|
|
|
|
রাজ্য সরকারের হাতে চাই পুলিশ, চাপ শীলার |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব অবিলম্বে তুলে দেওয়া হোক দিল্লির সরকারের হাতে। নয়তো এ বারের মতো আবারও বেলাগাম বিক্ষোভে বেসামাল হতে পারে রাজধানী। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়ে দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। সেখানে শীলা দীক্ষিতের সরকারের বিশেষ কোনও ভূমিকা নেই। এ দিকে গণধর্ষণ-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন দিল্লি যে ভাবে উত্তাল হয়েছে, তাতে শীলা দীক্ষিত যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। পুলিশ কমিশনার সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলে কাজ করছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনাই করছে না বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের যেমন সমন্বয় প্রয়োজন, তেমনই সমন্বয় প্রয়োজন রাজ্য সরকারের সঙ্গে পুলিশের। দিল্লি পুলিশের উপর রাজ্য সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে তবেই সেটা সহজ হবে।” দিল্লি সরকার মনে করছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ গণধর্ষণ কাণ্ডে মানুষের বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ কড়া হাতে দমন করায় তা আরও ছড়িয়ে পড়েছে, বেড়েছে তীব্রতাও। আর তার জন্য সকলে শীলা দীক্ষিত সরকারের দিকেই আঙুল তুলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, সুশীলকুমার শিন্দের কাছে দিল্লির পুলিশ কমিশনার পদ থেকে নীরজ কুমারকে বদলি করারও দাবি জানিয়েছেন শীলা। মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র, কংগ্রেস সাংসদ সন্দীপ দীক্ষিতও মত দিয়েছেন, নীরজ কুমারের পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু দিল্লির পুলিশ কমিশনার এ সব রেয়াত না করে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তাঁর যুক্তি, “আমি দায়িত্ব ছেড়ে পালানোয় বিশ্বাস করি না।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে, স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ রয়েছেন তাঁর পিছনে। তাঁরা মনে করছেন, এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব তো এ জন্য কার্যত পুলিশ কমিশনারের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন সাংবাদিক বৈঠক করে। যা থেকে স্পষ্ট, নীরজ কুমারের উপর নর্থ ব্লকের আস্থা এখনও অটুট।
আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিয়ে দিল্লির সরকারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ এই প্রথম নয়। রাজ্য পুলিশের ডিজি-দের সম্মেলনে এ নিয়ে বহু বার আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এনডিএ-র আমলে লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে, সেই সময়ও বিতর্ক হয়েছিল। তখনও শীলা মুখ্যমন্ত্রীর পদে। কেন্দ্রে বিজেপি, রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতা থাকায় সে সময় এটা আবার কংগ্রেস বনাম বিজেপি-র রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল। এ বারের ঘটনায় ফের সেই পুরনো বিতর্কই মাথাচাড়া দিয়েছে। শীলা সরকারের প্রশ্ন, কেন্দ্রই যদি পুলিশ নিজের হাতে রেখে দেয়, তবে দিল্লিকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া কেন? তাদের মতে, দিল্লিতে নির্বাচিত সরকার রয়েছে, তার হাতেই পুলিশের ক্ষমতা থাকা উচিত। আডবাণী অবশ্য এখনও এর বিপক্ষে। এ বিষয়ে তিনি আজ বলেন, “আমি দিল্লি পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে রাখার পক্ষে। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই উদাহরণ রয়েছে। ওয়াশিংটনেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন। এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও তাই মনে করে। নর্থ ব্লকের কর্তারা বলছেন, লটিয়েন সাহেবের পরিকল্পনায় তৈরি নয়াদিল্লি জুড়ে রয়েছে সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, সংসদ ভবন। রাজধানী বলেই দিল্লি সব সময় সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায় থাকে। একই কারণে সংসদ ভবনে হামলার সাক্ষী হয়েছে এ শহর। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার থেকে এই বিষয়টি আলাদা। কাজেই রাজধানী শহর বা ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন’-এর ভার কেন্দ্রের হাতেই থাকা উচিত।
কিন্তু শীলা দীক্ষিত এখন আর এই সব যুক্তি মানতে চাইছেন না। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর বক্তব্য, মনমোহন সরকারকে আড়াল করতে কংগ্রেসেরই একটা অংশ মুখ্যমন্ত্রীর ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছিল। দায়িত্বই যদি হাতে না থাকে, তবে কেন নেবেন ব্যর্থতার দায়? তিনিও তাই কেন্দ্রের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করছেন। এ নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বর সঙ্গেও এখন শীলা দীক্ষিতের সংঘাত চরমে। |
|
|
|
|
|