঋণ দিতে প্রায় দায়বদ্ধ ব্যাঙ্কগুলি। এমনকী তা না-দিতে পারলে, রীতিমতো জবাবদিহি করতে হয় তাদের।
কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই এ কাজে ‘হাত পুড়িয়েছেন’, তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, ‘ও সব কথার কথা’। আসলে জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে গেলেও ঋণ মেলে না। চাওয়া হয় বিপুল বন্ধক। কখনও ব্যক্তিগত সম্পদও। বাধ্য হয়েই চড়া সুদে ধার নিতে হয় পরিচিত কারও কাছে। ফলে মুশকিল হয় মুনাফার মুখ দেখা।
একই রকম দুই মেরুর বক্তব্য রয়েছে ভর্তুকি পাওয়া নিয়েও। শিল্পের অভিযোগ, সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও, আদতে কারখানা চালুর পর প্রাপ্য ভর্তুকি আদায় করা বেশ শক্ত। কিন্তু সরকারের পাল্টা যুক্তি, সমস্যা অন্য খানে। ভর্তুকির জন্য কী ভাবে প্রস্তাব জমা দিতে হয়, তা-ই জানেন না অনেকে। ঠিক থাকে না নথিপত্র। যে কারণে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় অনিয়মের চক্করে। সব থেকে বড় কথা, কোন শিল্পের জন্য কী ধরনের বা কতটা ভর্তুকি পাওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকের। তাই তা পাওয়া নিয়ে এত সমস্যা।
|
‘ঝগড়া’ থেকে শিক্ষা |
দু’পক্ষের এই অভিযোগ আর তার পাল্টা দাবি থেকে অন্তত একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, ব্যবসা শুরুর জন্য ব্যাঙ্কের কাছে ধার পাওয়ার বন্দোবস্ত হয়তো আছে। কিন্তু তার রাস্তা আমাদের অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। একই কথা প্রযোজ্য সরকারি ভর্তুকির ক্ষেত্রেও। তাই আজ সেই রাস্তা সাফ করতেই মন দেব আমরা। দেখব, ঠিক কী কী জমা দিলে, ধার পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কী করলে ঝুলিতে আসবে ভর্তুকি।
|
নিজের ‘কারখানা’ আগে চিনুন |
• এক-এক ধরনের শিল্পে ঋণের পরিমাণ, তা পাওয়ার পদ্ধতি এবং ভর্তুকির অঙ্ক এক-এক রকম। তাই ঋণ বা ভর্তুকির জন্য আবেদন করার আগে নিজের ব্যবসাকে ভাল করে চিনুন।
• সাধারণ ভাবে দু’ভাগে ভাগ করা হয় শিল্পকে—
(১) উৎপাদনমুখী
(২) পরিষেবা ভিত্তিক
এবং এই দুই ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প হিসেবে তাদের বিন্যাস করা হয় মূলত কারখানা ও যন্ত্রপাতিতে (প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারি) বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী।
|
বড়-ছোট-মাঝারি |
|
উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে লগ্নির অঙ্ক ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে, তা ক্ষুদ্র (মাইক্রো)। ২৫ লক্ষ থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ছোট (স্মল)। আর ৫ কোটির বেশি থেকে ১০ কোটি অবধি হলে তা আকারের বিচারে মাঝারি (মিডিয়াম)।
