|
|
|
|
সক্রিয় বাম-বিজেপি, বসে নেই কংগ্রেসও |
নেতাহীন আন্দোলন দখল করতে মরিয়া নেতারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যন্তরমন্তর থেকে ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিল থেকে রেসকোর্স রোড গত ক’দিনের চেনা ছবিটা আজ যেন উধাও। ইতস্তত ভিড়, জটলা। পুলিশের গাড়ি, কড়া নিরাপত্তা। এটুকুই। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে অনেকটাই স্বাভাবিক রাজধানী।
ক্ষোভের আগুন কিন্তু নেভেনি। ধিকিধিকি জ্বলছে। যখন-তখন তা বড় আকার নিতে পারে। আর সেই আশঙ্কাতেই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে গোটা দিল্লি। আপাত শান্ত শহরে এটাকেই কাজে লাগিয়ে নেতাহীন এই ধর্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের জমি দখল করতে সক্রিয় বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে বৃন্দা কারাট। এমনকী কংগ্রেসও! কেউ সরাসরি, কেউ ছাত্র-যুব সংগঠনের মাধ্যমে। বিরোধীদের মূল লক্ষ্য দু’টি। এক, গত ক’দিনের গণবিক্ষোভের গোটা প্রবাহটিই যাতে কংগ্রেস তথা সরকারের বিরুদ্ধে বয়। এবং দুই, জনতা যেন বোঝে, বিরোধীরা আসলে তাদের পাশেই। পাল্টা সক্রিয় কংগ্রেসও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির অভিযোগ, “দিল্লিতে যে ভাবে গোলমাল করা হয়েছে, তার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেই সন্দেহ হচ্ছে।”
|
|
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক বিজেপি নেতাদের। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে। ছবি: পিটিআই |
সোমবার সন্ধ্যায় আধ ঘণ্টার ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন বাম ও বিজেপি নেতারা। অভিযোগ এক। সরকার নিষ্ক্রিয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আগেই কথা বলেছেন সনিয়া গাঁধী। সঙ্গে রাহুলও। আজ প্রকাশ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মহিলাদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার ব্যাপারে এখনও সক্রিয় নয় সরকার। বিক্ষুব্ধ ভিড় দ্রুত একটি কড়া আইন চাইছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আডবাণী ও সুষমা স্বরাজ। কঠোর আইন রূপায়ণের জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার যে প্রস্তাব বিজেপি দিয়েছে, তা আজ খারিজ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে।
আর এতেই আরও সুযোগ পেয়েছে বিরোধীরা। সুষমা বলেন, “সরকার সংসদে জবাব এড়িয়ে যায়। এখন অধিবেশনও ডাকতে চাইছে না। অথচ আন্দোলন হলে সরকারের জবাব আসে লাঠি আর কাঁদানে গ্যাসের মাধ্যমে! এই সরকার সংবেদনশীলতা হারিয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে দাবি জানিয়েছি, যাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে সরকার কঠোর আইন আনে।” কঠোর আইনের অর্থ কী? সুষমার জবাব, “ধর্ষণ ও হত্যার সাজা ফাঁসি।” সুষমার দাবি নিয়ে তাঁর দলেই দ্বিমত রয়েছে। তবু বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, রাজনীতির পরোয়া না করা এই স্বতঃস্ফূর্ত জনতার ঢলকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। অণ্ণা হজারের আন্দোলন যখন রাজধানীর বুকে উন্মাদনা তৈরি করেছিল, তখন কংগ্রেস-বিরোধী আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে ফেরাতে এ ভাবেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল বিজেপি। বৃন্দা কারাটরাও চাইছেন, ধর্ষণ নিয়ে দ্রুত আইন পাশ হোক। সংসদের বিশেষ অধিবেশনেও আপত্তি নেই তাঁদের। বৃন্দার বক্তব্য, মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ আরও সক্রিয় হোক, ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার হোক।
এমন নয়, গত দু’দিনের ভিড়ে ছিলেন না রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাম-বিজেপির ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই-ও ব্যানার নিয়েই যোগ দেয় প্রতিবাদ মিছিলে। সব দলেরই লক্ষ্য এক। এই জনস্রোত থেকে রাজনৈতিক দলগুলি যাতে কোনও ভাবেই বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে।
কংগ্রেসের যুব নেত্রী মধুমিতা চক্রবর্তীর কথায়, “ফাঁসি দিয়ে অপরাধ দমন করা যাবে না। প্রয়োজন পুলিশের নজরদারি বাড়ানো, জনচেতনা বৃদ্ধি। এখনও তো আইনে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। সেটি কম না বেশি, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তা দিয়ে কি অপরাধ বন্ধ হচ্ছে?” গণধর্ষণের ঘটনার পর বিপুল জনআক্রোশ তৈরি হওয়ার আগেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিল সিপিএম ও সিপিআইএম (এল)-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই ও আইসা। পুলিশের হাতে তাদের সদস্যরা মারও খেয়েছেন। দলীয় পতাকা নিয়েই মাঠে নেমেছেন তাঁরা।
প্রশ্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারানোর ভয়েই কি ভিড়ের মনস্তত্ত্বকে পুঁজি করতে চাইছে? এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই আন্দোলনের ফলে রাজনৈতিক দল বা তাদের গণসংগঠনগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। এই আন্দোলন সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে।” আইসা-র সাধারণ সম্পাদক রবি রাইয়ের মতে, “কার্ড বা ব্যানারটা এখানে বড় কথা নয়। যে কারণে লড়াইটা হচ্ছে, সেটাই আসল। সরকার সংবেদনশীল নয়। আমাদের লড়াই তার বিরুদ্ধেই।” |
|
|
|
|
|