চক্রের তিন পাণ্ডা গ্রেফতার
ছ’হাজার জাল সরকারি চাকরি, ঠগ ধরলেন মন্ত্রীই
লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে মুড়ি-মুড়কির মতো বিলি হয়েছিল দেদার চাকরি। যে জন্য রাতারাতি তৈরি হয়েছিল ছ’হাজার ‘সরকারি’ পদ। চাপরাশি থেকে ডিরেক্টর কী নেই তার মধ্যে? প্রতারণা বিশ্বাসযোগ্য করতে সচিব থেকে মন্ত্রীর লেটারহেড, এমনকী সইও অবলীলাক্রমে জাল করা হয়েছিল। বাকি ছিল শুধু মন্ত্রীকে ঘোল খাইয়ে ছ’হাজার চাকুরের বেতনের বন্দোবস্ত করা।
আর তা করতে গিয়েই ধরা পড়ে গেল ঠগ-চক্র। গণ্ডগোলের আঁচ পেয়ে খোদ মন্ত্রীমশাই-ই যে ফাঁদ পেতেছেন, জালিয়াতরা তা টের পায়নি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে আপাতত তিন ঠগের স্থান হয়েছে লালবাজারে। সৌজন্যে, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যিনি বলছেন, “বড়দিনের বাজারে আমাকে সান্তা-টুপি পরানোর ব্যবস্থা ওরা প্রায় করেই ফেলেছিল! শেষ মুহূর্তে আমার সন্দেহ হয়। এক জনকে আমার নব মহাকরণের চেম্বার থেকেই পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে।”
সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সরকারি চাকরি বিলির এত বড় চক্র তিনি দেখেননি। প্রাথমিক অনুসন্ধান সেরে পুলিশ জানিয়েছে, অন্তত ছ’হাজার ছেলেমেয়ে ওদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। চক্র ধরা পড়ল কী ভাবে?
সুব্রতবাবু জানাচ্ছেন, গত ১৯ ডিসেম্বর ‘কৃষি বিকাশ শিল্পকেন্দ্র’ নামে এক সংস্থার ক’জন প্রতিনিধি তাঁর কাছে এসে দাবি করেন, পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ সংস্থা হয়েও তাঁরা সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না, ফলে প্রায় হাজার ছয়েক কর্মীর বেতন মেটানো যাচ্ছে না। “ওরা একের পর এক সরকারি চিঠিপত্র বার করে দেখাতে থাকে।

বড়দিনের বাজারে আমাকে সান্তা-টুপি পরানোর
ব্যবস্থা ওরা প্রায় করেই ফেলেছিল! শেষ
মুহূর্তে আমার সন্দেহ হয়।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়,পঞ্চায়েতমন্ত্রী
লোকসভায় ওদের অবস্থা নিয়ে রাজ্যের সাংসদের আনা দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব ও তার জবাবে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বয়ানও দেখায়।” বলেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “আমার প্রথমেই মনে হল, দফতরের অধীন সংস্থা, অথচ অফিসাররা কেউ কিছু জানালেন না! এটা কী করে হয়!”
মন্ত্রী তৎপর হন। ডেকে পাঠান অফিসারদের। সুব্রতবাবু জানান, অফিসারেরা কেউই এমন কোনও সংস্থার হদিস দিতে পারেননি। উল্টে দেখা যায়, প্রাক্তন পঞ্চায়েত-সচিব মানবেন্দ্রনাথ রায় অবসর নেওয়ার পরেও তাঁর নামে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। তখনই বোঝা যায়, ব্যাপারটা ঠগবাজি ছাড়া কিছু নয়। পুলিশ ডাকা হয়। ডাকা হয় সংস্থার অন্যতম প্রতিনিধি বিকাশ দাসকেও। বিকাশবাবু অবশ্য কিছু গণ্ডগোল আঁচ করতে পারেননি। বরং মন্ত্রী সদয় হয়েছেন ভেবে দিব্যি হাজির হয়েছিলেন সুব্রতবাবুর চেম্বারে। পুলিশ তাঁকে ধরে জেরা শুরু করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে তিনি সব কবুল করেছেন। বিকাশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। দফতরের একশো দিনের কাজ প্রকল্পের (এনআরইজিএ) কমিশনার থানায় এফআইআর করেন। তাতে কী বলা হয়েছে?
এনআরইজিএ কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার কলকাতা পুলিশে দায়ের করা এফআইআরে লিখেছেন: বীরভূমের সিউড়ির হাটজানবাজারের ঠিকানা দেওয়া ‘কৃষি বিকাশ শিল্পকেন্দ্র’ নামে সংস্থাটি সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে বেকার ছেলেমেয়েদের থেকে মোটা টাকা তুলেছে। এর সঙ্গে সরকারি কোনও দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ: মানবেন্দ্রনাথবাবু গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সচিবের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। সংস্থাটি ২৬ জুন তাঁর নামে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছে। একই ভাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন-সচিব দেবেন্দ্র কুমার, এমনকী প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নামেও ভুয়ো চিঠি বিলি করে বেকারদের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁরা হলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শক্তিপদ বাগদি, সম্পাদক অরবিন্দ কুমার এবং বিকাশ দাস। ওঁদের কাছ থেকে বহু নথিপত্র আটক করা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের হেফাজতে অন্তত কুড়িটি ক্রেডিট কার্ড, ফাঁকা নিয়োগপত্র, জাল সরকারি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। রাজারহাট, বেলদা, বীরভূম, পুণে-সহ বিভিন্ন স্থানে সংস্থার কাজকর্মের হদিস মিলেছে। সংস্থার দাবি, প্রধানমন্ত্রীর অফিস তাদের অশোকস্তম্ভ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এই সংক্রান্ত যে চিঠি তারা দেখাচ্ছে, সেটিও জাল বলে পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি। সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে এত বড় জালিয়াতি ফাঁসের ঘটনা স্মরণে আনতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের কর্তারাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.