পরিষেবার ক্ষেত্রে অবশ্য এই হিসাব আলাদা। সেখানে বিনিয়োগ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে, তবেই তা ক্ষুদ্র। ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে ২ কোটি পর্যন্ত হলে ছোট। আর ২ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি অবধি হলে মাঝারি।
|
ইন্টারভিউয়ের জন্য তৈরি তো? |
মনে রাখবেন, যে-ব্যবসায় নামার জন্য কিংবা যে-কারখানা সম্প্রসারণের জন্য ঋণের খোঁজে কোমর বাঁধছেন, শুধু তাকে আগাগোড়া জানাই শেষ কথা নয়। বরং এই জরুরি কাজ চটজলদি সেরে ফেলে ইন্টারভিউয়ে বসার জন্য তৈরি হতে হবে আপনাকে। খানিকটা চাকরি-প্রত্যাশীর মতো। কারণ, এখানেও ঋণ দেওয়ার আগে আপনাকে পুরোদস্তুর বাজিয়ে দেখবেন ব্যাঙ্ক-কর্তারা। এই ইন্টারভিউতে সসম্মানে উতরে যাওয়া কিন্তু ঋণ হাসিলের অন্যতম শর্ত। তাই এর জন্য আগে থাকতে কোমর বাঁধুন। সম্ভাব্য সব চোখা চোখা প্রশ্নের জন্য তৈরি করুন নিজেকে।
|
প্রশ্ন কেমন? |
মনে রাখবেন, ইন্টারভিউতে ব্যাঙ্ক-কর্তাদের লক্ষ্য, ব্যবসা সম্পর্কে আপনার ধারণার স্বচ্ছতা যাচাই করা। পরখ করা আপনার লেগে থাকার ইচ্ছে। কারণ, আপনাকে ঋণ দিয়ে যে আখেরে টাকা জলে যাবে না, গোড়া থেকেই তা নিশ্চিত করতে চাইবেন তাঁরা। তাই অন্তত নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর আগাম তৈরি রাখুন—
(১) ব্যবসা করতে চান কেন?
এই প্রশ্নের মুখে শুরুতেই পড়তে হবে আপনাকে। তাই ভাবুন, কেন ব্যবসা-ই করতে চান? মনের মতো চাকরি না-পাওয়া? নিছক শখ? না কি রাতারাতি বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে? দেখা যায়, যথেষ্ট উদ্যম আর আবেগ নিয়ে শুরু করেও, এক বার রুক্ষ বাস্তবে আছড়ে পড়ার পর রণেভঙ্গ দিচ্ছেন অনেকেই। তাই শুরুতেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যিই কেন শিল্প গড়তে চান? কেন হাঁটতে চান ‘অন্য পথে’? নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লাগাতার লড়াইয়ের নাছোড় জেদ আপনার আছে কি না। কারণ, ঋণ দেওয়ার আগে এই বিষয়গুলি ব্যাঙ্ক কিন্তু খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করবেই।
(২) জলে নামছেন, সাঁতার জানেন তো?
যে-ব্যবসায় পা রাখছেন, তার সম্পর্কে আপনার ধারণা কতটা স্বচ্ছ, তা কিন্তু খুঁটিয়ে জানতে চাইবে ব্যঙ্ক। হয়তো জানতে চাইবে:
• এই ক্ষেত্রে আপনার স্বাভাবিক দক্ষতা কতখানি?
• এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে (কাঁচামাল থেকে শুরু করে বাজার) পর্যাপ্ত তথ্য হাতে আছে কি না? যেমন প্রশ্ন হতেই পারে, আপনার প্রস্তাবিত ব্যবসার কাঁচামালের দাম এখন কেমন? কিংবা কোথা থেকে তার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করবেন আপনি?
