|
|
|
|
বড়দিন ফিকে বন্ধ দলমোড়ে |
নিলয় দাস • বীরপাড়া |
বড়দিনে আনন্দ নেই দলমোড়ে। বাগান জুড়ে এখন বিষাদের সুর। মাঝেমধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বীরপাড়ার বন্ধ দলমোড় চা বাগানে। পাঁচ মাস ধরে বন্ধ ওই বাগানে এখনও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই বাগানে রবিবার শেষ রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাগানে ৩ জন মারা গিয়েছে। মৃতদের বাড়ির লোকজনদের দাবি, অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার রাতে মারা গেছেন বাগানের নীচু লাইনের বাসিন্দা জেঠি দামাই (৭২)। রবিবার বড় লাইনের বাসিন্দা পলেস্তিকা ওঁরাও (৬২) মারা যান। জেঠি দেবী বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন বলে দাবি জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকারের দাবি। তবে তিনি পলেস্তিকার মৃত্যুর কারণ জানতে পারেননি। বাগান সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার মারা গেছে ১২ বছর বয়সী বালিকা লাখপতি ওঁরাও। সে কিছুদিন ধরে জন্ডিসে ভুগছিল।
বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য সপ্তাহে দুদিন শিবির করছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখানে লোকজন ঠিক মত লোকজন আসছেন না বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান। খুব শীঘ্রই লিফলেট ছড়িয়ে ও মাইকে ঘোষণা করে শিবিরের কথা শ্রমিক মহল্লাতে ঘোষণা করা হবে বলে স্বপনবাবু জানিয়েছেন। বাগানের পানীয় জল এবং ১০০ দিনের কাজ শুরু করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের অন্ত্যোদয় যোজনার চাল বিলি করা হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র।
বাগানের বাসিন্দারা জানান, তাঁরা চরম দুরবস্থায় রয়েছেন। কচু ও শাক সেদ্ধ করে খাচ্ছেন তাঁরা। বাড়ছে পেটের অসুখ। অনেকে কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশ ভুটানের গমটু শহরে। সেখানকার পাথর খাদানে বা রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ পেলে সেদিনের মত খাবার জুটছে। বাগানের বাসিন্দা তথা এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য দশরাম টোপ্পো বলেন, “সত্তর শতাংশ মানুষ ঠিকঠাক পানীয় জল পাচ্ছেন না। শিবিরে তেমন চিকিৎসা হচ্ছে না। পঁচিশ দিন আগে ১৪ দিন ১০০ দিনের কাজ হয়েছে। সেই টাকাও পুরোপুরি মেলেনি।” দলমোড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ আরএসপি-র শ্রমিক ইউনিয়ন ইউটিইউসি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ। ইতিমধ্যে তিনি দল মোড় চা বাগানের দুরবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। অশোকবাবু বলেন,“শ্রমিকদের পাশে রাজ্য সরকারের দাঁড়ানো উচিত। এমন চলতে পারে না।” খুব দ্রুত বন্ধ বাগানের মৃত্যু ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দলমোড় বাগানের বাসিন্দা পারনো মুণ্ডা বলেন, “ভুটানে গিয়ে বা নদীতে কাজ না পেলে আমাদের খাবার জোটে না। বাগান না খুললে আমাদেরও তিল তিল মরতে হতে পারে।” |
|
|
|
|
|