ব্রাহ্মণী রেলসেতুর জট চলছেই, ফাটল ধরা স্তম্ভের উপরেই চলছে ট্রেন
মি-জটে আটকে থাকা ব্রাহ্মণী নদীর উপরে দ্বিতীয় রেলসেতুটির কাজ শুরু করা গেল না সোমবারও। রেলের কাজে বাধাদানকারী চাষিরা নিজেদের অবস্থানে অনড়। যথারীতি দায় এড়াচ্ছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। অল্পসংখ্যক চাষির বাধা সরিয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে কেন জনস্বার্থে এত গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতুর কাজ শুরু করানোর ব্যবস্থা করছে না প্রশাসন, বিভিন্ন মহলে সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় এ দিন বলেন, “বিডিও বাইরে থাকায় চাষিদের সঙ্গেও কথা বলা যাচ্ছে না। খুব শীঘ্রই চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।”
এই অবস্থায় আর কত দিন ঝুঁকি নিয়ে নলহাটির জগধারী গ্রাম সংলগ্ন ব্রাহ্মণী নদীর পুরনো রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে? এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি রেল বা প্রশাসন, কোনও তরফ থেকেই। সোমবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুরনো সেতুর উপর দিয়ে ছুটে চলছে শতাব্দী এক্সপ্রেস। গতি ছিল ২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। সেতু পেরিয়ে ট্রেন ছুটল প্রায় ১২০ কিমি গতিতে। কর্মরত ‘ইন্সপ্সেক্টর অব ওয়ার্কস’ মুকেশ কুমার দেখালেন, কী ভাবে সেতুটির ৯টি স্তম্ভের জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে। নতুন সেতু তৈরি না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
—ফাইল চিত্র।
পূর্ব রেলের এক আধিকারিকের ক্ষোভ, “মাত্র কয়েক জন চাষি মাটি ফেলায় আমাদের বাধা দিয়েছেন। প্রশাসন তৎপর হলে সেই বাধা সরানো সরিয়ে কাজ করা সম্ভব হত। কিন্তু তার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও অসমের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সংযোগকারী বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ কবে শেষ হবে, আমরা তা জানি না। ঝুঁকি নিয়েও তাই আপাতত পুরনো সেতুর উপর দিয়েই ট্রেন চলবে।”
রেলের দাবি, রাজ্য সরকার তাদের হাতে জমি তুলে দিয়েছে। ফলে আইনগত ভাবে কাজ শুরু করতে রেলের কোনও অসুবিধা নেই। হাওড়া ডিভিশনের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়র (নির্মাণ) রামেশ্বর প্রসাদ বলেন, “২০১১ সালে ১০ মার্চ রেল রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়েছে।” জেলা জমি অধিগ্রহণ বিভাগের স্পেশাল আধিকারিক রঞ্জন চক্রবর্তীও বলেছেন, “বছর খানেক আগে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। রেলকে রাজ্য সরকার সেই জমি হস্তান্তরও করে দিয়েছে। এখন রেল কী ভাবে কাজ করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।” কিন্তু, বাধাদানকারী চাষিরা বলছেন, জমি তাঁদের নামেই আছে। কোন পক্ষের দাবি যে ঠিক, তা বোঝার উপায় নেই। ফলে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। মহকুমাশাসকের কথায়, “যে বিভাগ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করব।”
রামেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৬২ জন চাষির মধ্যে ৩৪ জন ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। ওই ৩৪ জনের মধ্যে ১৮ জন পদ্ধতি মেনে রেলে চাকরির জন্য আবেদনপত্রও জমা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এর পরেও কাজ করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য সর্বস্তরে জানানো হবে।” তবে, জমি-জটের আশু কোনও সুরাহা হবে না, সম্ভবত এ কথা বুঝতে পেরে রেল-কর্তৃপক্ষের আর্জি, জনস্বার্থে বিকল্প সেতু নির্মাণে এলাকার বাসিন্দাদেরই এগিয়ে আসা উচিত।
কিন্তু এই আবেদনের বিষয়ে জগধারী গ্রামের চাষি রণজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার পাল, কৈলাস কেশরী, কামারুজ্জামান, আব্দুল আলিমদের অন্য প্রতিক্রিয়া। তাঁদের অভিযোগ, “রেল জনস্বার্থের কথা বলে আমাদের ধোঁকা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের বৈঠকে এই জট কাটাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবি জানিয়েছি। তাই এখনও পর্যন্ত চেক নিইনি।” যে চাষিরা এখনও ক্ষতিপূরণের চেক নেননি, তাঁদের কয়েক জনের আরও অভিযোগ, “মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নলহাটির তৃণমূল নেতা বিপ্লব ওঝার নেতৃত্বে জোর করে আমাদের জমিতে রেলকে কাজ করতে বলা হয়েছে।”
নলহাটির প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লববাবু অবশ্য বলেন, “এই অভিযোগ মিথ্যা। জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। অনেকে ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। বাকিরা বলেছিলেন, আদালতে মামলা করেছি।” তাঁর পাল্টা দাবি, “চাষিরা আন্দোলন করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার পরেই কাজ চলছিল। নতুন করে কেন বাধার সৃষ্টি হল, দেখছি।” অন্য রাজনৈতিক দলগুলি এখনও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপে নারাজ। খোঁজ না নিয়ে মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্ব।
এই জটিলতায় সমস্যায় পড়েছেন ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নেওয়া চাষিরা। তাঁদের অন্যতম প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম দত্তদের কথায়, “সরকার জমি চেয়েছিল, তাই দিয়েছিলাম। পদ্ধতি মেনে চাকরির জন্যও আবেদন করেছি। কিন্তু বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে আমাদের আশাভঙ্গ হচ্ছে। আদৌ সেতু তৈরি হবে কি না বা চাকরি মিলবে কি না, আমরা জানি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.