বড়দিনের মুখে ক্ষোভে গজরাচ্ছে মণিপুর
ড়দিনের উৎসবের প্রাক্ মুহূর্তে এ যেন এক অন্য মণিপুর। যে সময় ইম্ফল-সহ মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা কেক-আলো-তারা-সান্তাক্লজ নিয়ে মেতে থাকার কথা, সেই সময় গোটা রাজ্যটাই যেন ফুটন্ত ভিসুভিয়াস। গোটা মণিপুর উপত্যকা জুড়ে জারি করা হয়েছে কার্ফু। গুলিতে আলোকচিত্রী দ্বিজমণির নিহত হওয়ার ঘটনায় বরখাস্ত করা হয়েছে দুই পুলিশ ও সাত গ্রামরক্ষীকে। গড়া হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু এ মুহুর্তে এগুলো নেহাতই কাগুজে তথ্য। বাস্তব হল, দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর সামগ্রিক অবহেলার বিরুদ্ধে সুনামির ঢেউয়ের মতোই গর্জে উঠেছে মনোরমা-চানুদের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যটি।
মনোরমা থেকে মোমোকো, নাকি, মোমোকা থেকে মনোরমা? সাল-তারিখের নিরিখ নয়, মোমোকোর শ্লীলতাহানিতে জড়িত থাকা জংলা উর্দিটাই দুই ঘটনাকে এক মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের গুলিতে চিত্র সাংবাদিকের মৃত্যু, শর্মিলা চানুর আফস্পা-বিরোধী আন্দোলনকে ফের তুলে এনেছে পুরোভাগে। প্রেক্ষিত পৃথক। ঘটনায় জড়িতদের চরিত্র ভিন্ন। তবু, মোমোকোর শ্লীলতাহানির ঘটনা মণিপুরে একটা অনুঘটকের কাজ করল। সেই সঙ্গে দিল্লির অনুষঙ্গ মিলিয়ে মণিপুরিদের ছাইচাপা আগুনের একটা বিস্ফোরণ দেখছে সরকার ও পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, নাগা ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে জনরোষ মিশে গিয়েছে প্রাক বড়দিনের মণিপুর উপত্যকায়।
মণিপুরে সমগ্র উপত্যকায় জারি হওয়া কার্ফুর ধাক্কায় বড়দিনের বাজারই কেবল অসমাপ্ত থাকেনি, মইতেই বনাম নাগা সংঘর্ষের সম্ভাবনাটাকেও ফের উস্কে দিয়েছে। বর্তমান রাজ্যে ১৮।১২।২০১০, ১১।০৭।২০০৪ এবং ২।১১।২০০০ তারিখগুলি এখন যেন এক সুতোয় গাঁথা। ২০০৪ সালের ১১ জুলাই আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের হাতে আটক হওয়া মনোরমার ধর্ষিত, গুলিবিদ্ধ দেহ মিলেছিল বামন কাংপুতে। প্রতিবাদে নগ্ন মিছিলে নেমেছিলেন মহিলারা। কিন্তু আজ অবধি গ্রেফতার হয়নি কোনও জওয়ান। তার চার বছর আগেই মালোম গ্রামে নিরীহ গ্রামবাসীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন চানু। সম্প্রতি খোয়াইয়ামবাঁধে ভুয়ো সংঘর্ষে এক যুবকের হত্যা, ইম্ফল থেকে তিন যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে সেনা জওয়ানদের অমানবিক অত্যাচার, লুঠের ঘটনা জনরোষ বাড়াতে থাকে। পাশাপাশি, চলছে ইনারলাইন পারমিট চালু করে বহিরাগত বিতাড়নের আন্দোলন। পার্বত্য মণিপুরকে বৃহত্তর নাগালিমের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে আই-এম। সেই ‘ষড়যন্ত্র’র বিরুদ্ধেও ফুঁসছে মণিপুর।
সব ক্ষেত্রেই, রাজ্য সরকারের ভূমিকায় হতাশ মণিপুরবাসী। এমন পরিস্থিতিতেই ১৮ ডিসেম্বর মোমোকোর ঘটনা। যেখানে, নাগা সেনার সামরিক পোশাকে সশস্ত্র লিভিংস্টোন রাইফেলের নলর উঁচিয়ে অভিনেত্রীর মায়ের সামনে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ ছিল দর্শক। আরও এক অভিনেত্রী ও গায়ককে লক্ষ্য করে গুলি চালায় লিভিংস্টোন। অভিযোগ, তারপরেও সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির প্যাঁচে পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করে কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করে। সেই সুযোগে আপাতত ‘নিখোঁজ’ অভিযুক্ত। এরই প্রতিবাদে সরব মণিপুর। ‘সেভ শর্মিলা’ আন্দোলনের পুরোধা বাবলু লোইতংবাম বলছেন, “আসলে মণিপুরবাসী কেবল দেখেছেন, কী ভাবে অত্যাচারীরা আইনের ফাঁক গলে বহাল তবিয়তে ঘুরছে। আফস্পার বলে বলীয়ান নিরাপত্তাবাহিনী একদিকে নিরীহ যুবক, সাংবাদিকদের হত্যা করে, অন্য দিকে জঙ্গিদের শ্লীলতাহানি করতে দেখেও আটকায় না। তাই এ বারের জনরোষ কোনও নেতার কথা মানছে না।” কাল রাতে খ্রিস্টানদের অনুরোধে মণিপুর ফিল্ম ফোরাম ও সুমং লীলা পরিষদ বড়দিন অবধি বন্ধ স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা হতেই ফোরামের সভাপতি সূর্যকান্ত শর্মার বাড়িতে হামলা হয়। চাপের মুখে বন্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফোরাম। আজ সকালে, নাগামাপাল, পাটসই, থারোইজামসহ উপত্যকার বিভিন্ন অংশে পথ অবরোধ, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের উপরে আক্রমণের ঘটনা ঘটায় পূর্ব ও পশ্চিম ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, থৌবাল জেলায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। বড়দিনের বাজার করতে আসা নাগারা ইম্ফলে আটকে। আতঙ্কে তাঁদের পরিবার। পুলিশ ও আধা-সেনা কনভয়ের প্রহরায় নাগাদের ইম্ফল থেকে দফায় দফায় ফেরত পাঠানো চলছে। কেক, ক্যান্ডেল নয়, ক্রিসমাস-ইভের মণিপুর বল্গাহীন আন্দোলনের শাসনে বিনিদ্র প্রহর কাটাচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.