• যে পণ্য বা পরিষেবা বাজারে আনবেন, তার দর সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট তো? ইত্যাদি।
|
তৈরি রাখুন ডিপিআর |
ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে আপনার প্রকল্প সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য, বিস্তারিত বিবরণ এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে যত্ন করে তৈরি করুন ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর)। এ ক্ষেত্রেও মাথায় রাখুন কয়েকটি ছোট্ট কথা—
• অযথা বাড়িয়ে লিখবেন না। প্রকল্পের খরচ কিংবা সম্ভাব্য মুনাফার অঙ্ক বাড়িয়ে লিখলে কিন্তু বেশি ঋণ বরাদ্দ করবে না ব্যাঙ্কগুলি। বরং প্রশ্নের মুখে এই নিয়ে গরমিল ধরা পড়লে, নম্বর কমার সম্ভাবনা।
• প্রয়োজনে অনুমোদিত উপদেষ্টার সাহায্য নিন। তা বলে দালালের খপ্পরে পড়বেন না। উপদেষ্টা সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে সাহায্য করলেও, মূল ভাবনা কিন্তু আপনারই।
• ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের আবেদনপত্র কী রকম হয়, কী ভাবে আবেদন করতে হয়, এ সব ব্যাপারে সাহায্য করে ন্যাশনাল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (এনএসআইসি)। সে রকম আবেদনপত্র তৈরি করে তারা তা স্ক্রিনিং-ও করে নেয়। তারপর ব্যাঙ্কের কাছে পাঠায়। এ জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়াও বেঁধেছে তারা।
|
চাইলে ধার কতটা? |
• প্রয়োজনীয় পুঁজির পুরোটা কিন্তু ঋণ হিসেবে পাওয়ার আশা করবেন না। বরং কিছুটা দিতে তৈরি থাকুন নিজের পকেট থেকে।
• দু’ধরনের ঋণ পেতে পারেন—
(১) যন্ত্রপাতি কিনতে, কারখানা নির্মাণে বা স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য মেয়াদি ঋণ (টার্ম লোন)।
(২) দৈনন্দিন খরচ মেটাতে কাযর্করী মূলধন ঋণ (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন)।
এর মধ্যে পড়ে কাঁচামাল কেনার খরচ, কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ইত্যাদি।
দুই ক্ষেত্রেই ৭৫% পর্যন্ত ধার পেতে পারেন। বাকিটা জোগাড় করতে হবে নিজেকে। মনে রাখবেন, কার্যকরী মূলধনের ঋণ সাধারণত এক বছরের মেয়াদে দেওয়া হয়। প্রতি বছর নতুন করে তা দেওয়ার আগে আগের ঋণের অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্ক।
• কিছু কাজের জন্য ধার দেবেই না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। যেমন, অফিস ভাড়া নেওয়ার অগ্রিম।
• সাধারণ ভাবে ঋণের প্রসেসিং-ফি আপনাকে পকেট থেকেই দিতে হবে। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক তাতে ছাড় দিলেও, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
|
ঋণের ঠিকানা |
বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে শিল্পোদ্যোগের জন্য ঋণ দেয়, তা আগেই বলেছি আমরা। এ ছাড়াও ধার দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্স কর্পোরেশন (ডব্লিউবিএফসি), ন্যাশনাল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (এনএসআইসি)-এর মতো সরকারি সংস্থা।
যেমন, উৎপাদনমুখী ও পরিষেবা দু’ধরনের শিল্পের জন্যই ঋণ দেয় ডব্লিউবিএফসি। এখানে মূলত মেয়াদি ঋণ মেলে। তবে ব্যবসায় কার্যকরী মূলধন খুব বেশি না-হলেও ধার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঋণের সর্বোচ্চ অঙ্ক ২০ কোটি টাকা। যা কিছু বন্ধক রাখা যায়, সেই সমস্ত ‘ট্যানজিব্ল অ্যাসেট’-এর ৭০% পর্যন্ত ধার পাওয়া যেতে পারে। অনেক সময়ে আবার অতিরিক্ত কিছুও (এনএসসি, এলআইসি, জমি, বাড়ি ইত্যাদি) জমা রাখতে হতে পারে অতিরিক্ত সিকিউরিটি হিসেবে।
