ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধের সমস্যা হল এত দিন পরে পরে খেলা হয় যে প্রতিটা ম্যাচে জিততেই হবে, এমন একটা চাপ তৈরি হয়ে যায়। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সংখ্যা বাড়লে চাপটা কমবে। তাতে দু’টো টিমেরই উপকার। এই মুহূর্তে অবশ্য আলোচনার একটাই বিষয়বস্তু, সচিন তেন্ডুলকরের ওয়ান ডে অবসর।
প্রেম ভোলা সব সময় খুব কঠিন কাজ। ভোলার একমাত্র উপায়, তার থেকেও তীব্র, তার থেকেও বেশি অবেগঘন একটা নতুন প্রেমে পড়া! সচিনের ক্ষেত্রে এই প্রেম ক্রিকেট আর ভারতীয় ফ্যানদের সঙ্গে একটা গভীর লাভ-অ্যাফেয়ার। কৈশোর থেকে শুধু এই প্রেমটাকেই জেনে এসেছে। ক্রিকেট খেলা আর ক্রিকেটীয় উৎকর্ষে পৌঁছনোর জন্য ওর সীমাহীন আবেগ সবাই দেখেছেন, অনুভব করেছেন। এত কিছু এক কথায় ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়। ব্যাপারটা ঠিক নিজের কর্মজীবনে ইতি টানা নয়। বরং মনে হয়, ঊনচল্লিশ কি চল্লিশ বছর বয়সে এসে জীবনটাই শেষ করে দিলামসিদ্ধান্তটা নেওয়া সত্যিই ভীষণ কঠিন। ধারাভাষ্যকার হিসাবে বা মিডিয়ার কাজকর্ম করে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা মারকাটারি একটা ম্যাচের অনুভূতির ধারেকাছেও আসে না।
যে কোনও খেলোয়াড়ের জন্যই খেলাকে গুডবাই বলা কঠিন। সচিনের ক্ষেত্রে সেই কঠিন কাজটাকে কঠিনতম করে তুলেছে দু’টো ফ্যাক্টর। প্রথম, ক্রিকেটের বাইরে সচিনের কোনও জীবন নেই। দ্বিতীয়টা অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। যাঁদের দু’টো প্রজন্ম গত কুড়ি বছর ধরে ওর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছে। সচিনের সাফল্যে উৎসবে মেতেছেন, ওর ব্যর্থতায় কষ্ট পেয়েছেন। সচিনের জন্য এত দিন এটা ছিল ওর সারা জীবনের সম্পর্ক। সেটা ভেঙে এগিয়ে যেতে হলে সচিনকে নতুন প্রেম খুঁজে নিতে হবে, যেটা একই রকম সর্বগ্রাসী। যা ওকে তৃপ্তি দেবে। যা নিয়ে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও একই রকম উদ্দীপনা অনুভব করতে পারবে। |
তবে এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। শুধুমাত্র ওর অবসর নিয়ে।
এই মুহূর্তগুলোতেই খেলোয়াড়ের কেরিয়ারের মূল্যায়ন করা হয়। আর নিঃসন্দেহে সচিন স্পেশ্যাল। ক্ষণজন্মা প্রতিভা। অবিশ্বাস্য রকম পরিশ্রমী আর একাগ্র। স্কিল, মানসিকতা এবং নিজেকে ক্রমাগত ঘষেমেজে আরও উজ্জ্বল করে তোলার বিরল মিশেলের জন্যই সচিন এত জনপ্রিয়। এর সঙ্গে ওর নম্র স্বভাব যোগ করুন। বিশ্ব জুড়ে ওর মতো সমর্থন আর ভালবাসা কম খেলোয়াড় পেয়েছে।
ওকে ওর জীবনের প্রথম সফরে খেলতে দেখেছিলাম। বিশ্বমানের পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ওর অবিশ্বাস্য ব্যাকফুট ড্রাইভ দেখে বুঝে গিয়েছিলাম, এই ছেলেটা বিশেষ প্রতিভা। কিন্তু ও যে এত দূর যাবে, বুঝিনি। আগেও বলেছি, ইনজামাম আমার দেখা সবচেয়ে প্রতিভাবানদের অন্যতম। কিন্তু ওর মধ্যে সচিনের একাগ্রতা আর নিবেদন ছিল না।
সচিন এমন একটা ফর্ম্যাট থেকে সরে দাঁড়াল, যে ফর্ম্যাটটাকে ও এত দিন দাপটের সঙ্গে শাসন করেছে। এখন টেস্টে সচিন কী করে সেটা দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব থাকবে। আজকের ম্যাচে যে কেউ জিততে পারে। টি-টোয়েন্টির ফর্ম্যাটটাই এমন। পাক স্পিনাররা জানে ওদের বিশ্বের সেরা স্পিন-খেলিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বল করতে হবে। উমর গুলকে সাহায্য করার মতো দ্বিতীয় পেসার থাকলে ভাল হত। কিন্তু তা না হওয়ায় স্পিনারদেরই ভারতীয়দের আটকাতে হবে। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিপর্যয়ে ধোনিদের ঘুরে দাঁড়ানোর জেদটা নিশ্চয়ই বাড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ-প্রস্তুতির জন্য টেস্ট ক্রিকেট সেরা মঞ্চ। তাই আজ খুব সামান্য হলেও ভারতই এগিয়ে। কারণ ওরা যুদ্ধের জন্য অনেক বেশি তৈরি। |