|
|
|
|
শান্ত, তবু উদ্বেগেই রাখল দিল্লি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দু’দিন ধুন্ধুমারের পরে সোমবার দিল্লি আপাত শান্ত। আর সেই পরিবেশ কাজে লাগাতে প্রশাসনের তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হল আজ। যার মূল লক্ষ্য মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। একই সঙ্গে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তিন মেয়ের বাবা মনমোহন সিংহ বিক্ষোভকারীদের হিংসা বর্জন করতে বললেন।
একই সঙ্গে দিল্লি দেখল, কী ভাবে ইন্ডিয়া গেট ও সংলগ্ন অঞ্চলকে দুর্গে পরিণত করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয় এলাকার ন’টি মেট্রো স্টেশন। ব্যারিকেডে এমন ভাবে ঘেরা হয় এলাকাটিকে যে বিজয়চক, ইন্ডিয়া গেটে ঢোকার ছাড়পত্র পেল না সংবাদমাধ্যমও। ফলে বিক্ষোভ আটকে গেল যন্তরমন্তরে। আর এর সঙ্গে পুতিনের সফর ঘিরে কড়াকড়িতে নাকাল হতে হল সাধারণ মানুষকে।
এই আপাত শান্তিটাই কি এ দিন দিল্লির প্রকৃত ছবি? সরকার কিন্তু বুঝতে পারছে, বজ্র আঁটুনিতে বাইরের উষ্মা কমলেও ভিতরে ভিতরে এখনও ক্ষোভ মেটেনি দিল্লির। তা স্বীকার করে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বলেন, “একে সোমবার, তার ওপর কাল থেকে বড়দিনের উৎসব শুরু হচ্ছে। তাই পথে নেমে বিক্ষোভ হয়তো কমেছে। তা ছাড়া বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশও কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু অসন্তোষ রাতারাতি প্রশমিত হয়েছে, এমন আশাও করছে না সরকার।” এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাওবাদীদের কথা তুলে সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে।
|
 |
ওই তরুণীর সাহস এবং লড়াকু মনোভাবকে কুর্নিশ জানাই।
আসুন বড়দিনে সবাই মিলে ওর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় |
|
|
দিল্লির ঘটনায় আমার সবাই খুবই দুঃখিত। কিন্তু ওরা শহরের শান্তি
বজায় রেখেই প্রতিবাদ জানাতে পারত। তাতে আরও কাজ হত।
গুরশরণ কৌর
|
 |
|
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এই অবস্থায় দু’টি কৌশল নিতে চাইছে কেন্দ্র। প্রথমত, মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ করা। যাতে অন্তত এই বার্তা যায় যে, সরকার অন্তত কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে বারংবার বার্তা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা, শান্তির পরিবেশ যেন কায়েম থাকে। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা সে দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ।
শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, পরিস্থিতি শান্ত করতে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আজ প্রথম মুখ খোলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। হাসপাতালে ভর্তি তরুণীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। মনমোহন-পত্নী গুরশরণ কৌরও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করে শান্তি ফেরানোর আবেদন জানান। জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধর্ষণের ঘটনার মতো ঘৃণ্য অপরাধ দেখে রাগ হওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। আমিও তিন মেয়ের বাবা। তাই আমিও ক্ষুব্ধ। কিন্তু হিংসা চালিয়ে গেলে কাজের কাজ কিছু হবে না। সে জন্যই শান্তি ফেরানোর আবেদন জানাচ্ছি।” মহিলা ও শিশুদের ওপর অত্যাচার ও অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি বিধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মনমোহন। সেই সঙ্গে বলেন, এই ব্যাপারে কতটা এগোচ্ছে সরকার, সেটা সময়ে সময়ে মানুষকে জানানো হবে।
এর পরেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না সরকার তথা কংগ্রেসের নেতারা। তাঁদের শঙ্কা অনেক। প্রথম উদ্বেগ অবশ্যই ভেহাসপাতালে ভর্তি তরুণীর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে। দ্বিতীয় উদ্বেগ, পুঞ্জীভূত জন-অসন্তোষে ইন্ধন জোগাতে বিরোধীরা নেমে পড়েছেন। তিন, রাজনীতি-নিরপেক্ষ এ ধরনের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ যদি ফের ঘটে, তা হলে কী ভাবে মোকাবিলা করবে সরকার?
বিক্ষোভ সামলাতে সরকারের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠছিল। আজ শুধু রাজনীতির কারবারিরাই নন, কংগ্রেসের নেতারাও প্রশ্ন তুলেছেন, যে ভাবে পুলিশি ব্যারিকেড দিয়ে এ দিন ইন্ডিয়া গেট চত্বর দুর্গে পরিণত করা হল, তা আগে করা হয়নি? তা করলে হয়তো পুলিশকে এ ভাবে লাঠি চালাতে হত না। সরকার যে পদক্ষেপগুলি এখন ঘোষণা করছে, তা সংসদ চলাকালীনই ঘোষণা করা উচিত ছিল। অভিযোগ উঠছে গোয়েন্দা-ব্যর্থতারও। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, যন্তরমন্তরে দশটি লোক বিক্ষোভে বসলেও আগে থেকে তার খবর রাখার কথা গোয়েন্দা বাহিনীর। অথচ ইন্ডিয়া গেট এত জনের জমায়েত সরকার আগাম টের পেল না!
কংগ্রেসের একাংশ দুষছেন দলের বৃদ্ধতন্ত্রকে। তাঁদের মতে, জন-অসন্তোষের মোকাবিলায় পুরনো পথই আঁকড়ে রয়েছেন বয়স্ক নেতারা। তাই প্রথমে চলছে লাঠি, জলকামান। পরে বিবৃতি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুবসমাজের আন্দোলন নতুন চেহারা নিচ্ছে। যা বুঝে উঠতেই পারছেন না বর্ষীয়ানরা। রাজনীতি-নিরপেক্ষ এ ধরনের বিক্ষোভ সামলাতে নতুন কৌশল নেওয়া হোক, এই দাবিও উঠেছে দলের মধ্যে থেকে।
কংগ্রেস ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের কোনও শীর্ষ নেতা প্রথম দিনই কেন গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বললেন না। এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, গত বছর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাগাতার ধর্নার সময় রামদেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সরকারের পাঁচ মন্ত্রী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরির ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও সেই আন্দোলন থামানো যায়নি। তাই এ ধরনের আন্দোলনের মনস্তত্ত্ব আঁচ করতে গিয়ে সরকার কিছুটা বিভ্রান্তই হয়ে পড়ছে। |
|
|
 |
|
|