দুই হাসপাতালে পরিদর্শন
প্রসূতিদের শয্যায় টিকিট নেই, ক্ষুব্ধ প্রতিনিধি দল
প্রসূতিদের শয্যায় টিকিট নেই। অন্য ওয়ার্ডে শয্যা খালি পড়ে থাকলেও প্রসূতি বিভাগে এক এক জায়গায় একই শয্যায় দু’জন করে রোগী রয়েছে। অযত্নে কোনও ওয়ার্ডে ঝুল বাসা বেড়েছে। অবাধে ঘোরাফেরা করছে বেড়াল, কুকুর বাচ্চাও। রবিবার রাতে কালনা মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ছ’জন চিকিৎসক নিয়ে তৈরি রাজ্য সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এমনই অব্যবস্থার চিত্র দেখল।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে যান প্রতিনিধিরা। তাঁদের কাছে একগুচ্ছ দাবি পেশ করেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, এসএনসিইউ তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। নার্সিং স্কুল গড়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবিপত্রে উল্লেখ করেন তিনি। পিপিপি মডেলে সিটি স্ক্যান ও ডিজিট্যাল এক্স-রে বসানোর দাবি জানানো হয়। এছাড়াও নিরাপত্তারক্ষী, রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মী-সংখ্যা বাড়ানো-সহ আরও বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। সুপার বলেন, “ওই কমিটি হাসপাতালের পরিকাঠামো দেখে আইটিইউ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালের দোতলায় একটি জায়গা পছন্দও করে গিয়েছেন।”
কালনা মহকুমা হাসপাতালে অবাধ বিচরণ কুকুরের।
ওই হাসপাতালে পরিদর্শন শেষ করে চিকিৎসক দলটি রাত পৌনে ৮টা নাগাদ পৌঁছয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। দলটির সঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) দিলীপ মণ্ডলও ছিলেন। কালনা হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) সুভাষচন্দ্র মণ্ডল, সুপার অভিরূপ মণ্ডল-সহ দুই সহকারী সুপারও। জননী সুরক্ষা যোজনার অর্থ বিলির কাউন্টার ওয়ার্ডের কাছাকাছি না থাকায় দলের সদস্য সমুদ্র সেনগুপ্ত প্রশ্ন তোলেন। প্রসূতি ওয়ার্ডে গিয়ে শয্যায় টিকিট না দেখতে পেয়ে তিনি মেজাজ হারান। এক নার্সকে সতর্ক করে বলেন, “প্রসূতিদের শয্যায় টিকিট ছাড়া সরকারি হাসপাতাল চলতে পারে না।” এই বিভাগের এক একটি শয্যায় দু’তিন জন করে রোগী দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের দোতলায় গিয়ে পরিদর্শক দল দেখতে পান ছোট ছোট কুকুরের বাচ্চা রোগীদের শয্যার তলায় ঘোরাফেরা করছে। মাঝবয়সী এক মহিলা তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন, কুকুরের বাচ্চাগুলি দিন-রাত ওয়ার্ডের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কখনও কখনও স্যালাইনের তার দাঁতে করে কাটারও চেষ্টা করে। দ্বিতল ভবনের একটি ওয়ার্ড অপরিষ্কার দেখেও বিরক্ত হন তাঁরা। রাতে হাসপাতালের ভিতরে যত্রতত্র সাধারণ মানুষ রাতে ঢুকে পড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আধিকারিকেরা। তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি দল।
ওয়ার্ডের পরিদর্শন শেষ করে পরিদর্শক দলের ছয় সদস্য সুপারের কার্যালয়ে একটি বৈঠক করেন। হাসপাতালের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা হয়। তাঁদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ জানান হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষও। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে প্রশাসনিক ব্যবস্থা বেহাল। শল্য এবং মেডিসিন বিভাগে হাল সব থেকে খারাপ। চিকিৎসকদের একাংশের পরিষেবায় মন নেই। প্রসূতিদের অনেক ওষুধই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা হাসপাতালের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। সমুদ্রবাবু তাঁদের জানান, সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ আগের থেকে দ্বিগুণ করেছে রাজ্য সরকার। প্রসূতিদের প্রসবের ২৮ দিন পর্যন্ত ওষুধ সরকারি ভাবে পাওয়াই নিয়ম। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান কলকাতার নামি চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “মেডিসিন বিভাগে পরিষেবা নিয়ে ওই হাসপাতালে সমস্যার অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পুরোপুরি দায়ী করতে পারি না। এই বিভাগের যে সব চিকিৎসক রাতে কাজ করতে চাননি, সুপার তাঁদের শো-কজও করেছেন। আমরা কলকাতায় ফিরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” তাঁর কথায়, “সিএমওএইচ-কে মাসে অন্তত এক বার হাসপাতাল পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাসপাতাল পরিদর্শনের রিপোর্ট পেশ করা হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.