তথ্য মিলল সমীক্ষায়
অপরিষ্কার যন্ত্রে সংক্রমণ হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপিতে
লকাতার বেশ কিছু নামী বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করার গোটা প্রক্রিয়াটাই ভুলে ভরা এবং অবৈজ্ঞানিক বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে সুস্থ হতে হাসপাতালে এসে উল্টে সংক্রমণে বিপন্ন হচ্ছে অসংখ্য রোগীর স্বাস্থ্য। অস্ত্রোপচারের পরে এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ক্ষতস্থান ফুলে-ফেটে পুঁজ বেরিয়ে রোগীকে শয্যাশায়ী হতে হচ্ছে। অনেককে আবার দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে।
‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর আউটডোরে সংক্রমণ নিয়ে আসা রোগীদের উপরে করা এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার অন্তত সাতটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে দিনে ১২-১৪টা করে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তাড়াহুড়োয় কোথাও একটা অস্ত্রোপচারের পরে ল্যাপারোস্কোপির যন্ত্রের খাঁজে ঢুকে থাকা রক্ত-মাংস ঠিকমতো পরিষ্কার না-করেই তা অন্য রোগীর শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। কোথাও অটোক্লেভ করা পরিস্রুত জলের বদলে ট্যাঙ্কের সাধারণ জলে যন্ত্র ধুয়ে পরের অস্ত্রোপচার করছেন চিকিৎসক। তাতেই সংক্রমণ হচ্ছে রোগীদের। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এ বিশেষ রচনা হিসেবে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে যন্ত্র জীবাণুমুক্ত করার এই শোচনীয় প্রক্রিয়ার কথা প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে পুরো বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্তাদের গোচরে এনেছেন ট্রপিক্যালের চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শুধু নাম-কা-ওয়াস্তে সতর্ক করে লাভ কতটা? অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া সংক্রমণ-মুক্ত করতে বাস্তবে কতটা সক্রিয় স্বাস্থ্য দফতর?
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ স্বীকার করছেন, যদি কোনও হাসপাতাল এই জীবাণুমুক্তকরণের শর্ত না-মানে, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে তেমন কিছু বলা নেই। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “প্রতিটি হাসপাতালের ল্যাপারোস্কোপির যন্ত্র পরীক্ষা করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অত লোক নেই। এটা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেই দেখতে হবে। রোগীকেও সচেতন হতে হবে।”
ট্রপিক্যালের সমীক্ষা বলছে, ২০১১-র ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২-র নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ মাসে কলকাতার ‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর চিকিৎসকেরা আউটডোরে এমন অন্তত ২০০ জন রোগী পেয়েছেন, যাঁরা ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের কবলে পড়েছেন। শহরের সাতটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে এঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এঁদের মধ্যে একই হাসপাতালে, একই দিনে পরপর অস্ত্রোপচার হয়েছে, এমন অনেক রোগীও আছেন। এঁদের ৫৩ জনের সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছিল।
সমীক্ষকদের অন্যতম, ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিভূতি সাহার কথায়, “ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্র প্রতি বার ব্যবহারের পর অটোক্লেভ করা জলে ভাল করে ব্রাশ দিয়ে ঘষে সাফ করা উচিত। কিন্তু অনেকে সোজা কলের তলায় ফেলে কোনও মতে যন্ত্র ধুচ্ছেন। এতে যন্ত্রের ভিতরে রক্ত-মাংস লেগে থাকছে।”
অভিযোগ স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত হাসপাতালগুলির অনেক সার্জেন। বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালের অন্যতম সার্জেন বলেন, “অটোক্লেভ করা জলে যন্ত্র অন্তত ৪৫ মিনিট ধুতে হবে। এই সময়টাই হাসপাতাল দেয় না। কারণ, তাতে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমে যেতে পারে।” আলিপুরের এক হাসপাতালের সিনিয়র সার্জেনের বক্তব্য, “ফর্মালিন চেম্বারে যন্ত্র জীবাণুমুক্ত করার কথা অনেকে বলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে একটা অস্ত্রোপচার করে প্লাস্টিকের ব্যাগে কয়েকটা ফর্মালিন ট্যাবলেট ফেলে তার মধ্যে যন্ত্র ভরে গাড়ির পিছনে নিয়ে অন্য হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে দৌড়োন।”
আবার মধ্য কলকাতার এক হাসপাতালের সার্জেনের মতে, “রাসায়নিকে কত ক্ষণ যন্ত্র ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, তা প্রায় কেউই স্পষ্ট জানেন না। কেউ ১৫ মিনিট রাখছেন, কেউ ১০ মিনিট।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.