মেয়াদি ঋণ দেয় স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (সিডবি)-র মতো কিছু সংস্থাও। আবার কিছু ক্ষেত্রে কাঁচামাল কেনা ও পণ্য বিক্রির জন্য ঋণ দেয় এনএসআইসি।
|
বন্ধক বাঁচিয়ে ধার |
ধারের টাকা যাতে মার না-যায়, তা নিশ্চিত করতে কিছু-না-কিছু বন্ধক চাইত সব ব্যাঙ্কই। সেই সমস্যা মেটাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট ফর মাইক্রো অ্যান্ড স্মল এন্টারপ্রাইজ (সিজিটিএমএসই) নামে তহবিল গঠন করে কেন্দ্র ও স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (সিডবি)। যার সদস্য হতে পারে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাঙ্ক। শর্তসাপেক্ষে গ্রামীণ ব্যাঙ্কও। এনএসআইসি, নর্থ ইস্টানর্র্ ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশন-ও এর সদস্য। |
|
www.cgtsi.org.in ওয়েবসাইটে যান। দেখুন, যেখান থেকে ধার নিচ্ছেন, তারা ওই তহবিলের সদস্য কি না। কারণ, কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি সিজিটিএমএসই-র সদস্য হয়, তা হলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোনও বন্ধক রাখতে হবে না আপনাকে। কারণ, ঋণের ঝুঁকি বইবে ওই তহবিলই। তার মানে এই নয় যে, ধার শোধ না-করলেও বেমালুম ছাড় পেয়ে যাবেন আপনি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে আপনার বিরুদ্ধে। কিন্তু সুবিধা হল, বন্ধকের অভাবে অন্তত ঋণ পাওয়া আটকাবে না আপনার।
|
আগের ঋণ শোধ
দিয়েছেন কি? |
ব্যবসা কিংবা অন্য যে-কোনও কারণে আগে ঋণ নিয়ে থাকলে, সব তথ্য আবেদনের সঙ্গে জানান। জানিয়ে রাখুন ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত তথ্যও। সিবিল রেকর্ড (আগের সংখ্যায় এই নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছি আমরা) ভাল থাকলে, ব্যবসা শুরুর ঋণ পেতেও সুবিধা হবে আপনার।
|
ভাঁড়ারে ভর্তুকি |
ব্যবসা শুরুর পরে ভর্তুকি পেতে পারেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প দফতরের কাছ থেকে। এ জন্য রাজ্যকে আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যত পিছিয়ে পড়া এলাকা, ভর্তুকির হার তত বেশি। দফতরের দাবি, প্রতি জেলা সদরে একটি করে সরকারি শিল্প-কেন্দ্র রয়েছে। দুর্গাপুর, বারুইপুর ও হলদিয়ায় আছে আরও তিনটি। এ ছাড়াও কল্যাণীতে রয়েছে ক্যাম্প অফিস। এই সব জায়গাতেই ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারেন শিল্পোদ্যোগীরা।
|
কোথায় কত? |
এ বার কোন শিল্পে কোন খাতে কতটা পর্যন্ত ভর্তুকি পেতে পারেন, তা দেখে নেব আমরা। নীচে প্রতি ক্ষেত্রেই প্রথমে ক্ষুদ্র ও তার পর ছোট শিল্পের জন্য ভর্তুকির হার উল্লেখ করা হল—
• যন্ত্রপাতি কেনা বা কারখানা গড়া: খরচের ৩৫% ও ২৫%।
• সুদের হারে: ৩০% ও ২০%।
• বিদ্যুতে: বিদ্যুতের ইউনিট চার্জের জন্য উভয় শিল্পেই ৩০%। তবে পাওয়া যাবে কারখানা চালুর পাঁচ বছর পর পর্যন্ত। এই একই সময়ের জন্য বিদ্যুতের শুল্কের উপর একশো শতাংশই ভর্তুকি পেতে পারেন আপনি।
• ইপিএফ ও ইএসআই: শর্তসাপেক্ষে মালিকের দেয় অংশের ৮০% ও ৭৫%।
• স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি: ৬৭% ও ৫০%।
• গুণমান উন্নয়ন (কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট): খরচের ৭৫% এবং ৫০%। সর্বোচ্চ সীমা ৫ লক্ষ।
যার আওতায় এই সব সুযোগ-সুবিধা, রাজ্য সরকারের সেই উৎসাহ-নীতি আপাতত কার্যকর থাকবে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। তারপর অবশ্য নতুন নীতি তৈরি হওয়ার কথা।
