নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯০ শতাংশ কাজ করে ফেলেছে তাঁর সরকার।
আর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে দেশের মধ্যে এক নম্বর পশ্চিমবঙ্গ।
শিয়রে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছেমতো প্রকল্পের কথা বলেছেন। যেটুকু এখনও পারেননি, তার জন্য আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র দিকে। বামেদের কায়দায় বলেছেন, “আওয়াজ তুলুন।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই তৎপরতায় বাম শিবির অভিযোগ তুলেছে, সরকারি মঞ্চকে দলীয় প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা বলছে, মুখ্যমন্ত্রী কখনও কখনও দলীয় মঞ্চকে সরকারি কাজেও ব্যবহার করছেন। যেমন হয়েছিল তেহট্টে ক্ষতিপূরণের চেক বিলির সময়। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “গণতন্ত্রের কথা বলে এখন ওরাই (তৃণমূল) দলতন্ত্র করছে! এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা অতীতে হয়নি! বাংলার মানুষ এর বিচার করবেন!”
মমতা এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সংখ্যালঘু-স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি পণ্য বিক্রির মিলন মেলার উদ্বোধন করেন। তিনিই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু গরিবদের বাড়ি তৈরির জন্য আমাদের গীতাঞ্জলি ও ইন্দিরা আবাস (কেন্দ্রীয় প্রকল্প) যোজনা রয়েছে। যাঁদের বিপিএল কার্ড নেই, তাঁদের জন্য পঞ্চায়েতের অধীনে নতুন প্রকল্প হচ্ছে। ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হবে।” ভাঙড়ে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ার ঘোষণা আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বলেন, “হাড়োয়া-মিনাখাঁ সীমানাতেও এই ধরনের হাসপাতাল হবে।” ওই হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে অবশ্য তাঁর দফতর কিছু জানে না। মমতার ঘোষণা, “শান্তিনিকেতনের কাছে বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার তৈরি করব। গ্রামের ছেলেমেয়েদের তৈরি ছোটখাটো জিনিস বিক্রি হবে সেখানে। রাজারহাটেও একটি বাজার হবে। বাজারটাকে ধরতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় সংখ্যালঘু সংরক্ষণ বিল, উর্দু ভাষাকে স্বীকৃতি, ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হজ টাওয়ারের জন্য জমি, সংখ্যালঘুদের জন্য সব জেলায় ভবন তৈরির পরিকল্পনা কোনও কিছুই বাদ যায়নি। সংখ্যালঘু উন্নয়নে তাঁর সরকার কত সক্রিয়, তা বোঝাতে যাবতীয় ‘সরকারি তথ্য’ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু প্রকল্পে টাকা দেয় কেন্দ্র। আর কিছু প্রকল্প চলছে বাম জমানার।
সংখ্যালঘু উন্নয়নে বহুবিধ উন্নয়ন প্রকল্প বা এমএসডিপি-তে ভাল কাজের জন্য দিল্লি তাঁর সরকারকে বাড়তি ৩৮০ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও দিল্লির ‘বঞ্চনা’য় তিনি ক্ষুব্ধ। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম ধার করলেই (কেন্দ্র) অনুমতি দিয়েছে। আমাদের বলেছে, ধার করতে পারবে না!” স্বনির্ভর প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সব চেয়ে কম ঋণ পায় বলে জানান মমতা। বলেন, “আমরা কি ভিখিরি? কেন্দ্রকে রাজস্ব দিই না? আমাদের আয় বছরে ২১ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্র কেটে নিচ্ছে ২৬ হাজার কোটি। মাইনে দেব কী করে?” প্রতিকার কী? মমতা বলেন, “বাংলাকে গর্জে উঠে বলতে হবে, বন্ধ করো সুদ নেওয়া। তুমি সুদের কারবারি হয়ে গিয়েছ। আমরা সুবিচার চাই।” |