ফেল করেও পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবির ভাইরাস একের পর এক স্কুলে ছড়িয়ে পড়ছে সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠ থেকেই। আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নমনীয় মনোভাবের জন্যই এটা ঘটছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও যে ওই সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন, সোমবার তিনি নিজেই সেটা পরিষ্কার করে দেন। শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করেই থেমে যাননি। সন্তোষপুরের ওই স্কুলে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতে সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি।
সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শেষে আচার্য-রাজ্যপাল বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রধানকে ডেকে পাঠিয়েছি। ওঁর বক্তব্য শোনার পরেই যা বলার বলব।” সংসদ-কর্তৃপক্ষ নমনীয় মনোভাব দেখানোর ফলেই কি বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা এতটা গোলমাল করার সাহস পেয়েছেন? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি রাজ্যপাল। তবে বুঝিয়ে দেন, এ-সব ব্যাপারে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নারায়ণন বলেন, “এক জন প্রাক্তন পুলিশকর্মী হিসেবে আমি দৃঢ়তায় বিশ্বাস করি।”
সংসদ-সভাপতি মুক্তিনাথবাবু অবশ্য জানান, রাজ্যপালের কাছ থেকে এখনও ডাক পাননি তিনি। সভাপতি বলেন, “কোনও চিঠি বা টেলিফোনেও রাজ্যপালের কাছ থেকে ডাক পাইনি। পেলে ওঁর সময়মতো দেখা করতে যাব।” রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারাও বলেন, সংসদ-প্রধানকে রাজ্যপালের তলবের ব্যাপারে তাঁদের কিছু জানা নেই।
রাজ্যপালের উদ্বেগের মধ্যেই এ দিন রানাঘাটের আনুনিয়া হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা ১৯ জন ছাত্র দেড় ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন প্রধান শিক্ষক রাজীব নিয়োগীকে। স্কুল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই ছাত্রদের পাশ করাননি। রাজীববাবু পরে বলেন, “এরা প্রায় প্রতিটি বিষয়েই ভীষণ কম নম্বর পেয়েছে। তাই পাশ করানো হয়নি। বিক্ষুব্ধ ছাত্রেরাও বিষয়টি বুঝতে পেরে বিক্ষোভ তুলে নিয়েছে।”
পাশ করানোর দাবিতে স্কুলে স্কুলে বিক্ষোভের জন্য উদ্বেগ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-অসন্তোষ নিয়েও সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি চললেও এই সংক্রান্ত তর্কবিতর্ক আলোচনাসভা, বিতর্কসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। আলোচনাকক্ষ থেকে মতবিরোধ ক্যাম্পাসের পথে ছড়িয়ে পড়লে তাতে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয় বলে মনে করেন রাজ্যপাল। তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের ঘটনার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ‘বিতর্ক-প্রবণ’ হয়ে উঠেছে।
এ দিনই আবার পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম কলেজের প্রাতঃ বিভাগের অধ্যক্ষা নির্ঝরিণী চক্রবর্তীকে ঘণ্টা চারেক ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এক দল ছাত্রী। বিএ, বিএসসি-র প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের প্রায় ৪৫ জন ছাত্রীর ফল আশানুরূপ না-হওয়ায় তাঁরা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করার দাবি জানান অধ্যক্ষার কাছে। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘এ ভাবে সুপারিশ করা যায় না। তা ছাড়া ছাত্রীদের আবদার ছিল, আমাকেই নম্বর বাড়িয়ে দিতে হবে! নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের কথা বোঝাতে যাওয়ায় ছাত্রীরা ঘেরাও করল!” শীতের ছুটির পরে কলেজ খুললে আলোচনার আশ্বাস পেয়ে ছাত্রীরা শেষমেশ ঘেরাও তুলে নেন। গোলমাল হয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগেও। ন্যূনতম উপস্থিতি না-থাকলেও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে বাংলার বিভাগীয় প্রধানের ঘরে তালা দিয়ে তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান কিছু পড়ুয়া। উপাচার্য অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আমরা সব সময়েই নমনীয়। ২৬ ডিসেম্বর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।” |