|
চেকলিস্ট |
ব্যাঙ্ক তো শুধু আপনার মুখের কথায় টাকা দেবে না। বরং প্রথমেই চেয়ে বসবে একগুচ্ছ কাগজ-পত্তর। তাই শুরুতেই সে সব আলাদা করে গুছিয়ে নেওয়া ভাল। ধার চাইতে ব্যাঙ্কমুখো হওয়ার আগে সঙ্গে রাখুন—
• ইউনিটের ট্রেড লাইসেন্স ও প্যান কার্ড।
• এসএসআই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (যেখানে প্রযোজ্য)।
• পার্টনারশিপ ডিড/ ট্রাস্ট ডিড/ রেজিস্ট্রার অফ সোসাইটিজের কাছ থেকে পাওয়া রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট/ সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশন/ মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকল্স অফ অ্যাসোসিয়েশন।
• অগ্নি সুরক্ষা-সহ বিভিন্ন লাইসেন্স/ অনুমতিপত্র
• পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র।
• চালু ইউনিটের (কারখানা বা ব্যবসা) তিন বছরের অডিট করা হিসাব এবং আয়কর রিটার্নের প্রমাণ। সঙ্গে চলতি ও আগের অর্থবর্ষের প্রতিটি ত্রৈমাসিকের যুক্তমূল্য কর/ বিক্রয় কর/ পরিষেবা করের রিটার্ন-ও।
• মালিকপক্ষের স্বীকৃত ব্যক্তির সই করা সিএমএ (ক্রেডিট মনিটরিং অ্যারেঞ্জমেন্ট ফর্ম্যাট) সংক্রান্ত তথ্য।
• ভবিষ্যতের আর্থিক অবস্থার পূর্বাভাস। যেমন, ইউনিটের কাজকর্মের বিবরণ, সম্ভাব্য বিক্রি, মুনাফার অঙ্ক ইত্যাদি। এই পূর্বাভাসের ভিত্তি কী, তা বোঝাতে দিতে হবে চলতি এবং গত অর্থবর্ষের বিক্রি ও লাভের খতিয়ান। নতুন ও পুরনো উভয়ের ক্ষেত্রেই এই সব শর্ত পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রযোজ্য।
• আপনার তৈরি পণ্য এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহকারীদের সম্ভাব্য তালিকা। তাঁদের সঙ্গে কোনও চুক্তি ইতিমধ্যেই হয়ে থাকলে, দিতে হবে তার কপিও।
• টাইটেল ডিড, মিউটেশন সার্টিফিকেট এবং জমিজমা সংক্রান্ত কাগজ। যেমন, কারখানা তৈরির জমির নথিপত্র। সেই জমির কনভার্শন বা মিউটেশন সংক্রান্ত নথি ইত্যাদি। আর ব্যবসার জায়গা ভাড়ায় নেওয়া হয়ে থাকলে, জমা দিন তাকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অনুমোদন সংক্রান্ত নথি।
• আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা-সহ সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী।
• মালিক ও গ্যারান্টরদের পরিচয়পত্র ও ঠিকানার প্রমাণপত্র।
• চালু ইউনিটের জন্য আগে ঋণ নিয়ে থাকলে, সেই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ফের ঋণের অনুমতির চিঠি (স্যাংশন লেটার)। পুরনো ঋণের বিবরণ। সঙ্গে ব্যবসার ব্যালান্স শিটও।
• কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলে, তার এক বছরের আর্থিক বিবরণ (স্টেটমেন্ট)।
• মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ (প্রজেক্ট রিপোর্ট)। লাগতে পারে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক ভাবে কেন ওই প্রকল্প লাভজনক হবে, সেই সংক্রান্ত (টেকনো-ইকনমিক ভায়াবিলিটি) রিপোর্ট-ও।
• কোটেশন এবং প্রজেক্ট শেষ হওয়ার ক্রমপঞ্জী (মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে)।
• সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব।
• আপনার নিজস্ব পুঁজির প্রমাণ।
• বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত তথ্যের যাবতীয় খুঁটিনাটি। |
|
তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ (প্রাক্তন ব্যাঙ্ক আধিকারিক), ফসমি,
সিডবি, এনএসআইসি, ডব্লিউবিএফসি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক |
|
|
|
|
|