আমির খানের ‘সরফরোশ’ ছবির সেই দৃশ্য। জঙ্গল-দস্যু ভিরন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে অস্ত্র কারবারি সুলতানকে একটি একে-৪৭ রাইফেল দেখিয়ে বলছে, এটা তখনই খতরনাক, যখন এতে গুলি থাকবে। কার্তুজ ছাড়া এ স্রেফ খেলনা। তাই যে ভাবেই হোক, বুলেট চাই-ই চাই।
এখন মাওবাদীদের অবস্থা অনেকটা ভিরনের মতোই। দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টের দাবি, মাওবাদী অস্ত্রাগারে বিস্তর স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র মজুত থাকলেও কার্তুজ বাড়ন্ত। এতটাই যে, যেন-তেন-প্রকারেণ কার্তুজ জোগাড় করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবং বুলেট লুঠ করতেই মাওবাদীরা পুলিশ বা আধা ফৌজের উপরে যে কোনও মুহূর্তে বেপরোয়া হামলা চালাতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মন্ত্রক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা: বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব কমে আসায় মাওবাদীদের তহবিলে টান পড়েছে। ফলে উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের থেকে তারা আগের মতো ব্যাপক হারে কার্তুজ কিনতে পারছে না। উপরন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে তাদের বিপুল কার্তুজ। শুধু পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলেই গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় পৌনে তিন হাজার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। তা ছাড়া বুলেটের জোগান নিশ্চিত করার ভার যে সব নেতার হাতে ছিল, তাঁদের অনেকেই আর নেই। যেমন, কিষেণজি নিহত হয়েছেন, সাদানালা রামকৃষ্ণ ও মোহন বিশ্বকর্মা জেলে। নিছক বুলেটের অভাবে কিছু জায়গার দখল ছেড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছে মাওবাদী গেরিলারা।
এবং মন্ত্রকের দাবি, কার্তুজ-ভাণ্ডারে এই সঙ্কট কাটাতে মাওবাদীরা এখন বড় ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। যে কারণে তারা পুলিশ-লাইন বা নিরাপত্তা শিবিরে হামলার ছক কষছে। ১০ ডিসেম্বরের সতর্ক-বার্তাটি পশ্চিমবঙ্গ-ছত্তীসগঢ়-অন্ধ্র-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হয়েছে, যা পেয়ে এ রাজ্যের পুলিশ-কর্তারা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “আমরা জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনীকে সতর্ক করেছি। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।” কিন্তু গত এক বছরে তো পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী-প্রতিপত্তি অনেকটা কমেছে বলে পুলিশের দাবি! তা হলে উদ্বেগের কারণ কী?
রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) এডিজি বাণীব্রত বসুর ব্যাখ্যা, “এ রাজ্যে দাপট থাকাকালীনও মাওবাদীরা ঝাড়খণ্ড- ওড়িশারও স্কোয়াড সদস্যদের নিয়ে হামলা-দল গড়েছিল। যেমন সাঁকরাইল থানা, শিলদার ইএফআর শিবির কিংবা গিধনি বাজারে ইএফআর জওয়ানদের উপরে আক্রমণের ক্ষেত্রে।” এখনও তার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দা-কর্তারা। বিশেষত যখন আকাশ, বিকাশ, রঞ্জিত পাল, জয়ন্ত, মদন মাহাতো বা শ্যামলের মতো মাওবাদী নেতা ও তাদের স্কোয়াডগুলোকে এখনও যৌথবাহিনী কব্জা করতে পারেনি। গোয়েন্দারা জেনেছেন, পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার বাছাই কিছু মাওবাদী গেরিলাকে নিয়ে তৈরি প্রায় পঞ্চাশ জনের একটি সশস্ত্র স্কোয়াড বেলপাহাড়ির শিমুলপাল ও আশপাশে আনাগোনা শুরু করেছে।
ফলে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না রাজ্য পুলিশ। সিপিএমের লালগড় লোকাল কমিটির সদস্য তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “গত তিন-চার দিনে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে! এমনটা গত এক বছরে চোখে পড়েনি।” |