|
|
|
|
রজতজয়ন্তী ম্যাচের তিন চরিত্রই নেই ইডেনে |
গৌতম ভট্টাচার্য • বেঙ্গালুরু |
পঁচিশ বছর আগের ইডেনের বিকেল ফিরিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা হলেও বিকেলটা অবিকল ফিরছে না।
সিএবি প্রাণপণ চেয়েছিল, ৩ জানুয়ারির ভারত-পাকিস্তান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে একটা গভীর নস্ট্যালজিয়াও গুঁজে দিতে। তা হল, ইডেনে হওয়া প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ ভারত বনাম পাকিস্তানের একটা ফ্ল্যাশব্যাক করাতে। কিন্তু ম্যাচের তিন জরুরি চরিত্রকেই তারা সে দিন ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
এমনিতে রীতিমতো মহার্ঘ্য হয়ে পড়া ইডেনের ৩ জানুয়ারির টিকিট যাঁরা সংগ্রহ করতে পারবেন, তাঁরা দু’ইনিংসের বিরতিতে অনেক প্রাক্তনকেও দেখে ফেলবেন। খোলা গল্ফকার্ট করে ঘোরানো হবে দু’দেশের অনেক বরেণ্যকে। সীমান্তের ওপার থেকে প্রাক্তন সব পাকিস্তান অধিনায়ক। আক্রম-মিয়াঁদাদ-জাহির আব্বাস-ওয়াসিম বারি, সাদিক মহম্মদ, মুস্তাক মহম্মদ, ইমতিয়াজ আহমেদ এবং ইনজামাম উল হক। ভারত থেকে থাকবেন কপিল, গাওস্কর, শ্রীকান্ত, বেদী, বেঙ্গসরকর, বেঙ্কটরাঘবন, সৌরভ, রাহুল, শাস্ত্রীরা। অথচ দেখা যাবে না ’৮৭-র ইডেনের তিন গুরুত্বপূর্ণ মুখকে। সে দিনের পাক অধিনায়ক ইমরান খান। সে দিনের ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া সেলিম মালিক (৩৬ বলে ৭২ ন:আ:)। আর আজহারকে (৪৯ রান)। |
|
সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের তিন চরিত্র। ইমরান (অধিনায়ক)।
সেলিম মালিক (৩৬ বলে ৭২ ন.আ.)। আজহারউদ্দিন (৪৯ রান)। |
সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া আপ্রাণ চেয়েছিলেন ইমরানকে আনতে। ইমরানের সঙ্গে কথাও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু সমস্যা হল যে, আমন্ত্রিত অধিনায়করা সবাই আসছেন পাকিস্তান বোর্ডের মাধ্যমে। ভিসার জন্য তাঁরা যে আবেদন করছেন, তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া আছে পাকিস্তান বোর্ডের চিঠি। ইমরানের ক্ষেত্রে সেই চিঠি দিতে পাকিস্তান বোর্ড নারাজ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বহু বছরই সরকার দ্বারা সম্পূর্ণ শাসিত। এবং ইমরান হলেন বিরোধীদের আপাতত প্রধান মুখ। তাই বিশ্বকাপজয়ী পাক অধিনায়ককে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে পাক বোর্ডের প্রচুর অ্যালার্জি রয়েছে। পাক বোর্ডের তীব্র অনাসক্তি দেখে সিএবি-ও এখন পিছিয়ে গিয়েছে। ইমরান নিজেও সম্ভবত বুঝেছেন সমস্যার কথা। পাক মিডিয়ায় সোমবার রাতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “হ্যাঁ, ইডেন থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু রোজ জনসভা করা নিয়ে আমি এত ব্যস্ত যে, কলকাতা যেতে পারছি না।”
ইমরানকে নিয়ে সমস্যা যদি রাজনৈতিক হয়, সে দিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ সেলিম মালিককে নিয়ে সমস্যাটা অন্য। সেই গড়াপেটার জন্য তাঁর প্রতি আজীবন সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত লাহৌর আদালত তুলে নিলেও পাক বোর্ড বা আইসিসি তোলেনি। বোর্ডের চোখে এখনও তিনি তাই শাস্তি ভোগ করতে থাকা অপরাধী। শাস্তিমুক্ত নন। কয়েকবার তাই পাকিস্তান টিমের ব্যাটিং কোচ হওয়ার আবেদন করেও মালিক সফল হননি। এ দিন সিএবি-তে যখন লেজার শো আর আতসবাজির রিহার্সাল চলছে, তখন লাহৌরে মালিক বলছেন, “শুনেছিলাম, সিএবি আমায় ডাকবে। কই, কলকাতা থেকে কেউ ফোন করল না তো।”
আসলে করব-করব করেও সিএবি করতে পারেনি কারণ, তারা আজহারকে ইডেনে আনার ব্যাপারে বোর্ডের ছাড়পত্র জোগাড় করতে পারেনি। সিএবি কর্তাদের ধারণা ছিল আজহারের ওপরও যেহেতু আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে, প্রাক্তন অধিনায়কদের সঙ্গে তাঁকেও গল্ফকার্টে ঘোরানো হোক। আফটার অল তাঁর নেতৃত্বে ভারত ইডেনে হিরো কাপ জিতেছে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছে। প্লাস ’৮৭-র সেই টিমেও তিনি ছিলেন। কিন্তু বোর্ড উৎসাহী নয় দেখে সিএবিকে হাত গুটিয়ে নিতে হয়েছে। ’৮৭-র ম্যাচের তিন রত্ন তাই ইডেনে অনুপস্থিত থাকছেন। আর একজনকে ডাকা যেত। ভিভিএস লক্ষ্মণ। অধিনায়ক না হলেও ইডেনের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। সোমবার রাত পর্যন্ত লক্ষ্মণের কাছে কোনও আমন্ত্রণপত্র পৌঁছয়নি। আরও এক প্রাক্তন অধিনায়ককে আনতে সিএবি কর্তারা অত্যন্ত ব্যাকুল। তাঁকে আনার ব্যাপারে রাজনৈতিক বা গড়াপেটা সংক্রান্ত কোনও নিষেধাজ্ঞাই নেই। ইডেন জনতারও যে তাঁকে দেখে খুশিতে মন ভরে যাবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি সচিন তেন্ডুলকর ধরে নেওয়া যায় এই পরিস্থিতিতে বোর্ডের অনুষ্ঠানে আসবেন না। ৩ জানুয়ারি তাই ইডেন নস্ট্যালজিয়ায় টইটম্বুর হতে হতেও কোথাও যেন অপূর্ণ থেকে যাবে। |
|
|
|
|
|