আর্জি নিয়ে কলকাতায়
প্রয়োজনে বাগান চালাবেন তাঁরাই, ঘোষণা শ্রমিকদের
রকার বা মালিক যদি চালাতে না চায়, তবে শ্রমিকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক বন্ধ এবং রুগ্ণ চা বাগানগুলি। শ্রমিকেরাই চালাবেন সেই বাগান। এই দাবির কথা শনিবার কলকাতায় এসে বলে গেলেন জলপাইগুড়ি জেলার বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের দু’টি বন্ধ এবং একটি রুগ্ণ চা বাগানের ২৮ জন শ্রমিক।
সম্প্রতি একটি ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে ওই শ্রমিকেরা কলকাতায় এসে দেখা করেন রাজ্য ফুড কমিশনার (যিনি খাদ্যের অধিকার আইনের আওতায় যে মামলাগুলি সুপ্রিম কোর্টে চলছে, তার রাজ্যের নোডাল অফিসারও), শ্রম কমিশনার ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এ বিষয়ে সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ার জানান, ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, বন্ধ চা বাগানের ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০০৮ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের ‘বিপিএল’ তালিকাভুক্ত করা হবে। এখনও সে ব্যাপারে সরকারি তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না বন্ধ বাগানের শ্রমিকেরা। অনুরাধা জানান, ফুড কমিশনার বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওই ব্লকের ঢেকলাপাড়া, দলমোড়, রামঝোরা চা বাগানের শ্রমিকেরা। ঢেকলাপাড়া বাগানের প্রতিনিধি সিনা ওঁরাও জানান, ১০ বছরেরও বেশি সময় বন্ধ তাঁদের বাগান। অপুষ্টি ও অভাবে সব থেকে বেশি ‘অনাহারে’ মৃত্যু হয়েছে এই বাগানেই। গত পাঁচ বছরে এই বাগানে অনাহারে মোট ৬৬ জন শ্রমিক এবং তাঁদের পরিজনের যেমন মৃত্যু হয়েছে, তেমনই কয়েকজন শ্রমিক আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, একমাত্র বাগান খোলা থাকলেই বাগানের অফিসে ডাক্তার বসেন। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের তাই অসুখে ডাক্তার দেখানোর উপায় নেই। পেট চালাতে তাই তৈরি হয়েছে বিকল্প জীবিকা। সিনার কথায়, “আয়ের এক মাত্র উপায় নদী থেকে পাথর তুলে ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করা। বাচ্চারা রাত তিনটের সময় উঠে নদীতে যায় পাথর তুলতে। বিকেল পর্যন্ত পাথর তুলে দিনে ২০ থেকে ৩৫ টাকা পায়। ঠিকাদারের গাড়ি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। না হলে পাথর চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়।” সিনার বক্তব্য, গোটা গ্রাম দিনের পর দিন নদী থেকে পাথর কুড়োনোর কাজ করায়, ক্রমশ পাথর কমছে নদীতে। গ্রামের মধ্যে ২১ জন বাচ্চার বাবা-মা নেই। ১৮ বছরের কম বয়স হওয়ায়, ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজের সুযোগও পাচ্ছে না তারা।
বন্ধ দলমোড় বাগানের শ্রমিক রাজীব বিশ্বকর্মার অভিযোগ, সামান্য পানীয় জলও পাচ্ছেন না তাঁরা। অনুরাধা জানান, আপাতভাবে অনেক বাগান বন্ধ দেখা গেলেও সরকারি ভাবে জলপাইগুড়িতে মাত্র দু’টি ও দার্জিলিঙে মাত্র তিনটি বাগান বন্ধ। অন্য বাগানগুলির কোনওটিই সরকারি ভাবে বন্ধ না হওয়ায়, বন্ধ শিল্পের শ্রমিকদের পরিবার সহায়তার সরকারি প্রকল্পেরও সাহায্য পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। বিশ্বজিতের কথায়, “আমরা পেট ভরে খেতে চাই, আর মানুষের মতো বাঁচতে চাই। কলকাতায় এসেছি শুধু এই কথাটুকু বলার জন্য।” তাই শ্রমিকদের এখন একটাই কথা, মালিক না চাইলে সরকার তাঁদের হাতে বাগানগুলি দিয়ে দিক। তাঁরাই চালাবেন বন্ধ এবং রুগ্ণ চা বাগানগুলি। কারণ তাঁদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এমনটাই জানালেন ‘বাগান বাঁচাও সমণ্বয় কমিটি’র তরফে দেবজিৎ দত্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.